ক্ষমতাসীন শিবিরে ‘বিএনপি নির্ভর’ নির্বাচনী ভাবনা!
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন বণ্টন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়নি ক্ষমতাসীন মহাজোট। যদিও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক জাতীয় পার্টি পৃথক নির্বাচনের কথা বলছে। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়ার পেছনে রয়েছে নির্বাচনে ‘বিএনপি নির্ভর’ ভাবনা। আওয়ামী লীগ ও জোট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জোট নেতৃত্বাধীন দলের কাছে ইতোমধ্যে নিজেদের প্রত্যাশিত আসন সংখ্যার কথা জানিয়েছেন শরিকরা। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আসন বণ্টনের চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা।
আরও পড়ুন >> চেহারার দরকার নাই, শুধু চাই ‘নৌকায় ভোট’
জোট নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি না আসায় আসন বণ্টনের রূপরেখা এক রকম ছিল। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আসবে কিনা- এ বিষয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আসন বণ্টন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনও আসেনি বলে মনে করেন তারা।
জোট নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি বৃহত্তর ঐক্য গঠিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে আসন ভাগাভাগির চেয়ে রাজনৈতিক বিজয় গুরুত্ব পাবে। অন্যদিকে, বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে ১৪ দলীয় জোট অক্ষুণ্ন থাকতে পারে অথবা পৃথক পৃথকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। তাই বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা, না করার সিদ্ধান্তের ওপর আসন বণ্টনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা সহজ হবে। এমনটি মনে করেন ক্ষমতাসীনরা।
জানা গেছে, বর্তমান সংসদে ৩৪টি আসন নিয়ে বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টি আগামীতে জোটগত নির্বাচনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের কাছে ৭০টি আসন পাওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। যদিও শুরু থেকে জাতীয় পার্টি পৃথকভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে আসছে।
জাতীয় পার্টির দুজন প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, নির্বাচনী রাজনীতি এখনও শুরু হয়নি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে আমাদের প্রত্যাশার কথা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানিয়েছি। পরবর্তীতে আমরা দলীয়ভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।
অন্যদিকে ছয়টি আসনে প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রত্যাশা ১৫টি আসন, দুটি আসন থাকা তরিকত ফেডারেশনের প্রত্যাশা ১০টি আসন, দুটি আসন থাকা জাতীয় পার্টি (জেপি) তাদের আসনগুলোই চাইছে।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটে থাকা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) দশম সংসদে পাঁচটি আসন পেয়েছিল। দল ভেঙে জাসদ, ইনু-শিরীন তিনটি এবং জাসদ, আম্বিয়া-প্রধান অংশে রয়েছে দুটি আসন। পৃথক প্রত্যাশায় ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদ ৩০টি এবং আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদ ১৫টি আসন চাইছে জোট নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের কাছে।
বর্তমান সংসদে কোনো আসন পায়নি এমন জোট শরিক ন্যাপ ২০টি আসন, গণতন্ত্রী পার্টি ১০টি, সাম্যবাদী দল চারটি আসন দাবি করেছে জোট নেতৃত্বাধীন দলের কাছে।
আরও পড়ুন >> খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাই শেখ হাসিনার বড় ভয়
এছাড়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত নয় এমন দল বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ছয়টি আসন, গণআজাদী লীগ ১০টি, কমিউনিস্ট কেন্দ্র দুটি এবং গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি দুটি আসন চাইছে।
এ প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘১৪ দলীয় জোট থেকে আমরা দুটি আসনে নির্বাচন করতে চাই। তবে বড় বিষয় হলো জোটের প্রার্থীকেই নির্বাচিত করা। আসন বণ্টন নিয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। হলে আমাদের দাবির বিষয়টি সেখানে উপস্থাপন করব।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে নির্বাচন করব- এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচন এখনও ঢের দেরি। নির্বাচনের আগে অবস্থান বুঝে, নেত্রী (শেখ হাসিনা) ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে বসবেন। সেখানে আলোচনা হবে, তখন সিদ্ধান্ত হবে ১৪ দলে কার কী পজিশন হবে। আসন নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে’- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে দুটি বিষয় জড়িত। বিএনপি নির্বাচন করছে কিনা; এখানে একটি রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকছে। আবার বিএনপি যদি নির্বাচন না করে; সেক্ষেত্রেও আরেকটি পরিস্থিতি থাকছে।’
আরও পড়ুন >> নতুন কৌশলে বিএনপি
‘জাতীয় পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক কী হবে তা ওই অবস্থা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে তা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এইউএ/এমআরএম/এমএআর/এমএস