ব্যবসায়ীদের দখলে ফুটওভার ব্রিজ
রাজধানীর ব্যস্ততম কমলাপুরে পথচারীদের পারাপারের সুবিধার্থে বাসাবো-মুগদা অঞ্চল থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ। তবে এই ফুটওভার ব্রিজটির যে অবস্থা, তাতে পথচারী পারাপারে সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করলেও দীর্ঘদিন ধরেই এটি ব্যবসায়ীদের দখলে। এর কোনো স্থানে মাছ ব্যবসায়ী, কিছু স্থানে সবজি ব্যবসায়ীরা বসেন, বাদ যাননি পোশাক ও জুতার ব্যবসায়ীরাও। কেউ জমা, টি-শার্ট, আবার কেউ পায়ের জুতা বিক্রি করছেন।
এভাবে হরেক রকমের ব্যবসায়ীর দখলে ফুটওভার ব্রিজটির দুই-তৃতীয় স্থান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে এ ফুটওভার ব্রিজটি কার সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ পথচারী? নাকি এসব ব্যবসায়ীর জন্য?
পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসাবো-মুগদা অঞ্চল থেকে কমলাপুর, মতিরঝিল, আরামবাগ অঞ্চলে হেঁটে যাতায়াতকারীদের সুবিধার করা চিন্তা করে ওভারব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এই ব্যবসায়ীরা ওভারব্রিজটি ব্যবহারকারীদের ভোগান্তিতে ফেলেছেন।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, মুগদার দিক থেকে কমলাপুর রেল স্টেশনের দিকের শেষপ্রান্ত পর্যন্ত একের পর এক ব্যবসায়ী পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ফলে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারকারী ট্রেনের যাত্রী, অফিসকর্মী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ সকলকেই চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
পথচারীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ওভারব্রিজটি ব্যবসায়ীদের দখলে। মাঝে কয়েকবার এই ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পরেই যা তাই হয়ে যায়। বেশিরভাগ স্থান ব্যবসায়ীদের দখলে থাকায় ওভারব্রিজ ব্যবহারকারীদের প্রায়ই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। একজনের সঙ্গে অন্যজনের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলাচল করা ছাড়া উপায় থাকে না। এমনকি প্রায় সন্ধ্যার পর পকেটমারের খপ্পরে পড়তে হয়।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে অফিস শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাসায় ফিরছিলাম। ফুটওভার ব্রিজের ওপর উঠেই দেখি প্রচণ্ড ভিড়। একজনের সঙ্গে অন্যজনের গা ঘেঁষে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। এভাবে কষ্ট করে ওভারব্রিজ পার হয়ে নিচে মেনে একটি রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরি। কিন্তু রিকশা ভাড়া দেয়ার সময় দেখি, পকেটে মানিব্যাগ নেই।
তিনি বলেন, পথচারীদের পারাপারের সুবিধার জন্য এই ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পথচারীদের থেকে ব্যবসায়ীরাই বেশি ব্যবহার করেন। এটা যেন হরেকরকমের ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে নির্মাণ করা হয়েছে।
মিতা নামের এক স্কুল শিক্ষার্থী বলছিল, এই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে আমরা প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাই। আবার স্কুল শেষে বাসায় ফিরি। সকালে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে ভালোভাবে যেতে পারলেও স্কুল ছুটির পর ফেরার পথে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ঠেলাঠেলি করে হাঁটতে হয়। আবার অনেকে বিব্রতকর ইঙ্গিতও করে।
‘ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে পথচারীদের পারাপারের জন্য। এখানে কেন হাট-বাজার বসবে? সংশ্লিষ্টদের উচিত অবৈধভাবে যারা এই ফুটওভার ব্রিজ দখল করে ব্যবসা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে নিরাপদে পথচারীদের চলাচলের ব্যবস্থা করা হোক’,- বলছিল মিতা।
পথচারীদের নানা অভিযোগ থাকলেও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যবসা করে যাচ্ছেন ব্যাবসায়ীরা। ফুটওভার ব্রিজটিতে পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসা শাহিন নামের একজন বললেন, আমরা এখানে অনেকদিন ধরেই ব্যবসা করি। কারও কোনো অভিযোগ নেই। বেলা ১১টার পর থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের পাওয়া যাবে।
সবজি বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, সকাল থেকেই এখানে সব ধরনের সবজি, ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায়। তবে বাজার জমে বিকেলের পর। বিশেষ করে অফিস ছুটির পর অনেকেই এখান থেকে বাজার করে নিয়ে যান। অন্য বাজারের তুলনায় আমরা তুলনামূলক দাম কম রাখি।
এখানে ব্যবসা করতে অসুবিধা হয় না? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কেন সমস্যা হবে? বরং, এখানে আমার ব্যবসা করার কারণে অনেকের সুবিধা হয়। বাজার বসার কারণে ফুটওভার ব্রিজ সবসময় জমজমাট থাকে। ফলে পথচারীদের ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার ভয় থাকে না। আবার যারা ব্যস্ত, তারা বাজারে না গিয়ে অফিসে শেষে বাসায় ফেরার পথে সহজেই আমাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
এ ব্যাপারে কমলাপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের (জিআরপি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ফুটওভার ব্রিজের ওপর ব্যবসায়ীদের বসা অবৈধ। আমরা মনে করি, এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তবে এ উচ্ছেদ অভিযান চালানোর দায়িত্ব রেলওয়ে সম্পদ বিভাগের। তারা উচ্ছেদ অভিযান চালানোর উদ্যোগ নিলে আমরা তাদের সহযোগিত করবো।
এমএএস/জেডএ/পিআর