ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

স্থানীয় নির্বাচনে জাতীয় প্রভাব চায় না তৃণমূল আ.লীগ

আমানউল্লাহ আমান | প্রকাশিত: ০৯:৩৭ এএম, ১৭ মার্চ ২০১৮

আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন জাতীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। তারা মনে করেন, বর্তমান সরকার স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। সেটি বিবেচনায় স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোট হওয়া উচিত।

দলটির তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, সর্বশেষ ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় রাজনীতির প্রভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হন। স্থানীয় পর্যায়ের সিটি কর্পোরেশনগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়ন করলেও তার প্রভাব ভোটে পাওয়া যায়নি। তাই উন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।

গত ৩ মার্চ খুলনায় ৪৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৫২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে ওই ১০০টি উন্নয়ন প্রকল্প উপহার দেয়া হয় খুলনাবাসীকে।

খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক জাগো নিউজকে বলেন, গত (সিটি) নির্বাচনের কয়েক দিন আগে জাতীয়ভাবে হেফাজতে ইসলামের একটা ঘটনা ঘটে। যার ইফেক্ট সারা বাংলাদেশে পড়ে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হলেও এখানে প্রার্থী একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যিনি প্রার্থী থাকেন তাকে বিভিন্নভাবে ভোট কালেকশন করতে হয়। এ জায়গায় সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে স্থানীয় বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর সরকারি মাদরাসা মাঠে ২১টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ১৩টি প্রকল্পের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার আগে আটটি নতুন থানাসহ ৩৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করেন তিনি।

ওই জনসভায় সভাপতির বক্তব্যে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীর মানুষ তখন বলেছিলেন উন্নয়ন দেখে আমাকে আরেকবার ভোট দিতে চান। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, সে কথা তারা রাখে নাই। জাতীয় পর্যায়ে কী হয়েছিল, তার সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। তারপরও আমাকে-সহ আরও তিন সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি ভোগ করতে হয়।

রাজশাহীবাসীর উদ্দেশ্যে লিটন বলেন, আমি হেরে যাওয়ার পরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ বাদ দেন নাই, এ জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনারা যদি এ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চান তাহলে সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ছয়টি আসনে নৌকাকে ভোট দিয়ে প্রমাণ করেন আপনারা উন্নয়নের সঙ্গে আছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এ মেয়র বলেন, নেত্রী তো দুই হাত খুলে রেখেছেন দেবার জন্য। আপনারা যদি সুযোগ না দেন তাহলে তিনি কাকে দেবেন? ভুল করলে ভুলের মাশুল আমাদেরই দিতে হবে। দেশ থেমে থাকবে না, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে গেছে। এ দেশের উন্নয়ন কেউ থামাতে পারবে না।

রাজশাহীর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে ৪২টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর মিলিয়ে ৭৫টি উন্নয়ন প্রকল্প উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পরে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন তিনি।

গত ৩০ জানুয়ারি সিলেটে ২০টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে নতুন ১৮টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে সিলেট জেলার সরকারি আলীয় মাদরাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভোট চাওয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী যাত্রা শুরু করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরেও জনসভা করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দলটির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে বর্তমান সরকার যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে, তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় আসন্ন নির্বাচনে মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

এদিকে গত বুধবার (১৪ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, আদালতে কোনো মামলা-মোকদ্দমা না থাকলে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আইনের বাধ্যবাধকতা আছে। আমরা যদি নির্বাচন না করি তবে আইন পরিবর্তন করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা চিন্তা করছি বাধাটা কোথা থেকে আসতে পারে। আমরা ডিভিশনাল কমিশনারদের কাছে জানতে চেয়েছি, এসব সিটি করপোরেশনে কোনো মামলা-মোকদ্দমা আছে কিনা। নির্বাচনী তফসিল নিয়েই হোক, ভোটার লিস্ট নিয়েই হোক, কেউ যদি মামলা-মোকদ্দমা করে থাকে তবে তো আমরা নির্বাচন করতে পারব না। আমরা এ রিপোর্ট পেলে নির্বাচন কমিশনকে বলব তাদের সুবিধা মতো সময়ে নির্বাচন করতে। তারা যদি পারে একসঙ্গে পাঁচটাতেই করুক, তারা যদি পর্যায়ক্রমে করতে চায় আমাদের তো কোনো আপত্তি থাকবে না। বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ৭/৮ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পেয়ে যাবেন বলেও জানান মন্ত্রী।

গত বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) রাজশাহীর পবা উপজেলার দামকুড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্মার্টকার্ড বিতরণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা জানান, আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চিন্তা-ভাবনা তাদের।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি। ওই পাঁচ সিটির ভোট নিয়ে সরকারের মতামত চেয়ে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে সীমানা, ওয়ার্ড বিভক্তি, আদালতের আদেশ প্রতিপালনসহ নির্বাচনের বিষয়ে সব অগ্রগতিও স্থানীয় সরকার বিভাগের কাছে জানতে চেয়েছে ইসি।

সর্বশেষ খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয় ২০১৩ সালের ১৫ জুন। গাজীপুরের নির্বাচন হয় একই বছরের ৬ জুলাই।

এইউএ/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন