ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

অধিকার নয় মালিকের হাতেই শ্রমিকের ভাগ্য

মামুন আব্দুল্লাহ | প্রকাশিত: ১১:৩০ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

দেশে শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বহু কথা হয়। এ বিষয়ে আইনও রয়েছে। মে দিবস আসলে বিভিন্ন সভা সেমিনার, মিছিল মিটিং হয়। কিন্তু আদৌ কতটুকু প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শ্রমিকদের অধিকার? কর্পোরেট থেকে শুরু করে দিনমজুর সবাই মালিক কর্তৃক নিগৃহীত। মালিকের হাতেই শ্রমিকের ভবিষ্যৎ। সামান্য দোষেও চাকরি হারিয়ে বেকার হতে হয়। দিনমজুরদের অবস্থা আরও খারাপ। দিনের পর দিন প্রাপ্ত মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শ্রমিক কর্মচারীরা।

মহান মে দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মামুন আব্দুল্লাহ। তাদের কথায় এ বিষয়গুলোই বারবার ওঠে আসে।

রাজধানীর মিরপুরে এক গার্মেন্টস শ্রমিক আলিয়ার বলেন, কথা বললেই সমস্যা। চাকরি নিয়ে টানাটানি বেধে যেতে পারে। যে যত কথাই বলুক, চাকরি চলে গেলে কেউ চাকরি ফিরিয়ে দেবে না। মালিক পক্ষ চাইলেই ফ্যাক্টরি থেকে বের করে দিতে পারে। এখানে কারও কোনো কথা চলে না। বের হয়ে গেলে পাওনাও মেটায় না।

একই ধরনের কথা বলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শাওন হাসনাত। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, মালিকদের বেতন স্ট্রাকচার কিংবা পদবি সবই তারা বানান। এখানে শিক্ষাগত যোগ্যতা বা দক্ষতার বিষয় নেই। তাদের বানানো স্ট্রাকচারেই
চলতে হয়। বৈষম্য তো আছেই, এখানে ন্যায্য প্রাপ্তিটুকুও পাওয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি চাকরিতে কোনো নিশ্চয়তা নেই। এটাই এ দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা। জব চলে গেলে আরেকটা পাওয়া দুষ্কর। এ জন্য কাজ করতে বাধ্য। চলতে তো হবে?

শোষণ বা ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। দুঃখজনক হলেও সত্য স্বাধীনতার এত বছর পরও দেশের লাখ লাখ শ্রমিক এখনও অবহেলিত, নিপীড়িত। এদের বেশির ভাগ শ্রমিকই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। যাদের মধ্যে গার্মেন্টস, চিংড়ি খাত, চা-শিল্প, ধান প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, বিড়ি কারখানা, ইটভাটার শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায় নিয়োজিত শ্রমিক উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কৃষি শ্রমিক ও গৃহ শ্রমিক তো রয়েছেই।

এসব খাতের শ্রমিকদের বঞ্চনার আঙুল মালিকদের দিকেই। মালিকপক্ষের অধিক মুনাফা অর্জন, যথাযথ মজুরি না দেয়া,
বাসস্থান, পরিবহন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকা, সাপ্তাহিক ছুটি না দেয়া, বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত সময়ে কাজ, মাতৃত্বকালীন ছুটি না দেয়া প্রায় প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত সমস্যা। বিষয়গুলো নিয়ে যে কেউ কথা বলছেন না তা নয়। শ্রমিকদের ধারাবাহিক আন্দোলনে ২০০৬ সালে শ্রম আইন পাস হয়। কিন্তু তা কার্যকর হচ্ছে না।

এ প্রসঙ্গে রফতানি মূখী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্নধার তানজিমুর রহমান বলেন, শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি শুধু মালিকদের ওপর ফেলে দিলে হয় না। একজন উৎপাদকের পণ্য ক্রেতাও দায়ী। অনেকটা দায় সরকারের ওপরও বর্তায়।

যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, আগে যে পণ্য রফতানি করে ৪ ডলার পেতাম তা এখন কমে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ডলার পাই। অন্যদিকে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। সব ব্যয় মিটিয়ে টিকে থাকাই দায়। অনেক সময় শ্রমিকদের বেতন আটকে যায়। যেখানে অন্যান্য ভাতা দেয়া তো প্রশ্নই ওঠে না।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর প্রথম ১৯১৯ সালে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য আন্তর্জাতিক কিছু নীতিমালা গৃহীত হয়। আইএলও কর্তৃক গৃহীত কনভেনশনগুলোর বেশ কিছু বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন করলেও সে অনুযায়ী চলে না দেশের শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন থাকলেও তা কার্যকর হয় না। এটার কারণ সরকার আর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহেলা।

এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের সিনিয়র গবেষক ড. নাজনীন আহাম্মেদ বলেন, শ্রমিক অধিকার কোনো দয়া বা করুণা না। এটা একজন শ্রমিকের সাংবিধানিক ও আইনগত অধিকার। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। আমাদের বেশিরভাগ মানুষই তাদের অধিকার সম্পর্কে অবগত নন। জানেই না, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের কাছে তার কী অধিকার আছে। সে সম্পর্কে আগে সচেতন হতে হবে। এরপর ন্যায্য অধিকার পাওয়া যাবে, নতুবা নয়।

এমএ/আরএস/বিএ

আরও পড়ুন