ঢাকায় আমের কেজি ৬ টাকা
ঢাকায় আমের কেজি ৬ টাকা। কথাটা শুনতে কিছুটা বিস্ময় লাগলেও এটাই সত্য। ফলের পাইকারি আড়ত বাদামতলীতে কিছু জাতের আম মাত্র ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সব থেকে ভালো মানের আম বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে। গত এক যুগের মধ্যে এবারই দেশে আমের দাম সব থেকে কম বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
দাম কম হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার বাজারে চাহিদার তুলনায় আমের সরবরাহ বেশি। সোমবার বাদামতলী বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও আড়ত মালিকদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
সরবরাহ বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার মৌসুমের প্রথম যখন ঢাকাতে আম আসে, সে সময় প্রশাসন অনেক আম নষ্ট করে দেয়। যে কারণে অনেক ব্যবসায়ী বাজারে আগাম আম আনেননি। আর এখন সব চাষির আম পেকে যাচ্ছে। ফলে বাজারে সব আম এক সঙ্গে আসছে।
বাদামতলীর বিভিন্ন আড়তে হিমসাগর, লেংড়া, লক্ষণভোগ, ফজলি, আমরূপালি, ভোগলা গুডিসহ প্রায় সব জাতের আম রয়েছে। এর মধ্যে ছোট আকারের হিমসাগর ও লক্ষণভোগ বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৮ টাকা কেজি দরে।
আর বড় ও ভালো মানের হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। লক্ষণভোগ বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া ভালো মানের ভোগলাগুডি আম প্রতিকেজি ২৫ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আমরূপালি ভালো মানেরটা বিক্রি হচ্ছে ৩৫থেকে ৪০ টাকা কেজি। মাঝারি মানের আমরূপালির দাম কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। ফজলি আম পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে।
আমের এমন দামের বিষয়ে মো. আনোয়ার হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এবার আমের বাজার খুব খারাপ। আমি গত ২০ বছরের মধ্যে এত কম দামে কখনো আম বিক্রি হতে দেখিনি।
আমের দাম কম হওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘এবার আমের মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়ীদের অনেক আম নষ্ট করে দেয়া হয়, যার খবর বিভিন্ন মিডিয়াতে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। এতে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয় ঢুকে যায়। ফলে মৌসুমের শুরুতে আমের বিক্রি ছিল খুবই সীমিত। যে কারণে চাষিরাও সে সময় আম ভাঙেনি। কিন্তু এখন সব আম একসঙ্গে পেকে যাচ্ছে। ফলে চাষিরা আম ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে বাজারে অতিরিক্ত আম আসায় দাম পড়ে গেছে।
মো. নুরু নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমি বাদামতলীতে ৮ বছর ধরে ব্যবসা করছি। এবার যে দামে আম বিক্রি করছি, এত কম দামে এর আগে কখনো বিক্রি করিনি। লেংড়া আমের কেজি মাত্র ১০ টাকা। এটা চিন্তা করতে পারেন। গত বছরও লেংড়া আম কখনো ৪০ টাকার নিচে নামেনি।
আমের দাম কম হওয়ার কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘৫ থেকে ৭ বছর আগে এক একটি গ্রামে এক-দুজন আগের বাগান করতেন। কোনো কোনো অঞ্চলে তো আমের বাগানই ছিল না। কিন্তু এখন প্রায় অঞ্চলেই বাগান হয়ে গেছে। অনেক গ্রামে একাধিক চাষি করছেন। ফলে বাজারে আমের সরবরাহ বেড়ে গেছে। দাম কমার জন্য এটি একটি কারণ। এ ছাড়া সম্ভবত ঈদের ছুটির পর এখনো সবাই রাজধানীতে ফিরে আসেনি। আমের চাহিদা কিছুটা কম হওয়ার এটাও একটি কারণ।’
এমএএস/জেডএ/এমএস