ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

জাতিসংঘের নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশে

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, ২৫ জুন ২০১৮

অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। পরিচালক, বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টার। অধ্যাপনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগে। গবেষণা করছেন জনস্বাস্থ্য ও খাদ্যমানের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। বিভিন্ন জার্নালে ভেজালবিরোধী অবস্থান নিয়ে লিখছেন তিনি।

খাবারে ভেজাল, খাদ্যমান, ভেজালবিরোধী অভিযান এবং রাষ্ট্রের দায় নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু। তিন পর্বের প্রথমটি থাকছে আজ।

জাগো নিউজ : খাদ্যে ভেজাল! এ নিয়ে দিনদিন আতঙ্ক বাড়ছে। আসলে আমরা কী খাচ্ছি?

আ ব ম ফারুক : খাদ্যে ভেজাল মানুষের তৈরি একটি দুর্যোগ। অধিক ঘনবসতির দেশ আমাদের। যে কোনো বিষয়ই দ্রুত ছড়িয়ে যায়, খাবারে ভেজালও ঠিক তাই।

আমাদের দেশে খাবারে ফরমালিন আগে ছিল না। ১৯৮৭ সালে দুধে ফরমালিন মেশানোর বিষয়টি দেখতে পাই। আমি একবার বাঞ্ছারামপুর থেকে ঢাকায় ফিরছিলাম। লঞ্চের মধ্যে দেখি অসংখ্য দুধের পাত্র, যা আগের দিন সংগ্রহ করে পরের দিন ঢাকার রথখোলায় নেয়া হচ্ছে।

দুধ নষ্ট হয় কি না- জানতে চাইলে ব্যাপারীরা বললেন, দুধে মেডিসিন দেয়া আছে। তা-ই নষ্ট হবে না। কিন্তু কী মেডিসিন তা বললো না। বিষয়টি খটকা লাগলো। পরে আমি শিক্ষার্থীদের দিয়ে ওই এলাকা থেকে সে মেডিসিন সংগ্রহ করে ল্যাবে টেস্ট করালাম। ধরা পড়ল ফরমালিন। বলতে পারেন খাবারে প্রথম ফরমালিন শনাক্তকরণ সেটিই।

ফরমালিন হচ্ছে মারাত্মক একটি প্রিজারভেটিভ। প্রোটিন জাতীয় দ্রব্য দীর্ঘ সময় পচনের হাত থেকে রক্ষা করতে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। দুধ হচ্ছে দ্রুত পচনশীল দ্রব্য। অথচ ২৪ ঘণ্টা ঠিক রাখা হচ্ছে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে কী পরিমাণ শক্ত প্রিজারভেটিভ আছে ফরমালিনে!

জাগো নিউজ : ফরমালিনের ক্ষতিকর কোনো দৃষ্টান্ত জানা ছিল আপনার?

আ ব ম ফারুক : ফরমালিন মেশানো শুঁটকি খেয়ে ইন্দোনেশিয়ার জাভাতে সাতজন মারা যায়। ওই সময় সারা পৃথিবীতে ফরমালিন নিয়ে হৈচৈ শরু হয়। ফরমালিন আসলে প্রিজারভেটিভ নয়। এক প্রকার বিষ।

জাগো নিউজ : এখন তো এর ব্যবহার ভয়াবহ?

jagonews24

আ ব ম ফারুক : হ্যাঁ। বিশেষ করে মাছে ফরমালিনের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। ১৯৯২ সালে আমি একবার পলাশীর মাছ বাজারে কাচকি মাছ কিনতে যাই। সকালের মাছ বিকেলেও একই রকম রয়েছে দেখে সন্দেহ হয়। পরের দিন শিক্ষার্থীদের দিয়ে ওই মাছ ল্যাবে এনে দেখি, তাতে ফরমালিন মেশানো। এরপর দেখতে পেলাম, আরও অনেক কিছুতেই ফরমালিনের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে।

জাগো নিউজ : কীভাবে জানলেন?

আ ব ম ফারুক : ম্যাজিস্ট্রেট রোকন উদ-দৌলা নানা জায়গায় অভিযান চালিয়ে আমাদের কাছে কিছু স্যাম্পল পাঠিয়ে দিতেন পরীক্ষার জন্য। দেখলাম, বড় মাছেও ফরমালিন এবং কাপড়ে মেশানো রং ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ করে মিয়ানমার থেকে যে মাছ আসে, সেখানে মারাত্মক আকারের ফরমালিন পাওয়া যায়।

আঙ্গুর, দুধ, মাছের মধ্যে ফরমালিন আমরা শনাক্ত করলাম। পরে জনস্বাস্থ্য অধিদফতর আরও নানা পণ্যে ফরমালিন শনাক্ত করলো। শাক, সবজি এবং ফলে ফরমালিনের ব্যবহার তারাই শনাক্ত করে।

জাগো নিউজ : আম নিয়ে বিতর্ক। আমের বিষয়টি কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?

আ ব ম ফারুক : আম নিয়ে আমরা বেশ কাজ করেছি। রাজশাহীতেও গিয়েছি শিক্ষার্থীদের নিয়ে। আমে মুকুল আসার পর থেকে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত দু’বার কীটনাশক ব্যবহার করা হয় এ সময়।

কিন্তু এখন আমে ব্যবহার হচ্ছে গ্রোথ প্রমোটর। অর্থাৎ একই আম দ্বিগুণ গতিতে যেন বড় হয় সে জন্য মেডিসিন স্প্রে করা হচ্ছে। বিভিন্ন নাম দেয়া হয়েছে তার।

jagonews24

প্রকৃতি হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞানী। একটি আমে এসিড থাকে। সেই এসিড প্রাকৃতিক উপায়ে বিক্রিয়া করে আমের মধ্যে নানা উপাদান তৈরি করে। স্বাদ, গন্ধ, রং এ বিক্রিয়ার ফল। একেকটি গাছ হচ্ছে একেকটি ল্যাবরেটরি। কোনটির পর কোনটি করতে হবে, তা প্রকৃতি সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে।

কিন্তু মানুষ অধিক মুনাফার লোভে সেই জৈব প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে। যে আম দু’মাসে পরিপক্ব হওয়ার কথা, তা এক মাসে হচ্ছে। যে কারণে প্রাকৃতিক উপায়ে যে উপাদানগুলো তৈরি হওয়ার কথা, তা একটি আমে হচ্ছে না। কৃত্রিমভাবে আম পাকানো হচ্ছে। অথচ আমের ভেতরে উপাদানগুলোর পূর্ণতা আসেনি। গাছ থেকে নামানোর পর অপরিপক্ব আম দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা। অথচ তা হচ্ছে না। তার মানে এ বেলাতেও মেডিসিনের ব্যবহার। ব্যাপারীরা বলছেন, আম নষ্ট হয় বলেই কার্বাইড বা ফরমালিন মেশাতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ : একই চিত্র তো অন্য ফলেও?

আ ব ম ফারুক : হ্যাঁ। প্রায় সব ফলই এখন এ পদ্ধতিতে উৎপাদন ও পাকানো হচ্ছে। আম, কলা, পেঁপে এমনকি বেলও আর মেডিসিন ছাড়া পাচ্ছেন না বাজারে। অপরিপক্ব, অথচ হলুদ রং দেখে আম কিনলাম। বাসায় নিয়ে খোসা উঠানোর পর আমের আর প্রকৃত রূপ মিলছে না। গন্ধ, স্বাদ কোনটিই আর সত্যিকারের আমের মতো থাকছে না। এমনকি আমের আঁশও নেই আগের মতো।

জাগো নিউজ : এতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে কী বলবেন?

আ ব ম ফারুক : জাতিসংঘের নিষিদ্ধ অনেক কীটনাশক বাংলাদেশে ব্যবহার হচ্ছে। ফরমালিন আমাদের দেশে উৎপাদন হয় না। ভারতেও নেই। কিন্তু সমানে ব্যবহার হচ্ছে এখানে। জনস্বাস্থ্যের দিকে সামান্য গুরুত্ব না দিয়েই অযাচিতভাবে বিষ ব্যবহার হচ্ছে।

jagonews24

জাগো নিউজ : তাহলে ফরমালিন আসছে কীভাবে?

আ ব ম ফারুক : সরকার মেডিকেল কলেজ বা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারের জন্য যে ফরমালিন সরবরাহ করে সেখান থেকে পাচার হয়ে আসতে পারে। যার হয়তো দশ লিটার প্রয়োজন, সে একশ লিটার এনে বাকিটা বিক্রি করে দিচ্ছে। এটি আমার সন্দেহ।

আবার মিয়ানমার থেকেও পাচার হয়ে আসতে পারে। প্রচুর মাছ আসছে দেশটি থেকে। সেই মাছে ফরমালিনও ব্যবহার হতে পারে। সম্ভবত মাছের সঙ্গে কিছু ফরমালিনও পাঠায় তারা।

এএসএস/এমআরএম/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন