আসামের বাঙালি সংকট রোহিঙ্গা সমস্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ। নির্বাহী সম্পাদক, পিপিআরসি (পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার)। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। গবেষণা করছেন, লিখছেন দেশের রাজনীতি ও সমাজনীতির নানা প্রসঙ্গ নিয়ে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে সংঘটিত আন্দোলন প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। দীর্ঘ আলোচনায় উঠে আসে আসামের বাঙালি সংকটের বিষয়টিও। বলেন, আসামের বাঙালি সমস্যা ভারতের অভ্যন্তরীণ হলেও বাংলাদেশের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। কূটনৈতিক সমাধান করতে না পারলে, এ সংকট রোহিঙ্গা সমস্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ : আসামে ৪০ লাখ বাঙালি নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে। অনেকেই বিষয়টি রোহিঙ্গা সংকটের সঙ্গে তুলনা করছেন। আপনার বিশ্লেষণ কী?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : আমি মনে করি, রোহিঙ্গা সংকটের চাইতেও বড় সংকটে পড়েছে আসামের বাঙালিরা। মূলত ২০১৯ সালে ভারতের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভাজনের রাজনীতি করতে চাইছে বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি)।
জাগো নিউজ : এ বিভাজনের রাজনীতির কী প্রভাব পড়তে পারে?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : এ সংকটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারতের রাজ্যগুলো অশান্ত হতে পারে। সবচেয়ে বড় সংকট হবে, যদি আসামের বাঙালিদের পুশ করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এটি করলে আসামের বাঙালি সংকট রোহিঙ্গা সমস্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। কারণ, তাদের ভাষা, সংস্কৃতি আমাদের মতোই। মিলিয়ে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, আসামের ঘটনায় বাংলাদেশকে শত্রুরাষ্ট্র বানানো হচ্ছে।
জাগো নিউজ : বলা হয়, স্মরণকালের মধ্যে ভারত-বাংলাদেশের এখন মধুর সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করে এসে তাই বললেন। তাহলে এ সংকট...
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রয়োজনে ভারত যদি বাংলাদেশকে শত্রুরাষ্ট্র দেখানোর প্রয়োজন মনে করে তাহলে তাই করবে এবং সেটাই করছে।
বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী মনে করে, আমরা তো ভারতকে সবই দিয়েছি। কিন্তু এটা নিয়ে ভারতের কিছুই আসে যায় না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা তাই দেখেছি। বাংলাদেশকে শত্রুরাষ্ট্র বানিয়ে তাদের অভ্যন্তরীণ লাভ-ক্ষতিটাই মুখ্য। আসামের বাঙালিরা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার।
জাগো নিউজ : তার মানে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে বাংলাদেশ এখন দূরের অবস্থানে?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : অনেক দূরে বাংলাদেশ। যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও এখন ভারতের প্রতি নতজানু। এ দেশ থেকে কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে ভারতে সম্মান, পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। আর তা পেয়েই ভারতের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করে আসছে।
জাগো নিউজ : এমন সম্পর্ক তো ভারতবিরোধী মনোভাব আরও তীব্র করবে?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : অবশ্যই। ভারতকে আমরা ঘৃণা করি- নাগরিকদের মধ্যে এই আকাঙ্ক্ষা তীব্র হবে। ঐতিহাসিকভাবেই ভারতের সঙ্গে আমাদের নানারকম লেনদেন। কিন্তু ভারত তার নীতি একতরফাভাবে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে- এটি দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে।
আগের ভারতবিরোধিতা আর এখনকার ভারতবিরোধিতার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। এখন উন্নয়ন প্রশ্ন সামনে আসছে। আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানের প্রভাব ছিল। আমরা পাকিস্তান থেকে এখন অনেক এগিয়ে গেছি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে।
একপেশে খবরদারি বাংলাদেশের মানুষ কখনই মানেনি। ভীতিকর পরিবেশে মানুষ মুখ বন্ধ করে আছে হয়তো। তবে মুখ খুলতে সময় লাগবে না।
জাগো নিউজ : অন্য পড়শি দেশগুলো ভারতীয় বলয় থেকে বের হচ্ছে। বাংলাদেশ কেন বের হতে পারছে না?
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান : আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতার কারণে ভারতের বলয় থেকে বের হতে পারছি না। মালদ্বীপ ছোট্ট দেশ। অথচ তারা সাহস দেখিয়েছে।
এএসএস/জেডএ/এমএআর/বিএ