রাজপথে আগ্রহ বাড়ছে বিএনপির
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজপথে শক্ত অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে সংসদের বাইরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি।
নিকট অতীতে দলটির কর্মসূচিতে তেমন লোকসমাগম না হলেও গত ২০ জুলাই, শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে অনুষ্ঠিত সমাবেশে যে লোকসমাগম হয়েছে তাতে নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তারা বলছেন, সরকারের নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আগের কর্মসূচিগুলোতে লোকসমাগম তেমন না হলেও আগামী কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।
গতকাল শনিবার বিকেলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে জাগো নিউজ’র সঙ্গে কথা হয় বিএনপির কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল খান ও মো. শরিফুল আলমের সঙ্গে।
মো. আব্দুল আউয়াল খান বলেন, ‘সরকারের প্রতিবন্ধকতা না থাকলে আগামী কর্মসূচিগুলোতে রাজপথ বিএনপির নেতাকর্মীদের দখলে থাকবে।’
মো. শরিফুল আলম বলেন, ‘এতোদিন বিএনপিকে স্পেস দেয়া হয়নি। নেতাকর্মীরা এখন আর অনুমতির অপেক্ষা করবে না। তারা সময় মতো রাজপথে নেমে যাবে।’
নয়াপল্টনে শুক্রবারের সমাবেশ এবং আগামী কর্মসূচিগুলোতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি প্রসঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের দফতর সম্পাদক মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি দীর্ঘদিন সুবিধাবঞ্চিত। বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে অন্যান্য রাজনৈতিক দল যে সুবিধা পাচ্ছে, সেই সুবিধা বিএনপিকে দেয়া হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জেলে। এখন দল যে কর্মসূচি দেবে নেতাকর্মীরা তা সফল করতে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়বে।’
যুবদলের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল বলেন, ‘আসলে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পেছনে যাওয়ার পথ নেই। দেশের যে অবস্থা তাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা এবং লুটপাট থেকে জাতিকে রক্ষা করতে জাতীয়তাবাদী শক্তি বিএনপির কঠোর আন্দোলন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ সামনে খোলা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের প্রধানকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে। এজন্য স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ায়ও সরকার বাধা দিচ্ছে। এ অবস্থায় নেতাকর্মীরা কঠোর রাজনৈতিক কর্মসূচির জন্য অপেক্ষা করছে। সম্ভবত অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি আসবে। এতে দেশের যুব সমাজসহ সবাই জীবনবাজি রেখে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে।’
‘আমরা এবার প্রচণ্ড আশাবাদী। সামনের দিনগুলোতে জনগণ অবশ্যই আমাদের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক দফতর সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, ‘গত আড়াই বছর আমাদের সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। শুক্রবারে আমাদের প্রতিবাদ সমাবেশ ছিল। জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল গোটা নয়াপল্টন এলাকা।’
‘সরকার সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করেছে। এর প্রতিবাদে শুধু বিএনপি বা এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাই নয়, দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত হয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতে বিএনপিকে সমাবেশ করতে দেয়া হলে সমাবেশস্থলটি জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’
শুক্রবারের সমাবেশে লোকসমাগম সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি। তাই তিনি সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে অন্যান্য জাতীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। আমি বলবো, এটি একটি ঐতিহাসিক জনসভা। মাত্র ১৮ ঘণ্টা সময় পেয়েছিলাম। পুলিশ এখানে জনসভা করতে দেবে কিনা- আমরা তা ১৮ ঘণ্টা আগেও নিশ্চিত ছিলাম না।’
তিনি বলেন, ‘এই যে বাধা দেয়া, কর্মসূচি পালন করতে না দেয়া; এমনটি আগেও আমরা দেখেছি। দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর সংশয়ের মধ্যে রাত ১০টার দিকে আমরা কর্মসূচির অনুমতি পাই। এরপর সবাইকে জানাতে হয়েছে। এতো কম সময়ের মধ্যে যে উপস্থিতি, এক কথায় আমি বলবো তুলনাহীন।’
রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যদি উপস্থিত থাকতেন তাহলে কী অবস্থা হতো, তা এখনই আঁচ করা যায়। তার মুক্তির দাবিতে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সব বাধা উপেক্ষা করে, পুলিশি নানা ধরনের ভয়ভীতি উপেক্ষা করে সফল একটি ঐতিহাসিক জনসভা সম্পন্ন করেছে।’
আগামী কর্মসূচিগুলোতেও এমন ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘অবশ্যই থাকবে। নিপীড়ক সরকার যত নিপীড়ন করবে, জনগণের বাঁধভাঙা ঢেউ তত বেশি আছড়ে পড়বে।’
কেএইচ/এমএআর/পিআর