কেন এই ফুটওভার ব্রিজ?
রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিংক রোড সংলগ্ন গুদারাঘাটে রয়েছে একটি ফুটওভার ব্রিজ। রোববার এর সামনে বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা। কিন্তু এই এক ঘণ্টা সময়ের মধ্যে কোনো পথচারীকে দেখা গেল না ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করতে। মাত্র তিনজন পথচারী এই এক ঘণ্টায় এ রাস্তা পার হলেন। তারা ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করেননি।
তাদের মধ্যে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী রফিকুল ইসলাম। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সড়কটি তেমন একটা ব্যস্ত নয়। তাই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে সরাসরি সড়ক পার হলাম। এ ছাড়া উঁচু সিঁড়ি, অপরিচ্ছন্ন ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে সব মানুষের অনীহা থাকে। কষ্ট করে মানুষ অনেক সময় ব্যবহার করতে চায় না। যদিও এটা আমাদের ভুল কাজ। তবে, এর চেয়েও ভুল কাজ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কারণ, এখানে ফুটওভার ব্রিজের দরকার নেই, তবুও নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, অথচ বাড্ডা লিংক রোড মোড় দিয়ে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হচ্ছেন। কিন্তু সেখানে ফুটওভার ব্রিজ নেই। বাধ্য হয়ে মানুষ সড়কের গাড়িগুলোর সামনে দিয়েই পার হন। লিংক রোড থেকে অল্প কিছু দূরুত্বে গুদারাঘাটের এখানে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে, এটা যদি এখানে না করে লিংক রোডে মোড়ে করা হত, তাহলে মানুষ উপকৃত হত।
এই ফুটওভার ব্রিজ সংলগ্ন ফলের দোকানি হাসিবুর রহমান বলেন, গুদারাঘাটের ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে সারাদিনেও কোনো মানুষ পার হতে দেখা যায় না। সবাই সরাসরি রাস্তা দিয়ে পার হয়ে যান। যদিও এখানে তেমন একটা দরকার নেই ফুটওভার ব্রিজের। কিন্তু ওইদিকে গুলশান-১, আবার বাড্ডা লিংক রোড মোড়ে যদি ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হত, তাহলে পথচারীদের উপকার হত। স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনের ঝুঁকি ছাড়াই তারা পার হতে পারতেন। কিন্তু তা না করে যেখানে দরকার নেই সেখানে ফুটওভার ব্রিজটি স্থাপন করা হয়েছে।
দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে ৮৭টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ৩২টি ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় ৪৯টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। রোড অ্যান্ড হাইওয়ের ৫টি এবং রাজউকের একটি ফুট ওভারব্রিজ রয়েছে। এ ছাড়া নির্মাণাধীন এবং নির্মাণের পরিকল্পনায় আছে আরও কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ।
এগুলোর মধ্যে যেসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যস্ততম জায়গা থেকে দূরত্বে, নোংরা পরিবেশ, হকারদের দৌরাত্ম্য, ছিন্নমূল মানুষের বসবাস, সেই ফুটওভার ব্রিজগুলো অনেকেই ব্যবহার করেন না।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, ফুটওভার ব্রিজগুলো আমরা দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর পাশাপাশি পথচারীদের তা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। এ ছাড়া যে ফুটওভার ব্রিজগুলোর ব্যবহার তেমন একটা হয় না, এগুলো উঠিয়ে যেসব
স্থানে মানুষের চলাচল বা পারাপার বেশি, সেখানে স্থানান্তর বা নির্মাণ করা হবে।
এদিকে নগর পরিকল্পনাবিদের মতে, রাজধানীর কোন স্থানে মানুষ বেশি চলাচল করে, কোন স্থান দিয়ে মানুষকে বেশি পারাপার হতে হয়, এসব বিষয় বিবেচনা করে বা জরিপের মাধ্যেমে সিটি কর্পোরেশনের উচিত পরিকল্পনামাপিক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ বা স্থানান্তর করা। তবেই পথচারীদের উপকারের আসবে এসব ফুটওভার ব্রিজ।
এএস/জেডএ/জেআইএম