ব্যাংকের শেয়ারে আগ্রহ বেড়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের
সাধারণ বিনয়োগকারীরা আস্থা হারালেও ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় করছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণ নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছরের জুন মাস শেষে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ স্থির রয়েছে। বাকি ২৮টির মধ্যে ১৮টিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন। আর ১০টি ব্যাংক থেকে কিছু বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।
জুন শেষে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর প্রায় ৫৫০ কোটি ৪৯ লাখ শেয়ার বিদেশিদের কাছে রয়েছে। বর্তমান বাজার দরে এসব শেয়ারের মূল্য প্রায় ৯ হাজার ৯৬৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেসব ব্যাংকের শেয়ার নতুন করে কিনেছেন তার মধ্যে রয়েছে- এবি ব্যাংক, এশিয়া, সিটি, ঢাকা, ডাচ বাংলা, আইএফআইসি, ইসলামী, যমুনা, এমটিবি, এনসিসি, প্রিমিয়ার, পূবালী, শাহজালাল ইসলামী, এসআইবিএল, স্ট্যান্ডার্ড, ট্রাস্ট, ইউসিবি ও উত্তরা ব্যাংক।
নতুন শেয়ার কেনায় সব থেকে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে পূবালী ব্যাংকে। জুন মাস শেষে ব্যাংকটির ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে। বর্তমান বাজার দরে এসব শেয়ারের দাম প্রয় ৫৮০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। মে মাস শেষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ব্যাংকটির ২৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ শেয়ার ছিল। সে হিসাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পূবালী ব্যাংকের দশমিক ৬৪ শতাংশ বা প্রায় ৫০ লাখ শেয়ার নতুন করে কিনেছেন।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্যাংক এশিয়াতে বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৫৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ তাদের কাছে ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৩১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ রয়েছে। মে মাসে এর পরিমাণ ছিল ৩০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। সে হিসাবে ব্যাংকটির দশমিক ১১ শতাংশ বা প্রায় ১২ লাখ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে কিনেছেন।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেসব ব্যাংকের শেয়ার নতুন করে কিনেছেন তার চিত্র :
নাম |
জুন মাস শেষে প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা শেয়ার |
মে মাসে প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা শেয়ার |
বর্তমান বাজার দরে বিনিয়োগের পরিমাণ |
এবি ব্যাংক |
২৬.৫০ শতাংশ |
২৫.৮৬ শতাংশ |
২৪১ কোটি ৮ লাখ টাকা |
ব্যাংক এশিয়া |
৩১.০৫ শতাংশ |
৩০.৯৪ শতাংশ |
৫৬৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা |
সিটি ব্যাংক |
১৯.২০ শতাংশ |
১৮.৯৮ শতাংশ |
৫৬১ কোটি ২৭ লাখ টাকা |
ঢাকা ব্যাংক |
২৫.৮২ শতাংশ |
২৪.২৭ শতাংশ |
২৭২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা |
ডাচ বাংলা |
৫.৯২ শতাংশ |
৫.৫৫ শতাংশ |
১৩৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা |
আইএফআইসি |
২২.১৫ শতাংশ |
২২.০৮ শতাংশ |
৩৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা |
ইসলামী ব্যাংক |
১০.৫৪ শতাংশ |
১০.২৮ শতাংশ |
৩৮৫ কোটি ২০ লাখ টাকা |
যমুনা ব্যাংক |
৪.১০ শতাংশ |
৪.০৭ শতাংশ |
৪৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা |
এমটিবি |
২২.৯৮ শতাংশ |
২২.৮২ শতাংশ |
৪২০ কোটি ৩১ লাখ টাকা |
এনসিসি |
১৭.৯২ শতাংশ |
১৭.৪৯ শতাংশ |
২১৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা |
প্রিমিয়ার ব্যাংক |
১৮.২১ শতাংশ |
১৮.০৭ শতাংশ |
১৫৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা |
পূবালী ব্যাংক |
২৫.৪০ শতাংশ |
২৫.৩৬ শতাংশ |
৫৮০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা |
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক |
১৭.০৮ শতাংশ |
১৬.৯৫ শতাংশ |
৩২২ কোটি ৮১ লাখ টাকা |
এসআইবিএল |
৩৮.৪৮ শতাংশ |
৩৮.০৩ শতাংশ |
৪৭৫ কোটি ১ লাখ টাকা |
স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক |
২১.৮০ শতাংশ |
২০.৫২ শতাংশ |
২১৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা |
ট্রাস্ট ব্যাংক |
১৬.০৯ শতাংশ |
১৬.০৮ শতাংশ |
২৪৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা |
ইউসিবি |
১৮.৪৪ শতাংশ |
১৮.২৭ শতাংশ |
৩২৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা |
উত্তরা ব্যাংক |
২১.৪১ শতাংশ |
২০.৬৮ শতাংশ |
২০২ কোটি ১৫ লাখ টাকা |
এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেসব ব্যাংকের কিছু শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে- আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক, ইবিএল, এক্সিম, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, মার্কেন্টাইল, এনবিএল, ওয়ান, প্রাইম ও সাউথ ইস্ট ব্যাংক। এর মধ্যে তারা সব থেকে বেশি ছেড়ে দিয়েছেন এনবিএল’র শেয়ার। জুন মাসে ব্যাংকটির প্রায় ১০ কোটি শেয়ার ছেড়ে দিয়েছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। ছেড়ে দেয়া এ শেয়ার সংখ্যা ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অপরদিকে তারা ইবিএল’র শেয়ারের একটি অংশ ছেড়ে দিলেও এখনো এই ব্যাংকটিতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সব থেকে বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। জুন শেষে ব্যাংকটির ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে। বর্তমান বাজার দরে এসব শেয়ারের মূল্য প্রায় এক হাজার ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যেসব ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করেছেন তার চিত্র :
নাম |
জুন মাস শেষে প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা শেয়ার |
মে মাসে প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা শেয়ার |
বর্তমানে বাজার দরে বিনিয়োগের পরিমাণ
|
আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক |
১৭.৮৪ শতাংশ |
১৯.৪১ শতাংশ |
৩৯৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা |
ব্র্যাক ব্যাংক |
৮.৮৫ শতাংশ |
৮.৮৯ শতাংশ |
৬০৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা |
ইবিএল |
৪৩.৪২ শতাংশ |
৪৩.৪৭ শতাংশ |
এক হাজার ২৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা |
এক্সিম ব্যাংক |
১৭.৮৭ শতাংশ |
১৮.০৬ শতাংশ |
২৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা |
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক |
১৩.২০ শতাংশ |
১৩.৩৫ শতাংশ |
১০৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা |
মার্কেন্টাইল ব্যাংক |
১৬.৩৫ শতাংশ |
১৬.৯৬ শতাংশ |
২১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা |
এনবিএল |
১৭ শতাংশ |
২০.৮৩ শতাংশ |
৪৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা |
ওয়ান ব্যাংক |
১৪.৮৩ শতাংশ |
১৪.৯৮ শতাংশ |
১৭৬ কোটি ২০ লাখ টাকা |
প্রাইম ব্যাংক |
২৪.৪০ শতাংশ |
২৪.৭১ শতাংশ |
৪২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা |
সাউথ ইস্ট ব্যাংক |
২৯.৮৯ শতাংশ |
২৯.৯৩ শতাংশ |
৪৫৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা |
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাজার কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ আছে মাত্র একটি ব্যাংকে। ৫০০ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ আছে চারটি ব্যাংকে। আর ১০০ কোটি টাকার নিচে বিনিয়োগ আছে মাত্র একটি ব্যাংকে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হলেও সার্বিকভাবে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করা নিরাপদ। নির্দিষ্ট কিছু ব্যাংক আছে, যেগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ। সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) খারাপ না। সুতরাং ব্যাংক খাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করাটা খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় না।
তিনি বলেন, ব্যাংকের শেয়ার কেনার মাধ্যমে তারা একটি নিরাপদ অবস্থানে থাকছেন। এর মাধ্যমে তারা ঝুঁকিও নিচ্ছেন না, আবার ভালো মুনাফাও করতে পারছেন না। তবে অর্থনৈতিক দিক থেকে চিন্তা করলে, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ আসা ভালো। এ জন্য ভালো কোম্পানি বাজারে আসলে ওই কোম্পানির শেয়ার বেশি বেশি কেনা উচিত বলে আমি মনে করি। এতে ভালো কোম্পানিগুলো উৎসাহিত হবে।
এমএএস/জেডএ/জেআইএম