ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

নেতৃত্বে রদবদল না হওয়ায় স্থবির স্বাচিপ-ড্যাব

প্রকাশিত: ০৭:০৬ পিএম, ৩১ জুলাই ২০১৫

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের প্রধান দুই সংগঠন-স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাাচিপ) ও ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এর সাংগঠনিক কার্যক্রম নেতৃত্বের রদবদল না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাধারন চিকিৎসকরা বলেছেন, এ সংগঠন দুটির একটিতেও যথাযথ সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা ও সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রীতিনীতির ন্যূনতম চর্চা নেই। গঠনতন্ত্র অনুসারে প্রতি দুই বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

তারা বলছেন, নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বছরের পর বছর কিছুসংখ্যক চিকিৎসকের হাতেই নেতৃত্ব থেকে যাচ্ছে। ফলে নতুন চিকিৎসক নেতা তৈরী হওয়ার পথ রুদ্ধই থেকে যাচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে গত ১২ বছর যাবত স্বাচিপের কাউন্সিল ও নির্বাচন হচ্ছে না। সর্বশেষ ২০০৩ সালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. এ এফ এম রুহুল হককে সভাপতি ও প্রফেসর ডা. এম ইকবাল আর্সলানকে মহাসচিব করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। স্বাচিপের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় কাউন্সিলের আয়োজন ও নির্বাচনের দাবী জানিয়ে আসলেও সুদীর্ঘ এক যুগেও তা পূরণ হয়নি।

প্রায় সমকালিন সময়ে অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হক ও অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ড্যাবের সভাপতি ও মহাসচিব নির্বাচিত হন। ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটিতে মোট সদস্য সংখ্যা ১৯৯ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ড্যাব সভাপতি ডা. আজিজুল হক সম্প্রতি সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই ড্যাব মহাসচিব ডা. জাহিদকে দূর্নীতির অভিযোগে চাকরিচ্যুত করে । বর্তমানে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড্যাবের কার্যক্রম মূলত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) এর সর্বশেষ তথ্যানসুারে বর্তমানে দেশে বৈধ রেজিষ্ট্রেশনপ্রাপ্ত চিকিৎসকের সংখ্যা ৬৬ হাজারেরও বেশী। মোট চিকিৎসকদের মধ্যে মৃত্যুজনিত ও বিদেশ গমনের কারণে দেশে ৫০ হাজার চিকিৎসক রয়েছেন বলে অনুমান করা হয়। বর্তমানে প্রায় অর্ধলক্ষ চিকিৎসকদের শতকরা ৯৮ভাগই স্বাচিপ ও ড্যাব অনুসারি নেতাকর্মী।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে বিএনপি ক্ষমতায় না থাকায় কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন নিয়ে ড্যাবপন্থী চিকিৎসকদের খুব বেশী আগ্রহ নেই। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে সরব স্বাচিপের জুনিয়র সিনিয়র চিকিৎসকরা। রমজান মাসে ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে স্বাচিপের একজন নেতা প্রকাশ্যেই গত এক যুগ যাবত স্বাচিপের কাউন্সিল অধিবেশন না হওয়ায় জ্বালাময়ী বক্তব্য দিয়ে দ্রুত নির্বাচন দাবী করেন। ইফতার অনুষ্ঠানে আগত সিংহভাগ চিকিৎসক কড়তালি দিয়ে ওই নেতার বক্তব্যকে স্বাগত জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাচিপের একাধিক চিকিৎসক নেতাকর্মী বলেছেন, নানা অজুহাতে বর্তমান সভাপতি ও মহাসচিব স্বাচিপের ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন। শুধু কেন্দ্রীয় কমিটিই নয়, জেলা পর্যায়েও দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় তাদের পকেট কমিটির মাধ্যমে স্বাচিপের কার্যক্রম চলছে। গত ১২বছরে নির্বাচনের মাধ্যমে ১২ জন নতুন নেতাও নির্বাচিত হয়নি।

অথচ এ সময়ে অনেক ভাল চিকিৎসক তৈরী হয়েছে যারা পজিটিভ রাজনীতির মাধ্যমে স্বাচিপের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন কিন্তু নির্বাচন না হওয়ায় তাদের কাজে লাগানো যায়নি।

স্বাচিপের কেউ কেউ আবার বলেছেন, এক সময় বীরউত্তম সিআর দত্ত রোডের স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাতি জ্বালানোর মতো চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া না গেলেও আজ সারাদেশে স্বাচিপ চিকিৎসকের ছড়াছড়ি। নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি, বিদেশ সফর ইত্যাদি সুযোগসুবিধা পেতে অনেকেই নিজেদের প্রকৃত রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করে স্বাচিপ সদস্য হয়ে গেছেন।

ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা. বজলুল গণি ভুঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৭ সালের ওয়ান ইলিভেনের সরকার থেকে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দীর্ঘ আট বছর যাবত ড্যাব সমর্থিত চিকিৎসকদের যেভাবে চাকরিচ্যুতি, হয়রানি, পদায়ন ও প্রমোশন থেকে বঞ্চিত করার পাশাপাশি নির্যাতন-নিপীড়নের যে খড়গ নেমে এসেছে এতে সংগঠনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই রীতিমত দায় হয়ে পড়েছে।

ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে এম আজিজুল হকের কাছে ড্যাবের তেমন সাংগঠনিক কার্যক্রম চোখে না পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোজার মাসে সারাদেশে ইফতার পার্টি হয়েছে। ড্যাবের চিকিৎসকদের চাকরিচ্যুতি, হয়রানি ও নির্যাতন, পদায়ন ও প্রমোশন বঞ্চনার কথা শোনা গেলেও ড্যাবের কোন কর্মসূচি নেই কেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ড্যাব চিকিৎসক নেতাকর্মীরা সময়মতো ঠিকই আন্দোলনে নামবে।

সম্প্রতি জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক এম ইকবাল আর্সলান জানান, এ কথা সত্যি বহু বছর যাবত স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির কাউন্সিল অধিবেশন ও কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচন হচ্ছেনা। কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় দিতে না পারায় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের আয়োজন পিছিয়ে যায়। আগামী ২/৩মাসের মধ্যে স্বাচিপের কাউন্সিল অধিবেশন ও নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

তিনি বলেন, স্বাচিপ নিস্ক্রিয় এ অভিযোগ মোটেই সত্যি নয়। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে দেশের স্বাস্থ্যসেবার সার্বিক উন্নয়নে স্বাচিপের নেতাকর্মীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে যাচেছ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এমইউ/এআরএস