ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

খাবারে বিষ থাকলে মানুষের আয়ু বাড়ত না

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৩:২৪ পিএম, ১৩ জুন ২০১৮

মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। চেয়ারম্যান, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। খাদ্যে ভেজাল এবং ভেজালবিরোধী প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি মুখোমুখি হন জাগোনিউজ-এর। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ভেজাল আম ধ্বংস করার ঘটনাকে ভুল বোঝাবুঝি মনে করেন রাষ্ট্রীয় এই কর্তা। ফরমালিন বা অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে জনমনে আতঙ্ক থাকলেও তিনি অবশ্য ‘এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’বলেই জানালেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।  শেষ পর্ব

জাগো নিউজ : অভিযোগ রয়েছে দিবস পালন আর কাগুজে প্রচারের মধ্যেই আটকা ‘নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’। তবে কি এ প্রতিষ্ঠান কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ?

মাহফুজুল হক : আমাদের এখানে দুইভাবে খাবার অনিরাপদ হচ্ছে। একটি হচ্ছে খাবারে ভেজাল। আরেকটি হচ্ছে দূষণ। দূষণের মাধ্যমেই খাদ্য অনিরাপদ হচ্ছে। জেনে শুনে খাবার ভেজাল করা হচ্ছে, এটি জানার সুযোগও মেলে। কিন্তু দূষণের মাধ্যমে খাদ্য কীভাবে অনিরাপদ হচ্ছে, সে সম্পর্কে হয়তো অনেকেই অবগত নয়। মাটি, পানি, বায়ু নানাভাবেই দূষিত হচ্ছে। শিল্পের বর্জ্য দিয়ে সব কিছুই নষ্ট হচ্ছে। বাজার থেকে নিরাপদ খাবার নিয়ে এসে তা বাড়িতেও দূষিত হয়। এক্ষেত্রে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। যে খাবার অনিরাপদ করছেন, তার বিরুদ্ধে হয়তো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, কিন্তু তাকে সচেতন করে তোলা হয়নি। আমরা এখন সচেতন করার ওপরেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সক্ষমতা অর্জনে যা যা করার তাই করছি। আমরা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে কাজ করতে চাই। অনুমাননির্ভর কোনো সিদ্ধান্ত নেব না। অতীতে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।

জাগো নিউজ : যেমন-
মাহফুজুল হক : ফরমালিন নিয়ে সমাজে অনেক কথা। অনেকে ফরমালিনের কারণে শাকসবজিও খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ একজন মানুষের জন্য শাকসবজি খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। ফরমালিন প্রোটিন ছাড়া অন্য কোনো উপাদানে প্রভাব রাখতে পারে না।

জাগো নিউজ : প্রোটিন তো শাকসবজিতেও আছে। ফরমালিনের প্রভাব এখানেও কার্যকর।

মাহফুজুল হক : শাকসবজিতে প্রোটিনের মাত্রা খুবই কম।

জাগো নিউজ : তাহলে ফরমালিন আতঙ্কের এই দায় কার?

মাহফুজুল হক : যারা ফরমালিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, তারা হয়তো সৎ উদ্দেশ্যেই নিচ্ছেন। একটি মাছ দীর্ঘদিন ফরমালিনের পানিতে চুবিয়ে রাখছে। এতে মাছটির গুণাগুণ নষ্ট হতে পারে। কিন্তু ফরমালিনের দ্রবণে মাছ বা মাংস চুবিয়ে তুলে ফেললেই এর গুণাগুণ নষ্ট হয় না। ফরমালিন নিয়ে নানা বিভ্রান্তি আছে মানুষের মধ্যে। আমরা এ ব্যাপারে একটি গণবিজ্ঞপ্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গণমাধ্যমেও এই নিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা রয়েছে। ফরমালিন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে মানুষের মনে বদ্ধমূল এক প্রকার ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, যে কারণে অনেকেই পুষ্টিকর খাবার আতঙ্কে খাচ্ছে না। আমরা পুষ্টির অভাবে দক্ষ জনশক্তি গঠন করতে পারব না। পরবর্তী প্রজন্ম মেধাসম্পন্ন হবে না। ডিম নিয়েও নানা বিভ্রান্তি আছে। অপপ্রচার আছে।

জাগো নিউজ : আপনি অপপ্রচার বলছেন। অথচ সরকারই নানাভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে। একদিনে দশ হাজার মণ আম ধ্বংস করল র‌্যাব। ফরমালিনের ব্যাপারেও নানা সময় ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে। এসব তো প্রমাণের ভিত্তিতেই?

মাহফুজুল হক : ভুল বোঝাবুঝি আছে, আমি তা আগেই বলেছি। আমরা এখন তাদের সঙ্গেও কাজ করছি। যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। এখন তো আর হচ্ছে না। আমরা চাই ভবিষ্যতে যেন বিভ্রান্তি তৈরি না হয়। ফরমালিন নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক দূর করার জন্য আমরা নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছি।

জাগো নিউজ : তার মানে আপনি ফরমালিন ব্যবহারের পক্ষে?

মাহফুজুল হক : আমি ঠিক পক্ষের কথা বলছি না। চাহিদা মেটাতে খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে। সার, কীটনাশকও ব্যবহার করতে হচ্ছে। বর্তমানে এর কোনো বিকল্প নেই। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এসবের ব্যবহার করা যেতেই পারে। গুড এগ্রিকালচার প্রাকটিস শুরু হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই। কীটনাশক, রাসায়নিক সার নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

জাগো নিউজ : আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তা কিসের ভিত্তিতে বলছেন? স্বাস্থ্য বিজ্ঞান তো আতঙ্কের কথাই বলে।

মাহফুজুল হক : আমরা বিআরসির মাধ্যমে ১২ পদের সবজি ভারতের চেন্নাইয়ে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে কীটনাশকের অবশিষ্ট বেশিমাত্রায় পাওয়া যায়নি। ফরমালিন নিয়ে ২৮টি খাদ্যপণ্য গবেষণা করেছি। কোনো খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মেশানোর অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অথচ প্রাকৃতিকভাবেই আমরা ফরমালিন খেয়ে আসছি, নানান খাবারের মাধ্যমে। আমের নমুনাও চেন্নাইয়ে পাঠিয়েছিলাম। সেখানে ইথোফেন বা কার্বাইডের মাত্রা বেশি মেলেনি।

জাগো নিউজ : চেন্নাইয়ে পাঠাতে হচ্ছে কেন? নিজেদের পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেই?

মাহফুজুল হক : আমাদের গবেষণাগারগুলো স্বীকৃত না। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো ল্যাবরেটরি নেই আমাদের এখানে।

জাগো নিউজ : এখন পর্যন্ত একটি স্বীকৃত গবেষণাগারই প্রতিষ্ঠা করা গেল না?

মাহফুজুল হক : আমাদের ল্যাবরেটরিগুলোর অবস্থা খুবই করুণ।

জাগো নিউজ : তাহলে তো অনুমানের উপরেই চলছেন আপনারা। আপনার কথাও ঠিক অনুমানের ওপর নির্ভর করে। সাধারণের আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছেই বটে?

মাহফুজুল হক : না। আমরা বাইরে থেকেও তো গবেষণা করিয়ে আনছি।

জাগো নিউজ : পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন সচেতনতার জন্য। অথচ একটি ল্যাবরেটরিই দিতে পারলেন না এত দিনে।

মাহফুজুল হক : রাতারাতি সব সম্ভব না। আমরা ল্যাবরেটরিগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। একদিনে সব সমাধান হয় না।

জাগো নিউজ : একদিন বলছেন কেন? নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তিন বছর আগে। আইন হয়েছে আরও আগে। এরপরেও জোড়াতালির সমাধান হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। আপনারা লিফলেট বিতরণেই আটকে আছেন। এই প্রশ্নে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ অথর্ব হয়ে পড়ছে কি-না?

মাহফুজুল হক : স্থানীয় সরকার এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের জনবল উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের আমরা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। আমরা ইতোমধ্যেই ৭০০ জনের মতো খাদ্য পরিদর্শক কাজে লাগিয়েছি। তারা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। রাতারাতি কিছুই সম্ভব হয় না। আগের চেয়ে অনেক কিছুই বদলে গেছে। মানুষ এখন সচেতন। মানুষের গড় আয়ুও তো বাড়ছে। খাবারে বিষ থাকলে মানুষের আয়ু বাড়ত না। মানুষ সচেতন হচ্ছে, তাই আয়ু বাড়ছে। খাবার তৈরি নিয়ে নানা নীতিমালা করা হয়েছে। আরও নীতিমালা করা হচ্ছে। উন্নত দেশগুলো যা করতে পারেনি, আমরা তা করতে পারব বলে মনে করি। ১১ জন জনবল নিয়ে আমরা অনেক কিছুই করে যাচ্ছি বলে মনে করি।

এএসএস/ওআর/জেআইএম

আরও পড়ুন