জীবন বীমার গ্রাহক কত, নেই সঠিক পরিসংখ্যান
পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তির হঠাৎ মৃত্যুতে নির্ভরশীলদের ভবিষ্যৎ যাতে অনিশ্চয়তার মধ্যে না পড়ে সে জন্য জীবন বীমা পলিসি গ্রহণ অপরিহার্য। উন্নত বিশ্বে এ বীমা খুবই জনপ্রিয়। প্রায় সিংহভাগ নাগরিকই এ পলিসির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও এ বীমা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
১৬ কোটি মানুষের এ দেশে কতজনের জীবন বীমা করা আছে তার কোনো পরিসংখ্যান তৈরি হয়নি। তবে বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে জমা দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে দুই কোটির কিছু বেশি মানুষের জীবন বীমা করা আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মোকাবেলায় মানুষ বীমা করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানি বীমা দাবির অর্থ পরিশোধে গড়িমসিসহ গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। যে কারণে বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কম। ফলে দেশের বড় অংশই বীমার আওতার বাইরে। তবে সঠিক সময়ে সঠিকভাবে গ্রাহকরা বীমার অর্থ পেলে মানুষ বীমা করতে উৎসাহিত হবে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে সার্বিক অর্থনীতিতে।
দেশে সরকারি-বেসরকারি এবং দেশি-বিদেশি মালিকানায় ৩২টি কোম্পানি জীবন বীমা ব্যবসা করছে। এর মধ্যে দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানায় রয়েছে একটি কোম্পানি এবং একটি কোম্পানি রয়েছে সম্পূর্ণ বিদেশি মালিকানাধীন। সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি রয়েছে একটি। এ বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে ২৮টি কোম্পানিতে থাকা গ্রাহকসংখ্যার তথ্য জাগো নিউজের হাতে এসেছে। তথ্য পাওয়া যায়নি বায়রা লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ এবং প্রগ্রেসিভ লাইফের।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২৮টি কোম্পানিতে দুই কোটি আট লাখ ৬০ হাজার ৬৪৩ গ্রাহকের বীমা পলিসি রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি কোম্পানিতে আছে প্রায় এক কোটি ৬৩ লাখ গ্রাহকের জীবন বীমা। তবে এই সংখ্যক মানুষের জীবন বীমা করা আছে, এটা বলা যাবে না। কারণ একই ব্যক্তির একাধিক বীমা থাকতে পারে।
তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে সবার ওপরে রয়েছে পপুলার লাইফ। আইডিআরএ কোম্পানিটির যে তথ্য দিয়েছে, সেই তথ্য অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা ৫৩ লাখ ২৩ হাজার ১৩২ জন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফারইস্ট ইসলামী লাইফের গ্রাহকসংখ্যা ২৮ লাখ ২২ হাজার ৪০৯ জন। তৃতীয় স্থানে থাকা মেঘনা লাইফের গ্রাহকসংখ্যা ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৫১১ জন।
১০ লাখের ওপরে গ্রাহক থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে- ডেল্টা লাইফে ২৩ লাখ ৭৬ হাজার ৮৮০, ন্যাশনাল লাইফে ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪৯ এবং মেটলাইফে ১২ লাখ ৯২ হাজার ৫৯২ গ্রাহকের বীমা আছে।
এছাড়া সন্ধানী লাইফে পাঁচ লাখ ৫৯ হাজার ৯৪০, প্রাইম ইসলামী লাইফে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ২৯৫, সানলাইফে পাঁচ লাখ পাঁচ হাজার ৮৪৪, রূপালী লাইফে চার লাখ ৯৪ হাজার ৩৮৮, জীবন বীমা কর্পোরেশনে তিন লাখ ৯৭ হাজার ১২৫, হোমল্যান্ড লাইফে তিন লাখ ৫০ হাজার ২১২, সানফ্লাওয়ার লাইফে দুই লাখ ৭১ হাজার ৯৯৩ এবং গোল্ডেন লাইফে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৪৩৫ গ্রাহকের বীমা রয়েছে।
বাকি কোম্পানিগুলোর গ্রাহকসংখ্যা এককভাবে এক লাখের কম। এর মধ্যে- ট্রাস্ট লাইফে ৩৫ হাজার ৪৮৮, বেস্ট লাইফে ২৭ হাজার ২৬৮, সোনালি লাইফে ২৫ হাজার ৬৫৭, জেনিথ লাইফে ২৪ হাজার ৪৬৫, যমুনা লাইফে ২০ হাজার ৩৮৯, প্রোটেক্টিভ লাইফে ১২ হাজার ১৭৮, আলফা ইসলামী লাইফে আট হাজার ১৯৫, স্বদেশ লাইফে ছয় হাজার ১৮৪, মার্কেন্টাইল লাইফে চার হাজার ৭১৯, গার্ডিয়ান লাইফে তিন হাজার ৫৫৪ এবং এনআরবি গ্লোবাল লাইফে দুই হাজার ৩৪ গ্রাহকের বীমা আছে।
আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারি এ প্রসঙ্গে বলেন, বীমাকে জনপ্রিয় করতে আমরা বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। আগের নিয়ন্ত্রক সংস্থার কেউ বীমা কোম্পানির দাবি পরিশোধের অনুষ্ঠানে যেতেন না। এখন আমি নিজে এবং আমাদের সদস্যরা উপস্থিত থেকে বিভিন্ন কোম্পানির বীমাগ্রাহকদের দাবির টাকা পরিশোধ করছি। এতে কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের দাবি পরিশোধে উৎসাহিত হচ্ছে।
মেঘনা লাইফের চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এক সময় মানুষের ধারণা ছিল বীমা খাত মানেই চোর-বাটপারের জায়গা। বীমা করলে অর্থ পাওয়া যায় না- এমন ধারণা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। তবে এখন সেই অবস্থা থেকে বীমা খাত বেরিয়ে আসছে। ভালো এবং মেধাবীরা বীমা খাতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। তবে এটা সত্য বহির্বিশ্বের মতো আমাদের দেশে বীমা খাত এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।
এমএএস/এমএআর/আরআইপি