সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনী প্রচার জমজমাট
জমে উঠেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) নির্বাচনী প্রচার। ২১ ও ২২ মার্চ দুই দিন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। সুপ্রিম কোর্ট চত্বর ও আইনজীবী সমিতি ভবন এলাকায় প্যানেলের পক্ষে চলছে জমজমাট প্রচারণা। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের সমর্থন ও প্রচারণায় জমে উঠেছে আদালত প্রাঙ্গণ। সবার মধ্যেই বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ।
নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে সরকার সমর্থক সাদা প্যানেল এবং বিএনপি জামায়াত সমর্থক নীল প্যানেল। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে দুইজন, সদস্য পদের জন্য একজনসহ মোট ৩২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থী ও প্যানেলের পক্ষে ভোটারদের কাছে লিফলেট বিতরণ, মোবাইলে কল ও এসএমএস প্রদান এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জমজমাট প্রচারণা চলছে।
কোর্টের আইনজীবী সমিতিতে প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনা করছেন। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দল বিএনপি-জামায়াত তাদের প্যানেলের প্রার্থীদের পরিচিতি অনুষ্ঠান করেছে। সেখানে আইনজীবীদের কাছে নিজেদের দলের প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য ভোট চাওয়া হয়েছে। এছাড়া লাইব্রেরি, হলরুম ও চেম্বারে গিয়েও ভোট প্রার্থনা ও প্রচার চালাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও নির্বাচনে মূল লড়াই হবে সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও সরকারবিরোধী বিএনপি-জামায়াত সমর্থক জাতীয়তাবাদী ঐক্য জোটের মধ্যে। প্রার্থী এবং সমর্থক আইনজীবীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এবার বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা মরিয়া সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে নিজ দলের অবস্থান ধরে রাখতে। আর হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধার করতে আপ্রাণ চেষ্টায় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও তাদের মিত্ররা।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় আইনজীবীদের নিয়ে সভা ও বৈঠক করেছেন। তাতে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের মাধ্যমে নিজেদের অনুকূলে ফলাফল আনার আহ্বান জানিয়েছেন। কার প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ২৩ মার্চ পর্যন্ত। তবে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া জেলে থাকায় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করার পর তাদের প্রার্থিতা ঠিক করেছেন দলটি। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষিত প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য চূড়ান্ত করা হয়। তবে বিএনপির আরও দুটি বিদ্রোহী প্যানেল ঘোষণা করা হলেও একটি প্যানেল মনোনয়ন দাখিল করেনি। প্যানেল ঘোষণা করে সরে পড়লেও শাহ মো. খসরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন অপর প্যানেল মনোনয়ন কিনেছেন।
২০১৮-১৯ সালের জন্য ১৪ সদস্যের কার্যকরী কমিটি গঠনের এই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী উভয় প্যানেল। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা বলেন, এবারের নির্বাচনে অতীতের যেকোনো বারের চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী। অন্য দিকে জয়ের ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্যানেলও সমানভাবে আশাবাদী। জয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ তাদের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চায়। এ ব্যাপারে আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একটি সেবামূলক সংগঠন। সে কারণে সাধারণ আইনজীবীরা এবারের নির্বাচনে সমন্বয় পরিষদ সমর্থিত প্যানেলকে নির্বাচিত করে সমিতির হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
গত নির্বাচনে সর্বোচ্চ পদ সভাপতি ও সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ ৮টি পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ঐক্য এবং সহ-সভাপতিসহ অন্যান্য ৬টি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্যানেল জয় লাভ করে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার) সুপারিনটেনডেন্ট (তত্ত্বাবধায়ক) নিমেষ চন্দ্র জাগো নিউজকে জানান, এবার মোট ৬ হাজার ২ শ’১২ জন আইনজীবী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্যানেল ছাড়াও স্বতন্ত্রভাবে সভাপতি পদে দুইজন এবং সম্পাদক পদে একজন এবং সদস্য পদে একজন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তিনি জানান, এ ওয়াই মশিহুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে সভাপতি ও সম্পাদকের নেতৃত্বে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আইনজীবীরা। প্রার্থীদের ব্যক্তিগত পরিচিতি, বারের অতীতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, অবদান এবং নির্বাচনে জয়ী হলে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির লিফলেট বিতরণ করতে দেখা গেছে প্রার্থী ও সমর্থকদের। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভোটারদের মন জয় করতে নানা লেখা ও প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। সর্বত্রই যেন উৎসবমুখর পরিবেশ। যদিও নির্বাচনী প্রচারের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সরকার তথা আওয়ামী লীগ সমর্থিত (বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ) সাদা প্যানেলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। শেখ মো. মোরশেদকে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। বিএনপি সমর্থিত (জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য) নীল প্যানেলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মো. জয়নুল আবেদীন। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মো. গোলাম রহমান ভূঁইয়া ও গোলাম মস্তুফা এবং সম্পাদক পদে এ. এম. মাহবুবব উদ্দিন খোকনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ওই দুই প্যানেলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অ্যাডভোকেট শাহ মো. খসরুজ্জামান ও ড. ইউনুছ আলী আকন্দ, সম্পাদক পদে আছেন আবুল বাশার ও সদস্য পদে তপন কান্তি দাস।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নির্বাচন প্রসঙ্গে বলেন, আইনজীবীদের পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছি। আশা করি এবারের নির্বাচনে বিপুল ভোটে আমরা জয়ী হব। জয়ী হলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের সব সমস্যা সমাধান করা হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্ট সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি চিন্তা করে আইনজীবীরা আমাদের পূর্ণ প্যানেলকে বিজয়ী করবেন বলে প্রত্যাশা করছি। আমি বিজয়ী হলে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের নতুন অ্যানেক্স ভবন ১২ তলা করা হবে।
সাদা প্যানেল থেকে সম্পাদক পদে নির্বাচন করছেন শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। তিনি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ আইনজীবী পরিষদের সদস্য। তিনি এর আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। অপরদিকে সুপ্রিম কোর্ট বারের বর্তমান সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাহী কমিটির সদস্য, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব। সুপ্রিম কোর্ট বারের পাঁচ বারের সম্পাদক তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রিম কোর্টের একাধিক আইনজীবী জানান, এবারের নির্বাচনে কোন প্যানেল বিজয়ী হবে তা বলা কঠিন। কেউ যেন কারোর চেয়ে কম নয়, হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে।
এফএইচ/ওআর/এমএস