বাধা ডিঙিয়ে সাফল্য আনতে হবে
সফল নারী উদ্যোক্তা মনোয়ারা হাকিম আলী। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক ও চট্টগ্রাম উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বর্তমানে জেনেটিকা লিমিটেড, ইন্ট্রাকো সিএনজিসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি ইন্ট্রাকো গ্রুপ ও আল-মোস্তাফা ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, হোটেল আগ্রাবাদ, ট্যুরিজম ইন্টারন্যাশনাল, বাটারফ্লাই পার্ক লিমিডেট, আলট্রা ফার্মা লিমিটেড, ট্র্যাভেল শপের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। মেট্রিক সেলুলার ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস এবং মদিনা ইনডেন্টিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালকও তিনি। ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া মনোয়ারা হাকিম আলী এখন দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত নারী উদ্যোক্তাদের একজন। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাগো নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিজের সাফল্য এবং দেশের নারীদের নিয়ে কথা বলেছেন মনোয়ারা হাকিম আলী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম।
জাগো নিউজ : দেশে নারীদের উন্নয়নের বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
মনোয়ারা হাকিম আলী : একসময় নারীদের উন্নয়নের প্রধান বাধা ছিল নিজ পরিবার। অর্থাৎ ঘর থেকেই বাধা আসত। এখন দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। সমজব্যবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নারীরা ইচ্ছে করলেই কাজ করতে পারে। উদ্যোক্তা হতে পারে। সরকারও নারীসহায়ক বেশকিছু নীতি গ্রহণ করেছে। নারীর অগ্রযাত্রায় সহযোগিতা করছে। এখন সামনে যাওয়ার সুযোগ এসেছে। আমাদের তা কাজে লাগাতে হবে। নিজের অবস্থান থেকে এগিয়ে যেতে হবে। শিক্ষা ও কর্মে দক্ষ হয়ে সমাজে নিজের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
জাগো নিউজ : নারীদের কাজে প্রতিবন্ধকতা কী কী?
মনোয়ারা হাকিম আলী : প্রতিবন্ধকতা তো আছেই। তবে প্রতিবন্ধকতা বলে বসে থাকলে চলবে না। সবক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ থাকবে, সেগুলো মোকাবেলা করেই সামনে এগোতে হয়। শুধু নারী নয় সবার ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো প্রতিবন্ধকতা আছে। আর এটা থাকবেই। যে জিনিস সহজে পাওয়া যায় কোনো বাধা থাকে না, ওই পাওয়ায় তৃপ্তিও পাওয়া যায় না। তাই জীবনে কিছু করতে হলে বাধা আসবেই। সেই বাধা ডিঙিয়ে সামনে যেতে হবে। প্রতিবন্ধকতার নামে নারীদের ঘরে বসে থাকলে হবে না। ইচ্ছাশক্তি থাকলে কেউ আটকিয়ে রাখতে পারে না, যারা বাধা ডিঙিয়ে সামনে এসেছে তারাই সফল হয়েছে।
‘সবক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ থাকবে, সেগুলো মোকাবেলা করেই সামনে এগোতে হয়। তৃণমূল থেকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আজ এ পর্যায়ে এসেছি। আমার চলার পথ অন্যরা পরিষ্কার করে দেবে না। একজন নারীর চলার পথে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আছে। সব বাধা অতিক্রম করেই সফলতার শীর্ষে আসতে হয়। আর এখানেই নারীদের সার্থকতা।’
জাগো নিউজ : নারীর অগ্রযাত্রায় আপনার প্রত্যাশা কী?
মনোয়ারা হাকিম আলী : প্রত্যাশা অনেক। কারণ নারীরা এভারেস্ট জয় করতে পারে। পুরুষদের পাশাপাশি ফুটবল, ক্রিকেটে জয়ী হতে পারে। এভাবে আমাদের সবকিছুতেই জিততে হবে। তাই নারীরা ঘরে বসে থাকলে চলবে না, জগৎ জয় করতে হবে। শিক্ষা, কর্ম, দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে নিজেদের সম্মানজনক অবস্থান তৈরি করতে হবে। সবক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে আসবে। কারও বোঝা হয়ে থাকবে না। এখন নারীরা শিক্ষার ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে। অর্থনীতিতে ও শিল্পায়নেও অংশগ্রহণ বাড়াবে। উদ্যোক্তা হয়ে নিজেরা প্রতিষ্ঠিত হবে। এটা করতে পারলেই সমাজ ও দেশ নারীদের মূল্যায়ন করবে।
জাগো নিউজ : কীভাবে সফল নারী উদ্যোক্তা হলেন?
মনোয়ারা হাকিম আলী : আমি যে সমাজে বেড়ে ওঠেছি সেই সামাজিক প্রেক্ষাপট কোনোভাবেই নারীদের ব্যবসার অনুকূলে ছিল না। নানা প্রতিবন্ধকতা নারীদের কর্মক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করত। আমার জীবনে অনেক বাধা ছিল। ঘর থেকে সমাজ সব জায়গায়ই। তবে যখন যে কাজটি করতে চেয়েছি তখন সেটিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। আমার ইচ্ছে ছিল উদ্যোক্তা হব। সেই ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজ আমি উদ্যোক্তা হয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে সফলতাও পেয়েছি। যখন বাধা এসেছিল তখন বসে থাকলে আর সফল হতে পারতাম না।
জাগো নিউজ : বর্তমান নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে কী কী করা উচিত।
মনোয়ারা হাকিম আলী : নারীর কর্মপরিবেশ শতভাগ নারীবান্ধব হয়নি। তবে কর্মমুখী নারীদের নিয়ে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি আগের তুলনায় অনেক পাল্টেছে। সরকারও এক্ষেত্রে ইতিবাচক। নারীদের বিষয়ে সমাজব্যবস্থার যে পরিবর্তন এসেছে তা অব্যাহত রাখতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে নারীরা পিছিয়ে আছে সেখানে সরকারের সহযোগিতা করতে হবে। উদ্যোক্তা হওয়ার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন বাধা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করা, সহনশীল অবস্থা তৈরি করে সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্র সহনশীল হলেই এগিয়ে যাবে নারীরা।
‘এখনও নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ নিতে নানান প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয়। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। আর সরকারের উচিত জেলা, উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলের উদ্যোক্তা বানাতে নারীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা।’
জাগো নিউজ : ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মনোয়ারা হাকিম আলী : আপনাকেও ধন্যবাদ।
এসআই/জেডএ/জেআইএম