অবশেষে ননসিডিউল ফ্রেইটারের অর্থ জমা হচ্ছে বিমানে
>> মাত্র চার মাসে বিমানে জমা পড়েছে ২০ কোটি টাকা
>> দীর্ঘ ৯ বছরে আদায় হয়নি ৭০০ কোটির অধিক অর্থ
>> অনিয়ম হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব : বিমানের সিইও
অবশেষে টনক নড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা হতে শুরু করেছে ননসিডিউল ফ্রেইটারের (মালবাহী জাহাজ) কাছ থেকে আদায় হওয়া অর্থ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত- এই চার মাসে এ খাত থেকে বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ২০ কোটি ২৪ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪২ টাকা।
এই হিসাবে দীর্ঘ নয় বছরে আদায়যোগ্য প্রায় ৭০০ কোটির অধিক অর্থ বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি। বিমানের ইন্টারনাল অডিট রিপোর্ট (অভ্যন্তরীণ নীরিক্ষা) আপত্তির পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ অর্থ জমা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিমানের হিসাব বিভাগ।
আরও পড়ুন >> বিমানের কার্গোতে হরিলুট
বিপুল পরিমাণ এ অর্থ বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা না হওয়ার কারণ সম্পর্কে ওই সময়ে কার্গোর দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (বিপণন ও বিক্রয়) মো. আলী আহসান বাবু মুখ খুলতে নারাজ। কিছুদিন আগে ওই পরিচালককে গ্রাহকসেবা বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
বিমানের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের মতে, বিতর্কিত ও চতুর ওই পরিচালকের চাকরির মেয়াদ আছে আরও তিন মাসের মতো। তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন একটি প্রভাবশালী মহল। বিষয়টি বিমানের সর্বমহলে আলোচিত হলেও অদ্যাবধি বিমান ম্যানেজমেন্ট কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ সালের আগে অর্থাৎ ননসিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে আদায় হওয়া অর্থ বিমানের হিসাব বিভাগে জমা হতো। এরপর কিছুদিন অনিয়মিত আদায় হয়। সদ্য বদলি হওয়া ডিএমএস আলী আহসান বাবু ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময়ে কার্গোর মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পান। মূলত এরপর থেকে সার্কুলার না থাকার অজুহাতে ননসিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে অর্থ আদায় বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে বিমান বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
আরও পড়ুন >> বিমানের আসন খালি থাকার কারণ যানজট!
সার্কুলার না থাকলেও কেন হ্যান্ডলিং সেবা দিয়েছেন, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে কেন সার্কুলারের ব্যবস্থা করেননি এবং বিমানের লাভের চিন্তা না করে এখন কেন সার্কুলারের অজুহাত দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে একাধিকবার কল দেয়া হলেও আলী আহসান বাবু রিসিভ করেননি।
বিপুল অঙ্কের আর্থিক অনিয়ম জেনেও কী কারণে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনিয়ম হলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়ে এখন এর চেয়ে বেশিকিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা গেছে, বিগত দুই বছরে কার্গো শাখায় ননসিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে ইনবাউন্ড-আউটবাউন্ড (অন্তর্মুখী-বহির্মুখী) কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ ৭৬ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। বিমানের অডিট রিপোর্টে এ চিত্র উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন >> হজ ফ্লাইট : এয়ারক্রাফট সংকটে বিমান
অডিট শাখার হিসাব মতে, ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর ওই হারে অর্থ লুটপাট হয়েছে। বর্তমানে অর্থ আদায়ের হার থেকে ধারণা করা হচ্ছে, ২০০৮ সাল থেকে কমপক্ষে ৭২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। লুটপাটের এ অর্থ দিয়ে একটি উড়োজাহাজ কেনা যেত- এমনটি মনে করছেন বিমান সংশ্লিষ্টরা।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্রে আরও জানা যায়, ননসিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে ইনবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক ননসিডিউল ফ্রেইটারের কাছ থেকে ‘স্লেভ রেট’ ভিত্তিতে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ আদায় করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ননসিডিউল ফ্রেইটারের বহন করা ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ড কার্গো হ্যান্ডলিং বাবদ কোনো চার্জ বিমানের অ্যাকাউন্টে জমা হয়নি।
তদন্তে দেখা গেছে, ননসিডিউল ফ্রেইটার সিল্ক ওয়ে ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নং- ইউ৩ ৭২২৫ (২৪ নভেম্বর ২০১৭) এর মাধ্যমে বহন করা ১৬ হাজার ৬৮৪ কেজি মালামালের কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ দুই লাখ ৩৩ হাজার ৫২৯ টাকা (পেমেন্ট রিসিট নং- ১৫১৫৪৮), ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে সিল্ক ওয়ে ওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নং- ইউ৩ ৭২২৫ (১ ডিসেম্বর ২০১৭) এর মাধ্যমে বহনকৃত ১৮ হাজার ১০৭ কেজি মালের চার্জ বাবদ দুই লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৫ টাকা (পেমেন্ট রিসিট নং- ১৫২৭৪৮) আদায় করেছে বিমান।
আরও পড়ুন >> ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, তিনি বিমানের মন্ত্রী নন
তবে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত ননসিডিউল ফ্রেইটারে বহন করা ইনবাউন্ড পাঁচ কোটি আট লাখ ৩৪ হাজার ৭০ কেজি এবং আউটবাউন্ড তিন কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৬৩৮ কেজি মালামাল হ্যান্ডলিং করে কার্গো হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ বিমানের আয় হওয়ার কথা ছিল ৯০ লাখ ২৬ হাজার ৫৯৮ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৭৬ কোটি টাকা। ২০০৮ সাল থেকে এ হারে হিসাব করলে লোপাটের অংক দাঁড়ায় ৭২০ কোটি টাকার ওপরে।
আরএম/এমএআর/এমএস