ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

প্রাথমিকের বই ছাপাতে অতিরিক্ত ব্যয় ১১১ কোটি টাকা

মুরাদ হুসাইন | প্রকাশিত: ০৪:৫৮ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

কাগজের দাম বাড়ায় এবার জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ১১১ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। প্রাথমিক স্কুলপর্যায়ে বিনামূল্যের বই ছাপাতে সরকারের এই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এনসিটিবি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের বইয়ের প্রতি ফর্মা এক টাকা ৯৫ পয়সায় ছাপান মুদ্রণকারীরা। এবার সেখানে খরচ পড়ছে দুই টাকা ৯২ পয়সা। গত বছর প্রতি বইয়ে খরচ পড়েছিল গড়ে ২৬ টাকা। এবার পড়ছে ৩৭ টাকা। সেই হিসাবে প্রাথমিক পর্যায়ের ১১ কোটি বইয়ে এবার বাড়তি খরচ হচ্ছে ১১১ কোটি টাকা। গত বছর এই স্তরের বই ছাপাতে মোট ২৪৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল। এবার হচ্ছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রাথমিক স্কুলপর্যায়ের বই ছাপাতে আগের চেয়ে বেশি দামে দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। সেই দামেও আশানুরূপ দরপত্র জমা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে গত ১৩ আগস্ট পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে সংস্থাটি। পুনঃদরপত্র করে শুধু প্রাথমিকের বই ছাপায় সরকারের অতিরিক্ত গচ্চা যাচ্ছে ১১১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান করায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের প্রতিষ্ঠান কৃষ্ণা প্রিন্টার্স এক লটে ৭১ লাখ ৫৭ হাজার ৪১৩ এবং স্বপ্না প্রিন্টার্স অন্য লটে ৩২ লাখ ৯৬ হাজার ১৭২টি বই ছাপার কাজ পেয়েছে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, দরপত্র চূড়ান্ত হওয়ার পর কার্যাদেশ দিতে মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তিতে আরও ২৮ দিন সময় দিতে হবে। তারপর আরও ৮৪ দিন সময় দিতে হবে বই ছাপিয়ে উপজেলায় পৌঁছানোর জন্য। এরপর আরও এক মাস সময় পাবে জরিমানা দিয়ে বই দেয়ার। তিনটি অফিসিয়াল প্রক্রিয়া শেষ করে বই দিলেও তা ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়াবে। অর্থাৎ নির্বাচনী বছরে অক্টোবরের মধ্যে বই ছাপিয়ে উপজেলায় পৌঁছানোর সরকারের যে সিদ্ধান্ত ছিল তা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়লো পুনঃদরপত্র আহ্বানের কারণে।

মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্কুলের বইয়ের প্রতি ফর্মা দুই টাকা ২৫ পয়সা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে প্রথম দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। গত বছর ডিসেম্বরের প্রাক্কলনের সঙ্গে জুন মাসের কাগজ, কালিসহ আনুষঙ্গিক জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা দাম হাঁকান দুই টাকা ৬৩ থেকে ৯৩ পয়সা পর্যন্ত। গড়ে দুই টাকা ৭৫ পয়সা প্রতি ফর্মার দাম ধরে দরপত্র জমা দেয়। এতে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ দাম বেড়ে যাওয়ায় পুরো দরপত্র নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এনসিটিবির প্রাক্কলিত দরের চেয়ে বেশি হওয়ায় পুনঃদরপত্রের পক্ষে মত দেয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হয়।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রতি ফর্মা এক টাকা ৯৫ পয়সায় ছাপায় মুদ্রণকারীরা। ওই বছর কাগজের টন ছিল ৬৪-৬৬ হাজার টাকা। এবার সেটি ৯৬ থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। এছাড়া কালি, আর্ট পেপারসহ অন্যান্য জিনিসের দামও বেড়েছে। এরপরও এনসিটিবি গত ডিসেম্বরের প্রাক্কলনের দর ৬৪ হাজার টাকা টন ধরে দরপত্র আহ্বান করে। একই সঙ্গে এনসিটিবি আট হাজার টন কাগজ গড়ে ৯৬ হাজার টাকায় ক্রয় করে।

ব্যবসায়ীরা জানান, একই কাগজ সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্রয় করে ৯৬ হাজার টাকায়, আর দরপত্রে ৬৪ হাজার টাকা টন ধরে। এটা তো সম্ভব নয়।

জানতে চাইলে দেশীয় মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহীদ শেরনিয়াবাত জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ব বাজারে কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার সব ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে এনসিটিবি আগের চেয়ে একটু বেশি মূল্যে দরপত্র আহ্বান করলেও প্রাথমিক স্কুলপর্যায়ের বই তৈরির দরপত্রে অনেকে আবেদন করতে অনীহা দেখায়। একপর্যায়ে এনসিটিবি বাধ্য হয়ে দর বাড়িয়ে আবারও দরপত্র আহ্বান করে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বিশ্ব বাজারে কাগজের দাম বেড়েছে। বিশ্ব বাজারে প্রতি টন ৫৯ থেকে ৬২ হাজার টাকা দরে কাগজ কেনা গেলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৭৮ থেকে ৯২ হাজার টাকায় পৌঁছেছে। এর ওপর আমদানি করা কাগজে সরকার ৬১ শতাংশ শুল্ক কর্তন করেছে। আবার বেড়েছে ডলারের দামও। এসব কারণে কাগজের দাম প্রায় দিগুণ বেড়ে যাওয়ায় বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক তৈরির ব্যয় বেড়েছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জাগো নিউজকে বলেন, কাগজের দাম বাড়ায় এবার প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তকের ব্যয় বেড়েছে। তবে দরপত্র চূড়ান্ত করতে কিছুটা দেরি হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব জেলা-উপজেলায় পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেয়া হবে।

এমএইচএম/জেডএ/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন