ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

দিনরাত খেটেও চলে না সংসার

প্রকাশিত: ১১:১৭ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

ঘড়ির কাঁটায় চোখ রেখে ফ্যাক্টরিতে ঢুকতে হয়। ছুটিও মেলে ঠিক ঘড়ির কাঁটার মতো। সময়ের বাঁধনে বন্দী জীবন। সুতোয় সুতোয় গাঁথুনি দিয়ে সভ্যতা সাজায় তারা। রঙিন দুনিয়ার কারিগরও এরাই, অথচ নিজের জীবন রাঙাতে পারেন না। যেন বাতির নিচে অন্ধকার।

পোশাক শ্রমিক মোহাম্মদ হোসেন। কারখানায় কাজ কম তাই হচ্ছে না অভারটাইম। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। মনে মনে কষছে হিসাব। কীভাবে চলবে সংসার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আয়ের চেয়ে বেড়েছে ব্যয়। ফলে মাস শেষ না হতেই দুশ্চিন্তায় ভর করে হোসেনের। এভাবেই চলছে জীবন। যাচ্ছে মাস বছর।

রাজধানীর মুগদায় ইথিক্যাল গার্মেন্ট কর্মী হোসেন জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, এইচএসসি পাস করে অনার্সে ভর্তি হয়েছিলাম। নানা সমস্যায় আর পড়ালেখা হয়নি। অনেক কাজ খুঁজেছি কিন্তু পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে গার্মেন্টে কাজ করছি। এখানে বেতন অনেক কম। দিনরাত কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে না।

হোসেন বলেন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। মূল বেতন ৬ হাজার টাকা। অভারটাইমসহ (অতিরিক্ত সময়) মাসে শেষে সবমিলিয়ে কোনো মাসে ৭ হাজার আবার বেশি কাজ হলে ৮ হাজার টাকা বেতন পাই। ঘরভাড়া দেই সাড়ে তিন হাজার টাকা। বাকি টাকা দিয়ে খাবারসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। আর যে মাসে অভারটাইম কম হয় সেই মাসে সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়।

তরুণ এ পোশাক শ্রমিক বলেন, বেতন না বাড়লে অন্য কোনো পেশায় চলে যেতে হবে। কারণ যে টাকা পাই এ টাকা দিয়ে সংসারের খরচ চালানো কঠিন। এখন যেভাবে বেঁচে আছি, এটাকে জীবন বলে না।

স্বাভাবিক খরচের জন্য কত টাকা বেতন হওয়া উচিত জানতে চাইলে হোসেন বলেন, শ্রমিক নেতারা ১৬-১৮ হাজার দাবি করছে। আমার কথা জীবনযাত্রা ব্যয় বিবেচনা করে একটি গ্রহণযোগ্যে মজুরি গঠন করা। যা দিয়ে আমরা খেয়েপড়ে বেঁচে থাকতে পারি।

পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কত হওয়া উচিত এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশ করা গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি ২০২ মার্কিন ডলার বা ১৬ হাজার টাকার বেশি হওয়া উচিত। বর্তমানে ন্যূনতম মজুরি রয়েছে ৬৮ ডলার।

এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো প্রয়োজন। ইতোমধ্যে মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। কমিটি ৬ মাস পর রিপোর্ট দিবে। তারপরই তৈরি পোশাক খাতে মজুরি কাঠামো পুনর্নির্ধারণ হবে।

মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন মজুরি পুনঃগঠনের প্রস্তাব আসছে। এসব দাবি পর্যালোচনা করছি। সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করবো।

এর আগে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর। তিন হাজার টাকা মূল বেতন ধরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয়েছিল তখন। নতুন কাঠামোয় ওই বেতন তারা পাচ্ছেন ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে।
গত কয়েক বছরের মূল্যস্ফীতিতে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন হতে হবে ১৬ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সরকার গঠিত এ বোর্ডে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি রয়েছে। তাই কমিটি শ্রমিকদের চাহিদা ও মালিকদের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করে নতুন মজুরি গঠনের সিদ্ধান্ত নিবে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে মজুরি কত হওয়া উচিত জানতে চাইলে মালিকদের এ নেতা বলেন, যেহেতু একটি মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে, তাই এ বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যাবে না। সব পক্ষের সমন্বয়ে এ কমিটির সঠিক সিদ্ধান্ত নিবে বলে আশা করেন তিনি।

পোশাক শ্রমিকদের সংগঠন জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন সহিদ জাগো নিউজকে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা সেবা ও অন্যান্য খরচও লাগামহীন। সব মিলিয়ে একজন পোশাক শ্রমিক বর্তমানে যে টাকা বেতন পায় তা দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে। সব কিছু বিবেচনায় আমারা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে সর্বনিম্ন বেতন ১৬ হাজার টাকা করার দাবি করেছি। আমাদের এ দাবি ন্যায্য দাবি।

তিনি বলেন, আমরা যদি চাহিদা অনুযায়ী দাবি করতাম তাহলে সর্বনিম্ন বেতন প্রয়োজন ২০ হাজার টাকা। কিন্তু মালিকদের সক্ষমতাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। তাই মহান মে দিবসে আমাদের জোরলো দাবি থাকবে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির প্রদান করা। ইতোমধ্যে সর্বনিম্ন বেতন ১৬ হাজার টাকা করার জন্য মজুরি বোর্ডর চেয়ারম্যানের বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। আশা করছি, মজুরি বোর্ড আমাদের দাবি রাখবে।

এসআই/জেএইচ/বিএ

আরও পড়ুন