নিঃস্বরাও হাঁটছে আয়ের সিঁড়িতে
মাতলব হোসেন, বাড়ি মাদারীপুরে। রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় চায়ের দোকানদারী করেন। স্ত্রী সুমাইয়া বেগম এ কাজে স্বামীকে সহযোগিতা করেন। এ আয় দিয়ে তিন মেয়েকে স্কুলে পড়ান। বাড়িতে বৃদ্ধ মায়ের জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠান।
এভাবে দীর্ঘ চার বছর ধরে চলছে মাতলব-সুমাইয়ার সংসার। আগে তারা ছিলেন নিঃস্ব, এখন মোটামুটি সচ্ছল। আরও কিছু টাকা জমলে চায়ের একটি বড় স্টল দেয়ার স্বপ্ন দেখেন এ দম্পতি।
মিরপুরের মুদি দোকান ‘ডেইলি মার্ট’র গল্পটা কিন্তু ভিন্ন। দোকানের মালিক শাহাদত হোসেন বলেন, ‘কয়েক বছর দেশের বাইরে ছিলাম। বৈশ্বিক মন্দার সময় চাকরি হারিয়ে বছর তিনেক আগে দেশে ফিরে আসি। খুব বেশি আয়ও করতে পারিনি। এখানে (দেশে) এসে জমানো টাকা ভেঙে খাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। বাধ্য হয়ে মিরপুর মুসলিম বাজারে একটি ছোট মুদি দোকান দেই। সেই দোকান থেকে ডেইলি মার্টের সূচনা। এখন চার কর্মচারী এখানে কাজ করে, বিক্রিও ভালো। এভাবে চললে ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন টেনশন করতে হবে না।’
তার মতো গত পাঁচ বছরে দেশব্যাপী প্রায় তিন লাখ চা স্টল ও মুদি দোকান গড়ে উঠেছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ছয় লাখ লোকের। এ তথ্য সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)। সংস্থাটির সর্বশেষ অর্থনৈতিক জরিপ বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
জরিপে উঠে এসেছে, ২০১৩ সালে দেশে চা স্টলের সংখ্যা ছিল চার লাখ ১১ হাজার ৩৩০টি। ২০১৮ সালে এসে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে চার লাখ ৯১ হাজার ২৭৯টি। এ হিসাবে পাঁচ বছরে চায়ের স্টল বেড়েছে ৭৯ হাজার ৯৪৯টি (প্রায় ২০ শতাংশ)।
একই অবস্থা মুদি দোকানেও। গত পাঁচ বছরে দেশে মুদি দোকানের সংখ্যা বেড়েছে ২০ শতাংশ। ২০১৮ সালে মুদি দোকানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৮১৬টি। যা ২০১৩ সালের চেয়ে দুই লাখ ১০ হাজার ৯১৯টি বেশি। ২০১৩ সালে দেশে মুদি দোকান ছিল ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৭টি।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। ফলে তারা ভোগ্যপণ্যে অর্থব্যয়ের পরিমাণ বাড়িয়েছে। এ সুযোগে দেশে ছয় লাখ মানুষ এ সেক্টরে বিনিয়োগ করেছে, ভালো ব্যবসাও করছে। তারা নিজেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করেছে, সেই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিকেও এগিয়ে নিচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার দেশের গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট তথা অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। এসব পাকা রাস্তার পাশে মানুষ গড়ে তুলছে ছোট ছোট দোকান। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির অগ্রগতির এটি একটি ভালো নমুনা।’
পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৩ সালে দেশের চা স্টলে কর্মসংস্থান হয়েছিল আট লাখ ৭২ হাজার ২৯৫ জনের। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৭৭ হাজার ৭১৭ জন। এ হিসাবে এ খাতে দুই লাখ ৫৪ হাজার ২২ জনের কর্মসংস্থান বেড়েছে। শতাংশের হিসাবে যা প্রায় ২৪ ভাগ।
অন্যদিকে মুদি দোকানে কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে এখানে কর্মরত ছিল ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৫ জন। পাঁচ বছর পর এ সংখ্যা চার লাখ ছয় হাজার ৬৯৫ জন বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৩৭০ জনে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন জনসংখ্যার বোনাসকাল (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট) অতিক্রম করছে। দেশে বেশিরভাগ মানুষ কর্মক্ষম। সবাই যার যার অবস্থান থেকে কিছু করার চেষ্টা করছেন।’
‘অনেকেই প্রত্যাশা অনুসারে কিছু করতে না পেরে মুদি দোকান কিংবা চা স্টল দিচ্ছেন। এটা একদিকে ভালোই বলা যায়। বেকার থাকার চেয়ে কিছু করা ভালো। কিন্তু সরকারকে মনে রাখতে হবে যে, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে যুবশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। দেশে কর্মসংস্থানের পরিমাণ বাড়াতে হবে।’
এমএ/এমএমজেড/এমএআর/জেআইএম