তিন মাস পরপর মশার জরিপ করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর
মশার ওপর কঠোর নজরদারি রাখছে স্বাস্থ্য অধিদফতর! মশাবাহিত বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে রাজধানীবাসীদের মুক্ত রাখতে প্রতি তিন মাস পরপর বিভিন্ন প্রজাতির মশার ওপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জরিপের পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টিতেও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেবে অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ (সিডিসি) শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি মশার উপদ্রব বেড়েছে। মশাবাহিত রোগব্যাধি থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করতে আমাদের নজরদারি রয়েছে। এখন থেকে প্রতি তিন মাস পরপর মশার ওপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ইতোমধ্যে মশার ওপর দুই দফায় জরিপ চালানো হয়েছে। এতে কোন প্রজাতির মশার উপদ্রব বেশি তা নির্ণয় করা হচ্ছে। এ জরিপ প্রতিবেদন দু-তিন দিনের মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে পারেন।
কী কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে জানতে চাইলে ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, প্রকৃত কারণ রোগতত্ত্ববিদরাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তনও বহুলাংশে দায়ী। অার যেসব কারণে এডিসসহ বিভিন্ন মশার জম্ম হয়- যেমন রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা, ভাঙা টিনের পাত্রে, পরিত্যক্ত টায়ারে, এয়ারকন্ডিশনে, ফুলদানিতে, ডাব-নারকেলের খোসা অথবা কোমল পানীয়ের ক্যানে জমে থাকা পানিতে এবং ছোট্ট জলাশয়ে জন্ম নেয় এডিস মশা। এসব বিষয়ে নগরবাসীদের আরও সতর্ক হতে হবে।
অধ্যাপক তাহমিনা বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব প্রধানত ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের হলেও এক্ষেত্রে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের গণ্যমান্যদের এগিয়ে আসতে হবে।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে গত ১১-২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডের ১০০টি সাইটে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াবাহী এডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র বিষয়ে জরিপ পরিচালিত হয়। জরিপকারীরা ১০০টি প্রতি ওয়ার্ড/সাইটের ২০টি করে হোল্ডিংয়ে (দেয়ালের ভেতরে ও ঘরের চারপাশে) মোট দুই হাজার হোল্ডিংয়ে জরিপ চালান।
ব্রুটো ইনডেক্সের মাধ্যমে মশার উপদ্রব নির্ধারণ করা হয়। জরিপকারীরা বাসাবাড়িতে পরিত্যক্ত অবস্থায় কৌটা, খালি টিন, টায়ার পড়ে আছে কি-না তা দেখার পাশাপাশি মশার লার্ভা সংগ্রহ করেন। ব্রুটো ইনডেক্স ২০ হলো স্বাভাবিক মাত্রা।
জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার দক্ষিণের চেয়ে উত্তরে মশার দাপট বেশি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১১টি এলাকা-বনানী, বসুন্ধরা, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগ (একাংশ), মিরপুর, মহাখালী, নাখালপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, টোলারবাগ ও উত্তরা-৯ নম্বর সেক্টর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৮টি এলাকা- মিন্টুরোড-বেইলি রোড, শান্তিনগর, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, কলাবাগান, গুলবাগ, বাংলাবাজার ও মেরাদিয়ায় মশার ব্রুটো ইনডেক্সের স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, মশার প্রকোপ মারাত্মকভাবে বাড়ায় ১-৫ মার্চ পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা জরিপ চালানো হয়। গত জানুয়ারিতে পরিচালিত জরিপে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের যে ১৯টি এলাকা অধিক মশকপ্রবণ চিহ্নিত হয়েছিল, সেসব এলাকাতে ফের জরিপ চালানো হয়। জানুয়ারিতে শুধু এডিসবাহী মশার নমুনা সংগ্রহ করা হলেও এ মাসের জরিপে তিন ধরনের মশার নমুনা-এডিস (ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকাবাহী), কিউলেক্স (ফাইলেরিয়াবাহী) ও এনোফিলিসের (ম্যালেরিয়াবাহী) ওপর জরিপ পরিচালিত হয়।
এমইউ/জেডএ/বিএ