বছর ঘুরে বছর আসে, অপেক্ষা কাটে না
> ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন
> ঘোষিত হয়নি ৫০টি থানা, ৯৩ ওয়ার্ড ও ১৭ ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি
> ‘মাই ম্যানদের’ কারণে কমিটি ঘোষণায় বিলম্বিত!
> সমঝোতার মাধ্যমে শিগগিরই কমিটি : শাহে আলম মুরাদ
বছর ঘুরে বছর আসলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর হয় না। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির পদপ্রত্যাশী নেতাদের অপেক্ষার প্রহরও যেন শেষ হয় না।
২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এরপর মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দেয়া হয়। ছয় বছর পার হতে চলল এখনও পরিপূর্ণতা পায়নি দু’ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগরের মোট ৫০টি থানা, ৯৩টি ওয়ার্ড ও ১৭টি ইউনিয়ন কমিটি।
একে একে পার হয়েছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের তিন দফা আল্টিমেটাম। এরপরও ঘোষিত হয়নি কমিটি। পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রত্যাশায় এখনও তাই প্রহর গুণছেন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উত্তরে ২৬টি থানা, ৩৬টি ওয়ার্ড ও নয়টি ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে রয়েছে ২৪টি ওয়ার্ড, ৫৭টি থানা ও আটটি ইউনিয়ন। সংশ্লিষ্ট নেতারা বলছেন, কমিটি চূড়ান্ত হয়ে সাধারণ সম্পাদকের ঘোষণার অপেক্ষায় রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য জানান, মহানগরের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে দেয়ার দায়িত্ব নগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। তারা কিছু কমিটির প্রস্তাব করলেও সেসব কমিটি নিয়ে আপত্তি আসে খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্যকে উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে আসা অভিযোগগুলো নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেন। ওই দুই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য যদি অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হন তাহলে আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
নগর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের পদপ্রত্যাশীদের বক্তব্য, এসব কমিটিতে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে ‘মাই ম্যানদের’ দায়িত্ব দিতে গিয়ে দলের অনেক ত্যাগী, নির্যাতিত নেতাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। সেই অভিযোগ আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে গড়ালে শরু হয় সময়ক্ষেপণ। পদপ্রত্যাশী নেতাদের অভিযোগ, নগর আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী নেতাদের ‘মাই ম্যান’, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের ‘মাই ম্যান’ এবং বর্তমান নেতাদের ‘মাই ম্যানদের’ কারণে কমিটির ঘোষণা আসতে দেরি হচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত একটু হলেও আশার বাণী শোনান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। তিনি বলেন, শিগগিরই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড, ইউনিয়েনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে। কমিটি নিয়ে পরবর্তীতে যাতে কোনো ধরনের রেষারেষি না হয় সে চেষ্টা চলছে। সমঝোতার ভিত্তিতে সবার সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রে কমিটিগুলো জমা দেয়া হয়েছে। সেগুলো অনুমোদনসাপেক্ষে যে নির্দেশনা কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী স্ব স্ব এলাকায় কমিটি গঠন করে দেয়া হবে।’
তবে এ বিষয়ে একটু ভিন্ন সুর শোনা গেল ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহর মুখে। তিনি বলেন, ‘সাধারণ সম্পাদক সাহেবের কাছে কমিটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তিনিই বিষয়টি ঘোষণা করবেন।’
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, মহানগর আওয়ামী লীগের অধীনে প্রতিটি থানা কমিটিতে ৩৪ কর্মকর্তা ও ৩৩ সদস্যসহ মোট ৬৭ জন সদস্য থাকবেন। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে (মহানগর) ৩০ কর্মকর্তা ও ৩৫ সদস্যসহ মোট ৬৫ জন সদস্য থাকবেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে ৩০ কর্মকর্তা ও ৩৫ সদস্যসহ ৬৫ জন থাকবেন।
২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ কমিটি পায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সেসময় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা হলেও নগরের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি।
এর আগে ২০০৩ সালের ১৮ জুন অনুষ্ঠিত নগর সম্মেলনে মোহাম্মদ হানিফকে সভাপতি ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। পরে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল নগর আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।
এইউএ/এমএআর/আরআইপি