যানজট নিরসনে হচ্ছে ১১ ইউটার্ন
>> যানজটের কারণে বছরে আর্থিক ক্ষতি ৩০ হাজার কোটি টাকা
>> ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন
>> চলতি অর্থবছরের মধ্যে ইউটার্নগুলোর নির্মাণকাজ শেষের আশ্বাস
যানজটে প্রতিদিন নগরবাসীর ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ফলে অর্থনীতিতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৩২ লাখ কর্মঘণ্টায় আরও চার লাখ লোকের সমান কাজ পাওয়া যেত। যানজট সমস্যার সমাধান সম্ভব হলে রাজধানীসহ দেশের অর্থনীতিতে আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়ত। সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নও অনেক সহজ হয়ে যেত।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) বলছে, যানজটের কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। অসহনীয় যানজটে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। এ সমস্যা দিনদিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে।
আরও পড়ুন >> রাজধানীতে ১১ ইউটার্ন : যানজট কমবে ২৫ ভাগ
অসহনীয় যানজট এবং নগরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা থেকে উত্তরা হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে মোট ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। কিন্তু হঠাৎ করে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)। তাদের দাবি, জমির মূল্য ও বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতিপূরণ না দিয়ে ইউটার্নের কোনো কাজ করতে দেয়া হবে না। ফলে প্রকল্পটিতে আর গতি আসেনি।
প্রকল্প অনুযায়ী ইউটার্ন নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, তিব্বত মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী ফ্লাইওভার, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি, বনানী কবরস্থান, বনানী ওভারপাস, শেওড়া, কাওলা, উত্তরার র্যাব-১ অফিসের সামনের সড়ক এবং জসিম উদ্দিন এভিনিউয়ের সামনে।
তবে আশার কথা, সব ধরনের জটিলতা নিরসন ও বাধা পেরিয়ে ফের ১১টি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ইউটার্ন নিমার্ণ প্রকল্পের পরিচালক ও ডিএনসিসির প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, ‘সব বাধা পেরিয়ে এবং সব সমস্যা সমাধানের মাধ্যেমে আমরা ইউটার্নগুলো নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ক্ষতিপূরণের দাবি অনুযায়ী সমস্ত কাগজপত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। উত্তরায় তিনটি ইউটার্ন নির্মাণ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে আশা করছি বাকি ইউটার্নগুলোর নির্মাণকাজ আমরা শেষ করতে পারবো।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১১টি ইউটার্নের নির্মাণকাজ শুরু হলে সওজ কর্তৃপক্ষ এসে নিজেদের জমির ক্ষতিপূরণ দাবি করে এবং বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলে। এই প্রকল্পে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, সিভিল এভিয়েশন ও রেলওয়ের কিছু জমি ব্যবহৃত হবে। প্রকল্পের শুরুতে ক্ষতিপূরণ কেউ দাবি করেনি। কিন্ত পরে এসে সওজ তাদের ১ দশমিক ৩৬ একর জমির ক্ষতিপূরণ দাবি করে। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যেম সওজকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। ফলে ইউটার্ন নির্মাণে আর কোনো বাধা রইলো না।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে ইউটার্ন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেবে সরকার। বাকি চার কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেবে ডিএনসিসি। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
২০১৭ সালের ১১ এপ্রিল রাজধানীর সাতরাস্তা থেকে উত্তরা হাউস বিল্ডিং পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে ইউটার্ন নির্মাণ প্রকল্পটি অবগতির জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপন করা হয়। এর আগে ১২টি ইউলোপ নির্মাণের এ প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছিল, পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে ইউটার্ন নামকরণ করা হয়। একই সঙ্গে ইউটার্নের সংখ্যাও কমানো হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাজধানীর যানজট ২৫ শতাংশ কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এএস/এমএআর/আরআইপি