বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নিয়ে কী ভাবছে শরিকরা
বেশ কয়েক বছর ধরেই জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে বিএনপির ওপর দেশি-বিদেশি চাপ রয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা না হলেও গত বছরের নভেম্বর থেকে রাজপথের কর্মসূচিতে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। এবার সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদ নিয়ে দল দুটির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা গেছে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে প্রতীকী অনশনে জামায়াত নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল। বিএনপি- জামায়াতের এমন সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্ক বলছেন জোটের অন্য শরিক দলের নেতারা।
তারা বলছেন, সিলেট সিটি নির্বাচন একটি স্থানীয় নির্বাচন। এতে দল দুটির মধ্যে যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে তাতে জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও রমজান মাসে ইফতার কর্মসূচিতে বিএনপি-জামায়াতসহ মিত্র দলগুলোর নেতাদের এক সঙ্গে দেখা গেছে। এ ছাড়া কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে জোটের বৈঠকে জামায়াতের উপস্থিতি নিয়মিত রয়েছে। যদিও বা কোনো কোনো বৈঠক শুরু করেই জরুরি কাজের কথা বলে জামায়াত নেতাদের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক কি আসলেই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তর দল দুটির শীর্ষ নেতাদের মুখ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে ইস্যুতে তিনি সংবাদ সম্মেলন করছেন তার বাইরে যাবেন না তিনি। সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, গত দশ দিন ধরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কেউ দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।
খালেদা জিয়া কারাগারে, জামায়াতের নায়েবে আমির মকবুল আহমাদ মুক্তি পেলেন, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মূল ইস্যুকে ভায়োলেট করতে চাই না। আপনাদের কাছে অনুরোধ। আমরা আজকে শুধু চেয়ারপারসনের ইস্যুতে কথা বলব।’
সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত শক্ত মনোভাব দেখালেও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অনশন কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি ছিল। এই পরিস্থিতি সম্পর্কে জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হলো একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সেখানে জামায়াত ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আমি মনে করি না, এ জন্য জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমাদের একক প্রার্থীর প্রত্যাশা ছিল। বিএনপি আমাদের জোটের সর্ববৃহত্তম দল এবং জামায়াতে ইসলামীকে বলা যায় দ্বিতীয় বৃহত্তম দল। সুতরাং একক প্রার্থী না থাকা নিয়ে আমি মনে করি, বিএনপি-জামায়াতের ব্যর্থতা।’
এ বিষয়ে আরেক শরিক লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান জাগো নিউজকে বলেন, ২০দলীয় জোট বিশেষ একটা উদ্দেশ্যে গঠন করা হয়। এর প্রথম উদ্দেশ্য হলো- দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়া। আমরা এই কাজটি এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারি নাই। এর জন্য আমাদের লড়াই চলছে, আমাদের লড়াই চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত ভোট ও ভাতের অধিকার, গণমানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে না আনতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন হয়েছে। সেখানে এ সমস্যাগুলো হয়নি। একটাতে হয়েছে। আমরা জোটের শরিকদলগুলো ওই জায়গাতে (সিলেট) একক প্রার্থী দেয়ার ব্যাপারে জামায়াতকে অনুরোধ করছি। এখন জামায়াতে ইসলামীর একক সিদ্ধান্ত হিসেবে তারা তাদের প্রার্থী দিয়েছে। এখন ৩০ তারিখের (জুলাই) নির্বাচনে যেটা হবে আমি মনে করি না, শুধু এই নির্বাচনের কারণে জোটের মধ্যে কোনো প্রকার ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে বা জোট ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
ইরান আরও বলেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে হবে। শেখ হাসিনার অধীনে যদি আমরা নির্বাচনেই যাই, তাহলে সেটাতো ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেই যেতে পারতাম। তাহলে কী আমাদের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়াটা ভুল ছিল?
‘৫ জানুয়ারি একটা পাতানো নির্বাচন ছিল। আমাদের হারানোর পরিকল্পনা ছিল। আমরা বারবার দেশের মানুষের কাছে প্রমাণ করেছি ওই নির্বাচন কোনো নির্বাচন না। এ জন্য আগামী নির্বাচনটা আমাদের চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে। একাদশ জাতীয় নির্বাচন ২০দলীয় জোটের জন্য চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ ২০দলীয় জোটকে মোকাবেলা করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বিএনপি, বিএনপির অঙ্গসংগঠন এবং বিএনপি জোটের সব সংগঠনের অবস্থা এক না। আমরা সবাই যারযার জায়গা থেকে কাজ করছি। সামনে একটা আন্দোলন নিয়ে আমরা চিন্তা করছি। আন্দোলনটা হবে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আগামী নির্বাচনের আগে যে আন্দোলনটা হবে, এটা হবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক তথা রোহিঙ্গা নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে থাকব, নাকি আমরা লড়াই করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে দেশের মানুষকে অধিকার ফিরিয়ে দেব। আমরা অবশ্যই লড়াইয়ে সফল হব। জোটনেত্রীরও মুক্তি হবে।’
কেএইচ/জেডএ/পিআর