খালেদার রায় নিয়ে কী ভাবছে বিএনপি
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায়কে ঘিরে রাজনীতির মাঠ বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ৮ ফেব্রুয়ারির রায়ে খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত হবেন নাকি বেকসুর খালাস পাবেন তা নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
সূত্র মতে, রায়ে সাজা হলে কৌশল কি হবে তা এখনও চূড়ান্ত করেনি বিএনপি। তবে আগে ভাগে নেয়া পরিকল্পনা ছাড়াও নতুন নতুন কৌশল বের করতে আদাজল খেয়ে নেমেছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এ নিয়ে চূড়ান্ত কৌশল নির্ধারণ করতে দলের নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছেন খালেদা জিয়া। শনিবার রাতে চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, বৈঠকেই চূড়ান্ত করা হবে রায় ইতিবাচক বা নেতিবাচক হলে কোন কৌশলে এগুবে বিএনপি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দলের নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার পাশাপাশি ফল বাগে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। বিএনপি পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বলা হয়েছিল, এসব মামলা আইনগতভাবেই মোকাবেলা করা হবে। তবে বিএনপির দাবি সরকার তড়িঘড়ি করে খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এমন সন্দেহ থেকে আইনগত দিকের পাশাপাশি বিকল্প খুঁজছে বিএনপি।
বিএনপির মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, নিঃসন্দেহে এই রায়ের ফসল সরকার ঘরে তুলতে চাইবে। সরকারের টার্গেট বিএনপিকে নেতৃত্ব শূন্য করা। তারা সেই লক্ষ্য নিয়েই এগুচ্ছে। কিন্তু সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। এই নেতার ভাষ্য, ম্যাডামের সাজা হলে আন্দোলনের মাঠে কারা সক্রিয় থাকবে তাদের চিহ্নিত করে সরকার তাদের কৌশল ঠিক করে বিএনপিকে দুর্বল করতে চাইবে। রায়টা বিপক্ষে যাওয়া বিএনপির শক্তি পরীক্ষার একটা টেস্ট কেইসও হতে পারে।
আরেক নেতার মতে, ৮ ফেব্রুয়ারি যে রায় দেয়া হবে এই রায়ে খালেদা জিয়াকে অব্যাহতি দিয়ে সরকার বোঝাতে চাইবে বিচার বিভাগ স্বাধীন। তবে পরবর্তী যেকোনো একটি মামলায় সাজা দিয়ে বিএনপি নেত্রীকে নির্বাচনের অযোগ্য করার পূর্বপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে সরকার। আন্দোলনের জন্য বিএনপি কতটা প্রস্তুত এমন প্রশ্নের জবাবে এক নেতা বলেন, আমরা আন্দোলনের জন্য পুরাপুরি প্রস্তুত না হলেও নেতাকর্মীদের মনোবল এখন আগের চেয়ে অনেক শক্ত। সরকারের মতো বিএনপিও নানা কৌশল অবলম্বন করবে বলে জানান তিনি।
বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত সময়ে নানা ইস্যুতে মাঠে জোরালো অবস্থান না দেখিয়ে আমরা শক্তি সঞ্চয় করেছি। ম্যাডামের সাজা হলে হুট করে শক্তি প্রয়োগ করা হবে কিনা এ নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের প্রায় ১১ মাস বাকি। তাই বুঝে শুনে পা ফেলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। অতীতের মতো ভুল করে আর প্রায়শ্চিত্ত করতে রাজি নন তারা। তাই বলে খালেদা জিয়ার সাজা হলে নেতাকর্মীরা ঘরেও বসে থাকবে না বলে জানান তিনি।
বিএনপির আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, রায় ঘোষণায় সাজা হলে তাৎক্ষণিক উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করার পরিকল্পনা অনেক আগেই নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে যাতে নিম্ন আদালতে সাজা হলেও আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আইনগত কোনো বাধা না থাকে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রায় ঘোষণার দিনকে (আগামী ৮ ফেব্রয়ারি) ফয়সালার দিন উল্লেখ করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ওইদিন বিএনপির চেয়ারপারসনের গায়ে যদি ফুলের অাঁচড়ও পড়ে বাংলাদেশের মানুষ গর্জে উঠবে।
দলটির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়ে যেটা আমরা আশঙ্কা করছি, নেতিবাচক কোন সিদ্ধান্ত সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে যদি আদালত থেকে প্রকাশ পায়, তাহলে ওইদিন বর্তমান সরকারের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে। তিনি বলেন, কোনো ঘটনা কারও জন্য বসে থাকে না। সময়ই বলে দেয় কে নেতৃত্ব দেবে এবং কারা রাজপথে থাকবে। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু করব, এই ঘোষণা দেই বা না দেই, কোন কিছু ঘটবে না এমন নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না।
আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যদি সুবিচার হয় তাহলে এই মামলায় খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পাবেন। রাজনৈতিকভাবে সাজা দেয়া হলে রাজনৈতিকভাবেই সেটি মোকাবেলা করা হবে। খালেদা জিয়ার মামলার রায় ‘দ্রুততার সঙ্গে করানো হচ্ছে’অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নজিরবিহীন তাড়াহুড়ার মধ্যে দ্রুততার সঙ্গে এই মামলা শেষ করার চেষ্টা হচ্ছে। দেশনেত্রীর আইনজীবীরা পরিস্কার করে বলেছেন যে, জাস্টিস হারিড ইজ জাস্টিস বারিড।
এমএম/ওঅার/এমএস