ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা রিফর্ম জরুরি

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৩:০২ পিএম, ২৯ জুলাই ২০১৮

দেশের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো ভেঙে পড়েছে- এমনটি উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘ভঙ্গুর রাজনীতির কারণেই নির্বাচনী ব্যবস্থা দিনদিন অকার্যকর হচ্ছে।’

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণার পাশাপাশি ড. তোফায়েল আহমেদ অধ্যাপনা করছেন বেসরকারি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। লিখছেন সরকার, রাজনীতির নানা প্রসঙ্গ নিয়েও। জাগো নিউজ’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নির্বাচন ও কাঠামোর পরিবর্তনে জোর দেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ : গত পর্বে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার নানা অসঙ্গতির কথা বলছিলেন। পরিবর্তনে কী পরামর্শ আপনার?

ড. তোফায়েল আহমেদ : স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অনেক বেশি ভায়োলেন্স হয়। একটি সরকার পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতার পাঁচ বছরেই তাকে বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। নির্বাচন মানেই অস্থিরতা, নির্বাচন মানেই সংঘর্ষ, অতিচিন্তা। অর্থও ব্যয় হয় বেশি।

এর তো কোনো মানে হয় না। একটি নিয়মে আসতে হবে। হতে পারে যে সরকার সামনে ক্ষমতায় আসবে, তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সব স্থানীয় নির্বাচন কোন সময়ে করবে।

জাগো নিউজ : কিন্তু নির্বাচন তো একই সঙ্গে হয়নি। অনেকের মেয়াদ শেষ হলেও ওই সময়ে বাকিদের মেয়াদ থাকবে…

ড. তোফায়েল আহমেদ : প্রশ্ন এখানেই। সবার মেয়াদ শেষ হলেই নির্বাচনের দিন ধার্য করতে হবে। অনেকের মেয়াদ আগেই শেষ হবে। প্রয়োজনে তাকে মেয়াদ শেষের পরও সময় দিতে হবে অথবা প্রশাসন দিয়ে চালাতে হবে। এরপর একটি সিডিউলে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। পাশের দেশ ভারতে তা-ই হয়।

আমি পশ্চিমবঙ্গের এক নারী প্রার্থীকে তার নির্বাচনী খরচের বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলাম। তার খরচ হয়েছিল মাত্র ৯০০ টাকা। কারণ তার নিজের কোনো খরচ নেই। পার্টিই সব খরচ দিয়েছে। আর আমাদের এখানে সব খরচ ব্যক্তির। আবার বছরব্যাপী নির্বাচনের আয়োজন করে রাষ্ট্রেরও কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।

জাগো নিউজ : স্থানীয় সরকারের উন্নয়ন প্রশ্নেও অসঙ্গতি বাড়ছে…

ড. তোফায়েল আহমেদ : সমন্বয়ের অভাবেই এই অসঙ্গতি। ইউনিয়নে বরাদ্দ হচ্ছে। উপজেলায় হচ্ছে, জেলায় হচ্ছে। অথচ কোনো সমন্বয় নেই। যদি সমন্বয় থাকতো তাহলে অর্থ বরাদ্দে লিংক থাকতো। উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতো।

স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনকে একসঙ্গে কাজ করার কথা। প্রশাসনকে ফান্ড দেয়া হয়েছে। জনবলও প্রশাসনের অধীনে। অথচ ইউনিয়ন পরিষদকে উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। ফান্ড ছাড়া উন্নয়ন কী করে হয়?

এই ধারা আর কতদিন চলতে পারে। দিনদিন স্থানীয় সরকারের ক্ষমতাকে সংকুচিত করা হয়েছে। এ কারণেই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা রিফর্ম করা জরুরি।

জাগো নিউজ : দেশের রাজনীতির এ পরিস্থিতির মধ্যে কাঠামো পরিবর্তনের আশা রাখেন?

ড. তোফায়েল আহমেদ : আশা-হতাশার কথা বলছি না। আমি খুব নির্মোহভাবে বাস্তবতা তুলে ধরে বিশ্লেষণের চেষ্টা করছি। আমি আশা করছি না যে এ সরকারই করবে। আবার হতাশ হচ্ছি না করতে পারছে না বলে।

জাগো নিউজ : কিন্তু আশা তো কোনো না কোনো সময়ের ওপর রাখতে হয়…

ড. তোফায়েল আহমেদ : আমরা আশা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি। তবে কোন সময়ে ঠিক আশা পূরণ হবে, তা বলা ঠিক হবে না।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচন কি সংঘর্ষ ছাড়া হয়েছে? অবশ্যই না। সে নির্বাচনেও অস্ত্রের খেলা হয়েছে। জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদের সময়কার নির্বাচনগুলোয় ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই সংঘাত। এখনও চলছে। সংঘাতের রূপ পরিবর্তন হয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিকে।

সংঘাত এড়াতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা। অথচ সংঘাতের মাঝেই তত্ত্বাবধায়ক চলে গেল। সামনে কী হবে বলা মুশকিল। তবে আগের থেকে নির্বাচনে সংঘাত অবশ্য কম হচ্ছে।

জাগো নিউজ : কিন্তু অনিয়ম তো বাড়ছে। ভোটকেন্দ্রে মানুষই যেতে পারছে না?

ড. তোফায়েল আহমেদ : নির্বাচনে নীরব অনিয়মই ভয় বাড়াচ্ছে। একজন মেয়রপ্রার্থী যখন সিটি কর্পোরেশনের বাজেটের চেয়ে বেশি খরচ করেন, তখন নির্বাচনে অনিয়ম অনিবার্য হয়ে ওঠে। এর অর্থ হচ্ছে, ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা। সে ক্ষমতায় অন্যভাবে নিজেকে প্রকাশ করা। যার টাকা নেই সে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে না। অর্থাৎ ভালো হলেও তার নির্বাচন করার ক্ষমতা থাকবে না। ১৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে একজন মেয়রপ্রার্থীর জন্য। অথচ ১৫ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে রাজনীতি হয়, কিন্তু ভাবনা পরিবর্তন আনে না। সংরক্ষিত নারী সদস্য করা হয়েছে। এই নারী সদস্য কার্যত কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। তাদের ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন আসছে না।

জাগো নিউজ : খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনের কথা বলছিলেন?

ড. তোফায়েল আহমেদ : খুলনার নির্বাচনকে মডেল বলা হচ্ছে। ভালো কথা। মাগুরার নির্বাচনকেও বিএনপি মডেল বলেছিল। সেই মডেলের কারণেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেছিল। খুলনা, গাজীপুরের মডেলের কারণে কোন পদ্ধতি আসবে, তা সময় বলে দেবে।

জাগো নিউজ : কিছু ধারণা করতে পারছেন?

ড. তোফায়েল আহমেদ : আমরা একাডেমিক আলোচনা করতে অভ্যস্ত। রাজনীতিবিদের মতো চট করেই কোনো ধারণা করতে পারি না। আমরা পর্যবেক্ষণ করে বলি।

জাগো নিউজ : বিশৃঙ্খল স্থানীয় নির্বাচনের প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে কি হতে পারে?

ড. তোফায়েল আহমেদ : অনেক হিসাবই সামনে আসতে পারে। হেরে যাচ্ছে জেনেও বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এর ভিন্ন অর্থও থাকতে পারে। সরকারকে চাপে রেখে জাতীয় নির্বাচনে নাও যেতে পারে। তাহলে সরকার বৈধতার সংকটে পড়বে। এ হিসাব বিএনপি কষতেই পারে।

জাগো নিউজ : সরকার তো বৈধ-অবৈধের ধারই ধারছে না?

ড. তোফায়েল আহমেদ : এভাবেই হয়তো চলবে। কিন্তু এর অর্থ তো ভালো না। আবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে মরিয়া চেষ্টাও করতে পারে। এখানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

বিএনপি বলছে, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাবে না। এটি একটি ফ্যাক্টর হতে পারে সামনের নির্বাচনে।

জাগো নিউজ : বিএনপি গত নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। কেটে গেল আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর…

ড. তোফায়েল আহমেদ : নদীর পানি সবসময় সমানভাবে প্রবাহিত হয় না। এক হিসাবেই আপনাকে আটকে থাকলে হবে না। দেশে ৪০-এর অধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। ভোট কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মধ্যেই ভাগাভাগি হয়। খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনের ফলাফল দেখেন। এত কিছুর পরও বিএনপি লাখ ভোট পেয়েছে। এটিকে আপনি অবহেলা করতে পারেন না। জিতেছে আওয়ামী লীগ। অন্য কোনো দলের কিন্তু খবর নেই।

আপনি ভোটের রাজনীতির এ হিসাব অস্বীকার করে তো দীর্ঘদিন চলতে পারবেন না। বাম-ডানপন্থী অনেক দলই আছে। তারা কিন্তু ভোটে নেই। আওয়ামী লীগ-বিএনপি কোনো একটি দলকে বাদ দিয়ে যে কোনো নির্বাচনই মূলত অর্থহীন হয়ে যায়।

জাগো নিউজ : এই পরিস্থিতির শেষ কোথায়?

ড. তোফায়েল আহমেদ : এর জবাব রাজনীতিবিদরাই ভালো দিতে পারবেন। আমরা বিশ্লেষণ করতে পারি মাত্র। ভবিষ্যতে কী হবে, যারা রাজনীতির খেলোয়াড় তারাই বলবেন। আমরা বললে পক্ষপাতিত্ব হতে পারে।

এএসএস/এমএআর/বিএ/এমএস

আরও পড়ুন