ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

কার স্বার্থে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা? 

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, ২৬ জুন ২০১৮

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। পরিচালক, বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার। অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগে। গবেষণা করছেন জনস্বাস্থ্য ও খাদ্যমানের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। বিভিন্ন জার্নালে ভেজালবিরোধী অবস্থান নিয়ে লিখছেন তিনি।

খাবারে ভেজাল, খাদ্যমান, ভেজালবিরোধী অভিযান এবং রাষ্ট্রের দায় নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু। তিন পর্বের দ্বিতীয়টি থাকছে আজ।

জাগো নিউজ : ফরমালিন ব্যবহারের বিপক্ষে জনমত। আপনারা মানুষকে সচেতন করছেন। মিডিয়াও সজাগ। এখন কী বলবেন?

আ ব ম ফারুক : ফরমালিনের ব্যবহার আগের থেকে কিছুটা কমেছে। মানুষের সচেতনতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করি। এশিয়ার যেসব দেশে আম উৎপাদন হচ্ছে, সেসব দেশে আইন করে কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কী কারণে কার্বাইড, ইথোফেন বা ফরমালিন দেয়া যাবে না তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া আছে। এগুলো অবশ্যই শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

jagonews24

জাগো নিউজ : কিসের ভিত্তিতে বলছেন?

আ ব ম ফারুক : আমাদের দেশে এ নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়নি এখনও। তবে অন্যান্য দেশে এসব নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে। সেসব গবেষণার রেফারেন্স দিয়েই আমরা কথা বলছি এবং এর ক্ষতিকর দিক তুলে ধরছি। খাবারের ভেজাল নিয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ অনেকেই মনগড়া মন্তব্য করছেন। আমি মনে করি, এমন কোনো মন্তব্য করা ঠিক নয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের মন্তব্যে ভেজালকারীরা আরও উৎসাহ পাচ্ছেন বলে মনে করি। 

তার মন্তব্যের কারণেই যাত্রাবাড়ির ভেজাল আম ব্যবসায়ীরা র‌্যাবের অভিযানের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পেয়েছে বলে মনে করি। অথচ একেবারে অপরিপক্ব আম কার্বাইড দিয়ে পাকানো ছিল।

জাগো নিউজ : বিতর্কও তো আছে অভিযান নিয়ে?

আ ব ম ফারুক : প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, এবার আমরা আসল আম খাওয়াব। ডিসি ও এসপিদের নির্দেশ দেয়া হলো কোন আম কখন বাজারজাত করতে হবে। সাতক্ষীরার হিমসাগর আর রাজশাহীর হিমসাগর একসঙ্গে আসবে না। রংপুরের হাড়িভাঙ্গার আম কখন আসবে তার নির্দেশনা দেয়া হলো।

শুনেছি, এবার রাজশাহীর ডিসি নাকি খুবই তৎপর ছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, সব ডিসি যদি এমন তৎপর হতেন তাহলে অপরিপক্ব আম বাজারে আসার কথা নয়। তাহলে র‌্যাব বা পুলিশকে অভিযান পরিচালনা করতে হতো না। তাদের তো অনেক কাজ আছে। তাদের তো আমের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ভেজাল খাদ্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। র‌্যাব-পুলিশ যেসব আম ধ্বংস করেছে, তা অবশ্যই ভালো আম ছিল না। তাহলে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ অভিযানের বিরোধিতা করে কার স্বার্থ রক্ষা করছে?

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের মন্তব্যে ভেজালকারীরা উৎসাহ পাচ্ছেন। তার মন্তব্য অবশ্যই ভেজালকারীদের পক্ষে গেছে।

জাগো নিউজ : নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বক্তব্য ‘ফরমালিন নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই’। আপনি তো আতঙ্কের কথা বলছেন…

jagonews24

আ ব ম ফারুক : নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সম্প্রতি বেশ কয়েকটি খারাপ মন্তব্য করেছেন। ফরমালিন নিয়েও তার বিভ্রান্তিমূলক কথা রয়েছে। আবার কার্বাইড নিয়েও মনগড়া কথা বলছেন।

জাগো নিউজ : এমন বিভ্রান্তির অর্থ কী থাকতে পারে?

আ ব ম ফারুক : হয়তো তার কোনো উদ্দেশ্য আছে। এমন জনবিরোধী অবস্থান নিয়ে উনার তো কথা বলার কথা নয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে থেকে এমন মন্তব্য করার ভিন্ন কারণ থাকতেই পারে। অন্য স্বার্থ থাকতে পারে। 

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ভেজালকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অথচ প্রতিষ্ঠানটির কাজই হচ্ছে ভেজালবিরোধী। এইপ্রতিষ্ঠান ভোক্তা অধিকার আন্দোলনের ফসল। জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতেই সরকার এটি গঠন করেছে, আইন করেছে। অথচ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ভেজাল খাবারের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বক্তব্য আত্মঘাতী মনে হয়। আমাদের দেশের আমলাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে সব বিষয়েই বিশেষজ্ঞ মতামত দেয়া। অথচ তারা নিজের বিষয়ের খবরই রাখেন না। সব অনুমাননির্ভর কথা।

জাগো নিউজ : কিন্তু তিনি যুক্তিও দিচ্ছেন।

আ ব ম ফারুক : যদি তার নিজস্ব কোনো গবেষণা থাকে তাহলে সবাইকে অবহিত করুক। সরকারকে বলুক; র‌্যাব ও পুলিশকে বলুক যে অভিযানগুলো অন্যায়। ফরমালিন খেলে ক্ষতি নেই- এর পক্ষে প্রমাণ দিয়ে কথা বলুক। 
আমার জানা মতে, তার কাছে কোনো গবেষণা নেই। কারণ এ ধরনের গবেষণার ব্যবস্থাই নেই বাংলাদেশে। ভালোমানের কোনো ল্যাব নেই। টক্সিকোলজিক্যাল গবেষণা ছাড়া এ পরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই।

jagonews24

জাগো নিউজ : তাহলে আপনারা বলছেন কিসের ভিত্তিতে?

আ ব ম ফারুক : অনেক দেশেই নির্ভরযোগ্য গবেষণা হয়েছে। আমরা তার ভিত্তিতে কথা বলছি। ফরমালিন খেলে ক্ষতি আছে এমন হাজারও গবেষণা আছে। কিন্তু ফরমালিন খেলে ক্ষতি নেই- এমন একটি গবেষণাও নেই।

মানুষের জন্য কী নিরাপদ, তা মানুষকে খাইয়েই পরীক্ষা করতে হয়। তিনি তো কোনো পরীক্ষা করেননি। দেশের অনেক কৃষিবিজ্ঞানীই মনগড়া কথা বলেন। আমি তাদের অনুনয় করে বলছি, পারলে মানব শরীরে পরীক্ষা করে কথা বলেন। গবেষণা কখনও অনুমাননির্ভর হয় না। উপজেলাতেও এখন কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হয় এমন চিকিৎসা হচ্ছে। মানুষের শরীরের আবর্জনা পরিষ্কার করে কিডনি ও লিভার। অথচ বেশিরভাগ রোগীই এখন কিডনি-লিভারের রোগে আক্রান্ত। এখন ঘরে ঘরে ক্যানসার। আমি নিশ্চিত, আমার যদি হার্ট অ্যাটাকে মরণ না হয়, তাহলে ক্যান্সারে হবে। এর একটিই কারণ হচ্ছে ভেজাল খাবার। বাচ্চাদেরও এখন ক্যানসার হচ্ছে। একজন ভেজালকারী তার ব্যবসার স্বার্থে অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু আমি দায়িত্বে থেকে (ঠাস) মনগড়া কথা বলতে পারি না। খাবারে ভেজাল দিলেই বাইরের দেশে ব্যবস্থা নেয়া হয়। আর আমাদের এখানে রাষ্ট্রীয় কর্তারা ভেজালে সহায়তা করছেন।

এএসএস/এমআরএম/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন