আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি
মাহবুবে আলম, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল)। উচ্চ আদালতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার আপিল, রাষ্ট্রপক্ষের প্রস্তুতি, ষোড়শ সংশোধনী, নিম্ন আদালতের বিচারকদের আচরণবিধিসহ বিচার বিভাগের নানা বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ভূমিকা ও পদত্যাগ প্রসঙ্গেও।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন করবেন বলেও অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু। তিন পর্বের শেষটি থাকছে আজ।
জাগো নিউজ : বিচারপতি সংকটে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি নিয়োগের বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে?
মাহবুবে আলম : এটি আইন মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার।
জাগো নিউজ : বিচারক সংকটে মামলার জট তো বাড়ছে…
মাহবুবে আলম : আমার তা মনে হয় না। সুপ্রিম কোর্ট স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
জাগো নিউজ : আপিল বিভাগে মাত্র চার বিচারপতি রয়েছেন। কতজন নিয়োগের প্রত্যাশা করছেন?
মাহবুবে আলম : আমি আসলে সংখ্যায় বিশ্বাস করি না। মানসম্পন্ন হলেই কাজের গতি বাড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের আপিল বিভাগে নয়জন বিচারপতি রয়েছেন। সংখ্যাটি আসলে বিরাট ব্যাপার নয়। কর্মদক্ষতা না থাকলে ২০ জন নিয়োগ দিয়েও গতি আসে না।
জাগো নিউজ : দুই বিচারপতি পদত্যাগ করলেন অল্পদিনের ব্যবধানে। এ নিয়ে আপনার অভিমত কী?
মাহবুবে আলম : সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগ ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। অন্য বিচারপতিরা তো তার সঙ্গে বসতে চাইলেন না। আর আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞা তো ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেন। তিনি হয়তো সম্মানবোধের প্রশ্নে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমি মনে করি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন হতে পারে। জুনিয়র কেউ উপরে উঠে গেলে সিনিয়রের সরে যাওয়াই উত্তম।
জাগো নিউজ : পদত্যাগের এ ঘটনা জনগণ কীভাবে নিচ্ছে বলে মনে করেন?
মাহবুবে আলম : সরকার যে কাউকে প্রধান বিচারপতি করতে পারে। পৃথিবীর অন্য দেশেও হয়। ব্যক্তিগত অনুভূতির প্রশ্নে যে কেউ পদত্যাগ করতেই পারেন। জনগণ বিব্রত হবে এমন কিছু ঘটেনি।
জাগো নিউজ : নতুন করে বেশ কয়েকজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ পেলেন। আগের অনেকেই বাদ পড়লেন। এখানে অযোগ্যতার বিষয় ছিল কি?
মাহবুবে আলম : এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
জাগো নিউজ : বেশ কয়েকজন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচারে সাজা হলো। এখন বিচারিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়লো কিনা?
মাহবুবে আলম : ঠিক তা নয়। মামলা তো লিস্টে আছে।
জাগো নিউজ : আগের মতো গতি নেই বলে অনেকে মনে করছেন।
মাহবুবে আলম : যুদ্ধাপরাধ বিচারের মামলার জট কিছুটা আপিল বিভাগে আছে।
জাগো নিউজ : কেন এ জট?
মাহবুবে আলম : প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্ত এখানে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ।
জাগো নিউজ : মামলার জটে রাজনৈতিক কারণ আছে কি?
মাহবুবে আলম : আমি তা মনে করি না।
জাগো নিউজ : নির্বাচনী গণসংযোগ করছেন এলাকায়। অভিব্যক্তি জানতে চাই?
মাহবুবে আলম : আমি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। এলাকায় গণসংযোগও চালাচ্ছি। আমি ঠিক ভিন্নভাবে এটি চলাচ্ছি। স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বইপত্র বিতরণ করছি। স্বাধীনতার দলিলপত্র দিয়েছি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে।
জাগো নিউজ : দলের সর্বোচ্চ জায়গা থেকে ইঙ্গিত পেয়েই কি এমন গণসংযোগ?
মাহবুবে আলম : নিজের ইচ্ছা থেকেই নির্বাচন করব বলে আশা প্রকাশ করেছি। সংবিধানের ওপর পড়াশোনা করেছি। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। এ অভিজ্ঞতা নিয়ে সংসদে যেতে পারলে ভালো কিছু দিতে পারব বলে মনে করি।
জাগো নিউজ : জনগণের সাড়া পাচ্ছেন কেমন?
মাহবুবে আলম : ভালো সাড়া পাচ্ছি। সর্বস্তরের মানুষকে কাছে পাচ্ছি। মানুষ আমাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসিত বলেও বিশ্বাস করি। মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে অন্তত তাই বুঝতে পারছি। এবার এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করতে গিয়ে অনেকটা আশাবাদী হয়েছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আমিও তৃপ্ত।
জাগো নিউজ : দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমর্থন পাচ্ছেন কতটুকু?
মাহবুবে আলম : আমাদের রাজনীতির একটি ধারা হচ্ছে, দায়িত্ব থাকা সংসদ সদস্যরা নতুনদের মানতে চান না। আমি দেখেছি, স্থানীয় নেতারা আমার কাছে যেন না আসতে পারেন, সে জন্য সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকে চাপ থাকে।
এমন চাপ থাকা সত্ত্বেও নেতারা আমার পক্ষে কাজ করছেন। সমাজের বিশিষ্টজনরা আমাকে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছেন।
জাগো নিউজ : আপনি আশাবাদী?
মাহবুবে আলম : আশা নিয়েই তো পথ চলছি। আমার বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ তুলতে পারবে না বলে বিশ্বাস। প্রায় এক দশক হলো আমি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছি। কেউ এক পয়সার দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারবে না। এ কারণে আমি জনগণের কাছে ক্লিন ইমেজ নিয়ে যেতে পারব।
দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের কারণে রাষ্ট্রের অনেক আইনি কাজে সহায়তার সুযোগ হয়েছে। যা সরকার এবং দলের জন্যই ভাবমূর্তি বাড়িয়েছে বলে মনে করি। এ বিবেচনায় আমি দলের কাছে বিবেচ্য হতেই পারি। দল থেকে মূল্যায়িত হলে জনগণও আমাকে সমর্থন দেবে বলে বিশ্বাস রাখি।
এএসএস/এমএআর/জেআইএম