অধরা স্বপ্নগুলো এবার হয়তো পূরণ হবে ওদের
অধরা স্বপ্নগুলো এবার হয়তো পূরণ হবে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী দম্পতি রফিকুল ইসলাম ও শাহিদা আফরোজ মিমের। আলোহীন চোখ নিয়ে দুজনেই দেশের খ্যাতনামা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরুলেও চাকরি না পাওয়ায় ২য় দফায় অন্ধকার নেমে আসে তাদের সংসার জীবনে। আত্মীয়-স্বজনরা প্রতিমাসে তাদের সহযোগিতা না করলে হয়তো তাদের ঠাঁই হতো রাজধানীর কোনো রাস্তার ধারে। সেখানে হয়তো পলিথিন পেচিয়ে গড়ে তুলতে হতো তাদের ছোট সংসার। আর উপার্জনের পন্থা হতো ভিক্ষা।
উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে প্রতিনিয়ত সহযোগিতা নিতে বিবেকের উপর চাপ সৃষ্টি হয় রফিকুল ও মিমের। তারপরও তাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না নিজে কিছু করার ক্ষেত্রে। যখনই শুনেছে সরকারি কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে, তখনই আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় আবেদন করেছেন চাকরির জন্য।
অনেকগুলো চাকরির লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিলেও বাদ পড়েছে মৌখিক পরীক্ষায় গিয়ে। নিজে কিছু করার চেষ্টায় তবুও থেমে থাকেনি তারা। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে আজ তারা দুজনেই ক্লান্ত।
ক্লান্ত শরীর ও দৃষ্টিহীন চোখ তাদের নিয়ে ভাবনা থামিয়ে দিলেও জাগিয়ে তুলতো সন্তানের ভবিষ্যতের কথা। সুস্থ স্বাভাবিক ৪ বছর বয়সী সন্তান সিয়ামকে তিন বেলা খাবার দেয়ার বিষয়েও ভাবতে হতো তাদের। কীভাবে তাকে লেখাপড়া করাবে, কীভাবে তাকে বড় করে তুলবে, এসব চিন্তা প্রতিনিয়ত কুড়ে কুড়ে খেত ওদের।
তাদের সেই কষ্টে ভরা জীবন কাহিনি নিয়ে ১৬ জুলাই জাগো নিউজে ‘অন্ধকার ভুবনে চাকরি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত তারা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশে পর অনেক হৃদয়বান মানুষের চোখে পড়ে। তাদের জন্য কিছু করার আশ্বাস দেয় অনেকেই।
এরই ফলশ্রুতিতে রফিকুল-মিম দম্পতির সন্তানের দায়িত্ব নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন রাজধানীর বনানী ডা. শেহরিন নামে এক নারী চিকিৎসক। পরদিন ১৭ জুলাই তিনি জাগো নিউজের কার্যালয়ে এসে তাদের সন্তানের লেখাপড়া বাবদ প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং তাৎক্ষণিক সম পরিমাণ টাকা আর্থিক সহযোগিতা করেন।
এরই মাঝে মোহাম্মদ ওমর ফারুক নামে রাজধানীর একজন ব্যবসায়ী যোগাযোগ করেন জাগো নিউজের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, রফিকুল-মিম দম্পতির জন্য কিছু করবেন। যেন প্রতিমাসে তাদের সংসার চালানোর মতো একটা উপার্জন হয় সেখান থেকে।
সেই মোতাবেক বুধবার দুপুরে জাগো নিউজ কার্যালয়ে আসেন ব্যবসায়ী ওমর ফারুক। একই সঙ্গে সেখানে ডেকে নেয়া হয় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলামকেও।
জাগো নিউজ কার্যালয়ে তিনি রফিকুল ইসলামের সংগে আলোচনা করে ৫টি রিকশা ক্রয় করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ বাবদ তিনি দুই লাখ টাকা সহযোগিতা করেন। এই রিকশাগুলো ভাড়া দিয়ে দৈনিক যে টাকা পাওয়া যাবে সেটাই খরচ হবে রফিকুল-মিম দম্পতির সংসারে।
এসময় জাগো নিউজের সম্পাদক সুজন মাহমুদ, প্রধান বার্তা সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার ও এই প্রতিবেদক উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে অনার্স ও তার স্ত্রী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শাহিদা আফরোজ মিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করার পর অসহায় জীবনযাপন করছিলেন। লেখাপড়া শেষে ২০১১ সালে তাদের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের ৪ বছর বয়সী সিয়াম নামে একটি ছেলে রয়েছে। সে সুস্থ ও স্বাভাবিক। তারা রাজধানীর মিরপুর-১২ নম্বরে থাকেন।
এমএএস/বিএ