ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

যেখানে দরকার সেখানে নেই

আদনান রহমান | প্রকাশিত: ১০:৫৫ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালকের সঙ্গে পথচারীদের দায়টাও কম না। মুঠোফোনে কথা বলার সময় রাস্তা পার হওয়া, ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস কিংবা জেব্রা ক্রসিং না ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। তবে ঢাকার রাস্তা কতটুকু পথচারীবান্ধব? ঢাকার অনেক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে এখনো নির্মাণ করা হয়নি ফুটওভার ব্রিজ। অনেক ব্যস্ততম মোড় রয়েছে, সেখান দিয়েই সবচেয়ে বেশি মানুষ রাস্তা পার হন, সেসব স্থানে ফুটওভার ব্রিজ নেই। আর এমন অনেক স্থানেই ফুটওভার ব্রিজ নিমার্ণ করে রাখা হয়েছে, যেসব স্থান ব্যস্ততম নয়। ফলে এসব ফুটওভার ব্রিজ খুব কম মানুষই ব্যবহার করেন।

দেখা গেছে, মগবাজার, মৌচাক-মালিবাগ মোড়, পুরানা পল্টন মোড়, বাড্ডা লিংক রোড মোড়, জিরো পয়েন্ট, রামপুরা ব্রিজ-বনশ্রী-আফতাবনগরসহ অনেক এলাকার রাস্তার মোড়গুলোতে কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। এমনকি জেব্রাক্রসিংও নেই।

অথচ সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০১৫ সালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, কাওরানবাজার মোড়, বিজয় সরণি, তোপখানা, পুরানা পল্টন মোড়, কুড়িলসহ রাজধানীর অর্ধশতাধিক স্পটকে ‘দুর্ঘটনার জন্য বিপজ্জনক’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। সেসময় এসব স্পটে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের পরামর্শও দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে তিন বছরেও এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ শুরু হয়নি।

রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব ব্যস্ততম মোড়গুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই হাত উঁচু করে বাস ট্রাকের সামনে দিয়ে পার হচ্ছেন।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, রাজধানীর কোন স্থানে মানুষ বেশি চলাচল করে, কোন স্থান দিয়ে মানুষকে বেশি পারাপার হতে হয়, এসব বিষয় বিবেচনা করে বা জরিপের মাধ্যেমে সিটি কর্পোরেশনের উচিত পরিকল্পনামাপিক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ বা স্থানান্তর করা। তবেই পথচারীদের উপকারে আসবে এসব ফুটওভার ব্রিজ।

ক্ষুব্ধ পথচারীরা বলছেন, রাজধানীর ব্যস্ততম মোড়গুলোতে ফুটওভার ব্রিজ থাকা দরকার। কিন্তু এসব মোড়ে ফুটওভার বিজ্র না করে করা হচ্ছে মোড় থেকে অনেকটা দূরে। অপরিকল্পিতভাবে এটি করার কারণে মানুষ ওইসব ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করছেন না। সঠিক পরিল্পনা নিয়ে ফুটওভার ব্রিজ করা হলে মানুষ ঠিকই ব্যবহার করতো। এমন অনেক স্থানে ফুটওভার ব্রিজ করে রাখা হয়েছে, সেখান দিয়ে খুব বেশি মানুষ রাস্তা পারাপার হন না, আর যারা পার হন, তারাও ফুটওভার ব্রিজগুলো ব্যবহার করেন না।

dhaka

পথচারী জামিলুর রেজা বলছিলেন, দেখুন এই কারওয়ান বাজার মোড়ে কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। যদিও মোড় থেকে ৫০ গজ দূরে একটি আন্ডারপাস (প্রজাপতি গুহা) রয়েছে। কেন? ওই আন্ডারপাসটা এই মোড়ে করলেই হতো। তাহলে এটি আরও বেশি মানুষ ব্যবহার করতো। আর এই ঝুঁকিপূর্ণ মোড় দিয়ে কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতো না।

দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে মগবাজারের বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান টিটন। তিনি বলেন, মগবাজার, মৌচাক ও মালিবাগ সড়কে ফ্লাইওভারের কারণে আগের চেয়ে অনেক বেশি গাড়ি চলাচল করে। গাড়ির গতিও আগের থেকে বেশি থাকে। অথচ এখানে কোনো ফুটওভার ব্রিজ করা হয়নি। আগে একটি ওভারব্রিজ থাকলেও ফ্লাইওভার নির্মাণের কারণে সেটি ভেঙে ফেলা হয়, এরপর আর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফ্লাইওভার থেকে গাড়ি নামার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি বাসের ধাক্কায় এ স্থানে একজন নিহত হন। অবিলম্বে এই সড়কে একটি ফুটওভার ব্রিজ তৈরির দাবি জানাচ্ছি।

বাড্ডা লিংক রোড এলাকার একজন পথচারী ও এই এলাকার আল-সামী হাসপাতালের কর্মকর্তা জাহিদ হাসান ইয়ামিন বলেন, এই সড়কে প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিকশা, দোতলা বাস, লেগুনাসহ প্রায় সব যানবাহন চলে। শুক্রবারেও এই সড়কে যানজট ও মানুষের জট থাকে। অথচ এই লিংক রোড মোড়ে কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। কিন্তু দেখেন, এই মোড় থেকে তিন দিকে আধা কিলোমিটার দূরে দূরে তিনটি ফুটওভার ব্রিজ করে রাখা হয়েছে, যার দুটি পথচারীরা খুব বেশি ব্যবহারই করছেন না। যদি এই মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ করা হতো তাহলে কিন্তু এই দুটার দরকার ছিল না, আমি মনে করি এই দুইটা (কম ব্যবহৃত) ফুটওভার ব্রিজ সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে করা হয়নি।

এই পথচারী যা বলছিলেন, তার কথার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেল, বাড্ডা লিংক রোড মোড় থেকে আধা কিলোমিটারের চেয়েও কম দূরত্বে গুদারাঘাটে একটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। এই স্থানটি অতটা ব্যস্ততম নয়। এই স্থান দিয়ে খুব বেশি মানুষ রাস্তা পার হন না। ফলে এই ফুটওভার ব্রিজও ব্যবহারের দরকার পড়ছে না মানুষদের। অপরদিকে মধ্যবাড্ডায় আরেকটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। এটিও খুব বেশি ব্যবহার করছেন না পথচারীরা।

রামপুরা ব্রিজ-আফতাবনগর এলাকার ব্যস্ততম সড়কে ফুটওভার ব্রিজ না থাকার বিষয়ে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনলজি বিভাগের শিক্ষার্থী পার্থ প্রতিম বলেন, মধ্যবাড্ডার ইউলুপ চালু করার পর সবকয়টি সড়কের ডিভাইডার বন্ধ করা হয়েছে। ফলে এই রুটের যানবাহনগুলো কোথাও থামে না। সরাসরি রামপুরা থেকে বাড্ডার দিকে চলে যায়। এতে আমাদের শিক্ষার্থীদের রাস্তা পার হতে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এই সড়কে সার্জেন্ট দাঁড়িয়ে থাকলে অনেকসময় বাসগুলো না থেমে গতি বাড়িয়ে চলে যায়। এতে ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ওপারে যেতে হয়।

এ ছাড়া খিলক্ষেত-কুড়িলে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) পাশের সড়কে দীর্ঘদিন ধরে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা।

dhaka

এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায়ের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, গুলশান, বাড্ডা, বনানী, এয়ারপোর্টে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। তারা পথচারীদের জেব্রাক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার হতে সহায়তা করছেন। আমি মনে করি, বনানীর এআইইউবি (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ) এবং জোয়ার সাহারায় ফুটওভার ব্রিজ দরকার। শুনেছি, এসব স্থানে শিগগিরই ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু হবে। এ ছাড়া হাতিরঝিলের রামপুরার দিকে আফতাবনগরের সামনের সড়কেও একটি ওভারব্রিজ করা দরকার।

রাজধানীর কাকলি মোড়ের ফুটওভার ব্রিজটি সিগন্যালের ওপারে স্থাপন করলে পথচারীদের আরও উপকার হতো বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কাকলী মোড়ের ফুটওভার ব্রিজটি মহাখালী সড়কের দিকে হওয়ায় বনানী সড়কের পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বর্তমানে পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার এবং তা পথচারীবান্ধব করার ওপর জোর দিয়েছি। যেসব সড়কে আরও ফুটওভার ব্রিজ দরকার, সেগুলো অচিরেই নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া কোনো ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না হলে, সেগুলো পাবলিক প্লেসে স্থানান্তর করা হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সচিব মো. শাহাবুদ্দিন খান জাগো নিউজকে বলেন, ফুটওভার ব্রিজ নিয়ে আমরা কাজ করছি। যেসব জায়গায় ফুটওভার ব্রিজ প্রয়োজন, কিন্তু এখনো বসানো হয়নি, সেসব জায়গায় নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, নিরাপদ সড়কের দাবিতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বাংলাদেশের সকল নাগরিকের বিবেককে জাগ্রহ করেছে। এ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমে ১০ দিনের ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হয়। এখন চলছে ট্রাফিক সচেতনতা মাস। পুলিশের সঙ্গে দুই শিফটে রোভার্স স্কাউট, গার্লস গাইড ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ৬৪৪ জন সদস্য পথচারীদের সচেতন করার কাজ করছেন। তবে কোনোটিতেই কাজ হচ্ছে না। কমছে না সড়ক দুর্ঘটনা, কমছে না প্রাণহানি।

এআর/জেডএ/জেআইএম

আরও পড়ুন