ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

স্মার্ট তো দূরে, লেমিনেটিং পরিচয়পত্রও মিলছে না কোটি তরুণের ভাগ্যে

সিরাজুজ্জামান | প্রকাশিত: ১২:৩২ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৮

উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্ট কার্ড তো দূরের কথা, কোনো জাতীয় পরিচয়পত্রই মিলছে না কোটি তরুণের ভাগ্যে। এমনকি ২০১২ সালে ভোটার হয়েও এদের বেশিরভাগের ভাগ্যে মিলেনি পরিচয়পত্র। এজন্য এ সংক্রান্ত কাজে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। ছাত্ররা পারছেন না মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতে। ফিল্যান্সসরা পারছেন না ব্যাংক একাউন্ট খুলতে। প্রথমে ফ্রান্সের ও পরে দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও বিভিন্ন সময় নিবন্ধিত নতুন ভোটারদের স্মার্ট নয় লেমনেটিং জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে চুক্তি অনুযায়ী স্মার্ট কার্ড না পেয়ে সাধারণ পরিচয়পত্র দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত বছরের ৮ নভেম্বর স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) কে সাধারণ লেমিনেটিং কার্ড ছাপানোর কাজ দেয় ইসি। সেসময় সর্বনিম্ন দুইজন দরদাতার কাউকে কাজ না দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়। কিন্তু চুক্তি করা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি আর অবহেলার কারণে তাও ভেস্তে গেছে।

কারণ কাগজে প্রিন্ট করা মানহীন ৯৩ লাখ জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেনি ইসি। মাঠ পর্যায় থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ইসি। কমিটি কার্ডগুলো গ্রহণ না করার সুপারিশ জানায়। এজন্য এখন কার্ড বিতরণ বন্ধ রয়েছে।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) উইংয়ের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওই নিম্নমানের কার্ড আমি গ্রহণ করিনি। আমি সব সময় দেশের কথা চিন্তা করি। দেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ কখনও করবো না।’

ইসির একটি সূত্র জানায়, জাতীয় পরিচয়পত্র নতুন করে তৈরি করে দেয়ার জন্য একই কোম্পানিকে আবার কার্ড তৈরির দায়িত্ব দিয়েছে ইসি। ১৫ জুলাই আবার তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাই আবারও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মূলত স্মার্ট টেকনোলজিসের নাম ব্যবহার করে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা কার্ড ছাপার কাজ করছেন। এসব কার্ড যথাযথ প্রিন্টারে না ছেপে আগারগাঁওয়ের বিভিন্ন গলিতে স্থাপিত কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে ছাপা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্র না পেয়ে তরুণদের ভোগান্তির শেষ নেই। এটি ব্যবহারে এখন পর্যন্ত কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো সেবাই দিতে চায় না। এমনকি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় ভিসার দরখাস্তও না নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ডেফডিলের ইউনিভার্সিটির কম্পিউটির ইঞ্জিনিয়ারের শেষ বর্ষের ছাত্র মাসুদ রানা জাগো নিউজকে জানান, ২০১৫ সালে তিনি নিজ জেলা দিনাজপুরে ভোটার হলেও এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। ২০১৪ সালের আগে যারা ভোটার হয়েছেন অনলাইনে আগে তাদের স্লিপ পাওয়া যেত। এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অবসরে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু পরিচয়পত্র ছাড়া কোনো ব্যাংকই একাউন্ট খুলতে রাজি হয়নি। তাই কাজ করেও বিদেশে থেকে টাকা আনতে পারেন না। এজন্য কাজ করাই বন্ধ করে দিয়েছেন।

খালিদ হোসেন নামে এক যুবক ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। গোপালগঞ্জের এই অধিবাসী ২০১৫ সালে সেখানে ভোটার হলেও এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। কয়েক মাস আগে বিতরণ শুরু হলেও নিম্নমানের হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গেছে।

ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সাইন্সের (ইউটিসি) বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহিল রাফি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভোটার হয়েছেন ২০১৬ সালে। কিন্তু এখনও তিনি পরিচয়পত্র পাননি। এ কারণে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাকে চাকরি দিতে অস্বীকৃতি জানায় বলে জাগো নিউজের কাছে দাবি করেন তিনি।

ঢাকার বাড্ডার অধিবাসী ওয়াসিম আকরাম জানান, ঈদের ছুটিতে কয়েকজন মিলে ভারত হয়ে ভুটার ভ্রমণে যেতে চেয়েছিলেন তারা। ভারতে ট্রানজিট ভিসার জন্য গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তার আবেদন গ্রহণ করেনি অ্যাম্বাসি।

জামালপুর জেলার মেলান্দহ থাকার অধিবাসী ওমর ফাকরু জানান, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া অনেক সেবাই নিতে পারছেন না তিনি। বাবার পরিচয়পত্র দিয়ে একটি মোবাইল সিম কিনে ব্যবহার করছেন, বায়োমেট্রিকও করেছেন বাবার নামে। আর মায়ের পরিচয়পত্র ব্যবহার করে কিনেছেন আরেকটি সিম।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ইসিকে আরও সতর্ক হতে হবে। ভোগান্তি কমিয়ে যত দ্রুত সম্ভব সবার মধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করতে হবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম জাগো নিউজকে বলেন, স্মার্ট টেকনোলজিস (বিডি) নিম্নমানের পরিচয়পত্র গ্রহণ করেনি ইসি। তাই প্রতিষ্ঠানটি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা যাতে সেটি পুষিয়ে নিতে পারে, সেজন্য দ্বিতীয় দফায়ও তাদের কাজ দেয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ইসি ভবনের ১১ তলায় মেশিন বসিয়ে এবং ইসির তত্ত্বাবধানে কার্ড ছাপার কাজ করা হবে। তাই খুব তাড়তাড়ি এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করেন তিনি।

এইচএস/এমবিআর/আরআইপি

আরও পড়ুন