‘মৃত নবজাতক ঢামেকেই জন্মগ্রহণ করেছিল’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মৃত ঘোষিত সেই নবজাতক শিশুটি যে ঢামেক হাসপাতালেই জন্মগ্রহণ করেছিল সে ব্যাপারে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক বিদ্যুৎ কান্তি পালকে প্রধান করে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার নবজাতকের মা শারমিন, গাইনি অস্ত্রোপচার কক্ষে থাকা দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক ও দুজন নার্সের জবানবন্দি নিয়েছেন।
ওই সময় ওটিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা তদন্ত কমিটির সদস্যেদের জানিয়েছেন, অন্যান্য নবজাতক জন্মের পর তারা যেমন নবজাতককে নেড়ে চেড়ে দেখেন সেই রকমভাবে দেখেছেন। তবে কেউই শিশুটির মধ্যে প্রাণ থাকার কোনো লক্ষণই দেখতে পাননি বলে জানিয়েছেন। তবে তদন্ত কমিটির সদস্যরা চিকিৎসক ও নার্সদের জবানবন্দি পুরোপুরি বিশ্বাস না করে অস্ত্রোপচার কক্ষে দায়িত্বে কোনো অবহেলা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন। আগামীকালও তদন্ত কার্য়ক্রম চলবে।
প্রাথমিক তদন্তে নবজাতক শিশুটি যে ঢামেকে জন্মেছে তার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে শতভাগ প্রমাণ পেতে তারা আজিমপুর কবরস্থান, আজিমপুর ম্যাটারনিটি ও ঢাকা শিশু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির একজন সদস্য মঙ্গলবার রাতে জাগো নিউজকে এ সব তথ্য জানান।
অপরিণত বয়সে (২৮ সপ্তাহ) মাত্র এক হাজার গ্রাম ওজন নিয়ে জন্ম নেয়া নবজাতকটি দাফনের জন্য গোসল করানোর সময় শ্বাস নেয় ও হাত পা নেড়ে বেঁচে থাকার জানান দিলেও শেষ পর্য়ন্ত প্রাণে বাঁচেনি। ভূমিষ্ঠের পর (সকাল ৮টায়) টানা সাড়ে ১৭ ঘণ্টা যমদূতের সঙ্গে লড়াই করে সোমবার রাত ১টা ৩৩ মিনিটে ঢাকা শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যায়।
নবজাতকের এক আত্নীয় জানান, নবজাতকের মা এখনও সুস্থ না হওয়ায় তাকে সন্তানের মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়নি। তারা বলেন, নবজাতক নিজে মরে তাদের বাঁচিয়েছে। এ নবজাতক শারমিনের গর্ভেই জন্ম নেয় তার প্রমাণ ও সত্যতা যাচাইয়ে রীতিমতো পুলিশি জেরার মতো জেরা করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা শিশু হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ বলেন, জন্মের পর শিশুটির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় দুর্ভাগ্যবশত পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যথাযথ ব্যবস্থা নিলে হয়তো শিশুটি বাঁচতে পারতো।
চিকিৎসকদের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাফিলতি, ভুল ও ধারণা বিষয়গুলো ভিন্ন।
তিনি জানান, শিশুটির মা ১৯ এপ্রিল ধামরাইয়ের একটি ক্লিনিকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। তারপর গত ২১ তারিখ রাতে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন। শিশুটির মা ধারণা করছিলেন, তার বাচ্চা পেটে মারা গেছে। শিশুটি অপরিপক্ব হওয়ায় পেটের ভেতরে তার শ্বাস-প্রশ্বাসও ধরা পড়ছিল না। ২৩ এপ্রিল সকালে ডেলিভারি হওয়ার পর শিশুটির ওজন ও হার্টবিট এতো কম ছিল, যা বুঝতে কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। পরে কবর দেয়ার সময় পানি পেয়ে শিশুটি নড়ে ওঠে।
‘ওখানকার চিকিৎসকদের যেহেতু শিশুটি জীবিত বলে ধারণা হয়নি, তাই পরবর্তী চিন্তাও হয়নি। দুর্ভাগ্যবশত একটা গ্যাপ হয়ে গেছে। পূর্ব ধারণা ঠিক হলে ডেলিভারিটা ওয়েল অর্গানাইজড হতো। জন্মের পর শিশুটির যে অবস্থা ছিল, তাতে রেজাল্ট হয়তো ভালো হতো না, তবে ভিন্ন হতেও পারতো।
কমিটির প্রধান ডা. বিদ্যুৎ কান্তি পালের কাছে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত চলছে। তিনিসহ কমিটির সদস্য গাইনি ও নবজাতক বিশেষজ্ঞরা সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। আগামীকালও আরও কিছু কাজ করবেন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে না চাইলেও এ প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নবজাতক শিশুটি ঢামেকে জন্মগ্রহণ করেছে তার প্রমাণ মিলেছে। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা আজিমপুর ম্যাটার্নিটি ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলবেন।
এমইউ/ এএইচ/পিআর