বিচারপতি ‘সঙ্কট’ কাটাতে চলতি মাসেই নিয়োগ
সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে শিগগিরই বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। চলতি মাসে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে এবং এ মাসে শেষ না হলে তা আগামী মাসে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এমন তথ্য জানিয়েছে।
২ ফেব্রুয়ারি দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তার নিয়োগের পরই আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর এখন আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজন। হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমানে বিচারপতির সংখ্যা ৮০।
সাংবিধানিক মামলাসহ আপিল বিভাগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৬৫টি। শুধুমাত্র হাইকোর্ট বিভাগে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চার লাখ ৭৬ হাজার ৭৫০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা নিষ্পত্তিতে বিচারক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই বলে জানান আইনজীবীরা।
তারা জানান, আপিল বিভাগে যে সংখ্যক মামলা রয়েছে দ্রুত তা নিষ্পত্তিতে বিচারক নিয়োগ প্রয়োজন। চারজন বিচারক দিয়ে আপিল বিভাগের দুটি বেঞ্চ গঠন করা সম্ভব নয়। দুটি বেঞ্চ গঠন করতে আরো বিচারপতি নিয়োগ দিতে হবে। আরো দুটি বেঞ্চ গঠন হলে মামলা নিষ্পত্তিতে গতি পাবে।
হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত ও একক মিলিয়ে ৪৯টি বেঞ্চে বিচারিক কাজ পরিচালনার ব্যবস্থা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েব সাইটে এমনটি উল্লেখ আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগে ১০৫ জন বিচারপতি ছিলেন। অবসর, মৃত্যুবরণ, অসুস্থ ও কয়েক বছর ধরে বিচারক নিয়োগ বন্ধ থাকায় সর্বোচ্চ আদালতে এখন বিচারক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ২০১৭ সালে এসে বিচারক সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৮২ জনে।
চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে অবসরে গেছেন হাইকোর্ট বিভাগের আরো দুই বিচারপতি। বর্তমানে ৮০ জন বিচারপতি দিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ মামলা পরিচালনা করছেন সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ।
সিনিয়র আইনজীবীরা মনে করেন, দ্রুত বিচারপতি নিয়োগ না দিলে উচ্চ আদালতে মামলাজট আরো তীব্র হবে। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হবেন বিচারপ্রার্থীরা।
সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আশ্বস্ত করেছেন যে, শিগগিরই বিচারক নিয়োগ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক সঙ্কট দূর হবে।
তিনি বলেন, ‘বিচারক নিয়োগের জন্য আইন তৈরি হবে। নবনিযুক্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। বিচারপতি নিয়োগের জন্য অচিরে আইন তৈরি করে এর সমাধান হবে।’
এর আগে সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতির সঙ্কট দূর করতে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি আটজন বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ করেছিল কর্তৃপক্ষ, যদিও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
আপিল বিভাগে ১১ জন বিচারপতি থাকার কথা থাকলেও এখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ আছেন মাত্র চারজন। এর আগে আপিল বিভাগে মোট বিচারপতি ছিলেন নয়জন। গেল বছর ১ জানুয়ারি বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। বাকি আটজনের মধ্যে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ২০১৭ সালের ৭ জুলাই এবং বিচারপতি মো. নিজামুল হক ১৪ মার্চ অবসরে যান। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহা অবসরের আগেই পদত্যাগ করেন। সর্বশেষ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহ্হাব মিঞাও পদত্যাগ করেন।
গেল বছর হাইকোর্ট বিভাগে মোট বিচারপতি ছিলেন ৮২ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিচারপতি মো. ফজলুল রহমান ও বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেন অবসরে যান। ফলে হাইকোর্টে এখন বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ জন।
বিচারক নিয়োগের বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, যেভাবে মামলার সংখ্যা বাড়ছে তাতে জট কমানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারক নিয়োগ দেয়া দরকার। আপিল বিভাগে যেখানে ১১ জন বিচারক থাকার বিধান রয়েছে সেখানে আছেন মাত্র চারজন। হাইকোর্টেও অতিরিক্ত ২০-২৪ জন বিচারক দরকার।
‘তাই আশা করছি সহসাই উভয় বিভাগে বিচারক নিয়োগ দেয়া হবে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, শিগগিরই বিচারক নিয়োগ দেবেন। আমরাও এমনটি আশা করছি।’
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ বলেন, সঙ্কট রয়েছে, তা দূর করার জন্য সরকারও রয়েছে। বিচারক নিয়োগ দিলেই সঙ্কট কেটে যাবে।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, ‘বিচারপতি সঙ্কট- এমনটি বলবো না। কোয়ান্টিটি দিয়ে হয় না, কোয়ালিটির দরকার। বিচারপতি নিয়োগের সংখ্যা যতই হোক কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ভালোভাবে স্ক্যানিং প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখবেন- এমন প্রত্যাশা রইলো।’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে বিচারক নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছিল, আমেরিকায় ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০৭ জন, কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ জন, ভারতে ১৮ জন বিচারক রয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে ১০ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১০ জন বিচারক। জনসংখ্যা এবং মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ প্রদান এখন সময়ের দাবি।
এফএইচ/এমএআর/আরআইপি