ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

গ্যাস সঙ্কটে বিপর্যস্ত নগরজীবন

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১১:৪০ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০১৮

রাজধানীর ইব্রাহিমপুরের গৃহিণী রানু আক্তার। সংসার জীবনের দুই দশকে সবই মিলেছে। কচুক্ষেত বাজারের ব্যবসায়ী স্বামী বাবুল মোল্লা বাড়িও করেছেন। চার ছেলেকে নিয়ে সংসার সুখেই চলছে। তবে চুলায় আগুন না জ্বলায় গত মাস থেকে অশান্তির আগুন রানুর সংসারে বাসা বেঁধেছে। গ্যাস সঙ্কট সমস্ত সুখ যেন কেড়ে নিয়েছে রানুর।

জাগো নিউজ-এর কাছে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ঢাকাতেই বেড়ে ওঠা। সংসার করছি দুই দশক হয়। গ্যাস সঙ্কট আগেও হয়েছে। কিন্তু এবার যে বিপাকে পড়েছি, তা আগে কখনও হয়নি। সকালে চুলে নিভে যায়, বিকেলেও জ্বলে না। টানা এক মাস ধরে গ্যাস সঙ্কটে আমরা। উপায় না দেখে সিলিন্ডার এনেছি। সঙ্গত কারণে সংসারে ব্যয় বাড়ছে। এ পরিস্থিতিকে আসলে নাগরিক জীবন বলে না।

রাজধানীর সর্বত্রই চলছে গ্যাস সঙ্কট। গেল এক মাস ধরে এ সঙ্কট তীব্র হলেও কোনো সমাধান মিলছে না। কবে মিলবে সমাধান, তারও কোনো হদিস নেই। টানা সঙ্কটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে কোনো কোনো অঞ্চলের জনজীবন। জীবন ব্যয় বাড়ছে সব শ্রেণির মানুষের। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের মানুষরা চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকেই হোটেলের খাবার খেয়ে দিন পার করছেন। আবার কেউ কেউ গ্যাস সিলিন্ডার এনে প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।

রাজধানীর বনশ্রীতে থাকেন মোশফেকা মিশু। স্বামী একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক। বিয়ের পর দেড় বছর ঢাকায় এসে সংসার পেতেছেন। গ্যাস সঙ্কটে অতিষ্ট মিশু। বলেন, ছোট সংসার। আয় বুঝে ব্যয় করতে হয়। গ্যাসের দাম বাড়ালো। গ্যাস বিল দিয়ে এখন যদি আবার সিলিন্ডার কিনে সংসার চালাতে হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় অন্য ব্যয়ে কৃচ্ছতা আনতে হবে।

মিশু বলেন, ঢাকায় অসার আগে গ্যাস সঙ্কটের কথা শুনতাম। তখন ঠিক বুঝতাম না। এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। দুই কোটি মানুষের শহরে এমন নির্বোধ পরিকল্পনা হয় কি করে!

রাজধানীর গ্যাস সঙ্কট নিয়ে বিভিন্ন এলাকার খবর নিয়েছেন জাগো নিউজের প্রতিবেদকরা। মিরপুরের শেওড়াপাড়ায় থাকেন আবু মুসা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এক মাস ধরে দিনের বেলায় এ অঞ্চলে গ্যাস থাকে না বললেই চলে। যেটুকু গ্যাস আসে তাতে কোনো চাপ থাকে না। নিভু নিভু চুলায় রান্না করতে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সবাইকে।

সায়াদাত বলেন, আগে গ্যাস সঙ্কট দেখা দিলেও টানা এতদিন থাকেনি। মানুষ নিরুপায় হয়ে পড়ছে।

বনশ্রীর বাসিন্দা মিঠুন আহমেদ বলেন, প্রায় এক মাস ধরে গ্যাস সঙ্কট বনশ্রীতে। রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার ফল এখন গ্যাস সঙ্কট। বারবার দাম বাড়িয়েও সমাধান মিলছে না। রান্নার অভাবে এ অঞ্চলের কেউ অর্ধাহারে আবার কেউ অনাহারেও থাকছেন।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা, আদাবর, পশ্চিম আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল, পশ্চিম ধানমন্ডি, লালবাগ, সোবহানবাগ, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, শাঁখারীবাজার, কামরাঙ্গীরচর, উত্তরা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, যাত্রাবাড়ীর একাংশ, দক্ষিণ বনশ্রী, মগবাজার এলাকাসহ বিভিন্ন গ্যাসের ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিয়েছে। শত অভিযোগ দিয়েও সমাধান মিলছে না। রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগও চোখে পড়েনি সমাধানে।

কোনো কোনো এলাকায় শুধু রাতের বেলায় গ্যাস মিলছে। শীত আসার পর থেকেই গ্যাস সমস্যা চরম আকার ধারণ করছে।

মোহাম্মদপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন নিলয়। তিনি বলেন, বাসা ভাড়া নিলেই গ্যাস বিল দিতে হবে। অথচ চুলায় গ্যাস নেই। সিলিন্ডার কিনেছি আগে থেকেই। খরচ দ্বিগুণ হচ্ছে।

রাষ্ট্র নাগরিকদের পরিকল্পিতভাবে সিলিন্ডার গ্যাসে নির্ভর করাবে বলেই এ সমস্যা তৈরি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জ্বালানি নিয়ে সরকার কি করছে এবং করতে চাইছে, তা সবার কাছেই পরিষ্কার। স্থায়ী কোনো সমাধানে না এসে জোড়াতালির দিয়ে সমাধানের কারণেই সঙ্কট তীব্র হচ্ছে।

এএসএস/এএইচ/এআরএস/জেআইএম

আরও পড়ুন