ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সমঝোতায় সমাধান হলে মানুষ সমস্যা থেকে বাঁচতো

মানিক মোহাম্মদ | প্রকাশিত: ০১:৩৪ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮

নির্বাচন, আন্দোলন সবকিছুরই প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছে তৃণমূল নেতারা। রাজপথের আন্দোলন না নির্বাচন? কোন দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি? এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইউব বলেছেন, ‘আপনি আন্দােলনে যাবেন, হরতালে যাবেন, অবরােধে যাবেন তাতে দেশের অর্থনীতি বলেন, সামাজিক ব্যবস্থা বলেন, মানুষের চলাচল বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বলেন সব যায়গায় একটা প্রভাব পড়ে। যদি সমঝোতার মাধ্যমে সবকিছু করা যায় তাহলে দেশের মানুষ অন্তত এসব সমস্যা থেকে বাঁচতো।’

তিনি বলেন, ‘আন্দোলন-সংগ্রাম রাজনীতির একটা অংশ। সব দেশেই বিশ্বের সব জায়গায় আন্দােলন-সংগ্রাম থাকে রাজনীতির পেছনে। কিন্তু যদি সমঝোতা হয় তাহলে তো আন্দােলন-সংগ্রাম করে মাঠটাকে উত্তপ্ত করা আমার মনে হয় যুক্তিসংগত নয়। যদি সমঝোতার মাধ্যমে এই দেশ এবং জাতিকে পরিচালনা করতে পারি, সেটা সঠিক নয় কি? আমি মনে করি সঠিক।’

সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন তিনি। তার কথোপকথনের বিস্তারিত পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কীভাবে দেখছেন?

চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক ঘোলাটে। ঘোলাটে বলবো এ কারণে সরকার কী বলছে, আর দেশ জাতি কী চাচ্ছে- একটার সঙ্গে আরেকটার সমন্বয় নেই। সরকার একদিকে দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে, মামলা হামলা দিয়ে নির্যাতন করছে জাতিকে। আরেকদিক দিয়ে বলছে, আমরা গণতন্ত্রের চর্চা করছি। গণতন্ত্র চর্চা করার অর্থ তো এটা না। দমন নিপীড়ন না। যেখানে বাক স্বাধীনতা নাই, যেখানে মিছিল মিটিং অপেনলি করার কোনো সুযোগ নাই। সেখানে গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে -এটা বলার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। টোটাল প্রেক্ষাপটটা পর্যবেক্ষণ করে বলতে পারি, দেশে একটা অস্থিরতার সৃষ্টি হয়েছে এবং একটা রাজনৈতিক সংকট চলছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনারা কী ভাবছেন?

জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভাবনাটা আমার ব্যক্তিগত। জাতীয় পর্যায়ের ভাবনাটা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আমাদের মহাসচিব আপনাদের সামনে বলবেন। তবে আমার বক্তব্য- নির্বাচন যখনই আসুক না কেনো বিএনপি সবসময় নির্বাচনমুখী একটা দল, নির্বাচন করতে চায়। সেই সঙ্গে আমি বলবো নির্বাচন বিএনপি করবে কিন্তু নির্বাচনের পরিবেশটা খুব সুন্দর হতে হবে। নিরপেক্ষ হতে হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে। এটি হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি সরকার মনে করে তাদের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে, ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি এ সরকার উপজেলা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কী! দুর্বত্তায়ন করেছে। এবং সেখানে কী ধরনের বিশৃঙ্খলা করেছে, অনিয়ম করেছে। ভোট ডাকাতি হয়েছে। ইভেন গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নজীরবিহীন ১৫৪ সিটে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে এখনো সরকার গঠন করে অবৈধভাবে দেশ চালাচ্ছে।

বিএনপি যে দাবিগুলো তুলছে নিরপেক্ষ সরকার বা সহায়ক সরকার। ক্ষমতাসীনরা তো এসব দাবি গ্রাহ্য করছে না। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনটা যদি গত ৫ জানুয়ারির মতো হয় তাহলে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন থাকবে?

নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি সব সময় আছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং অনুকূল পরিবেশ যখনই আসবে সে সময় হয়তো পার্টি সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচনের বিষয়ে। আমি একেবারে তাৎক্ষণিকভাবে বলতে পারবো না ওই সিচুয়েশনে আমার দলের ভূমিকা কী হবে। যেহেতু নীতিনির্ধারক পর্যায়ের আমি কোনো ব্যক্তি না। দলের সাধারণ একজন কর্মী। সেই হিসেবে বলবো সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ একটা পরিবেশ যদি দেশের মানুষ পায় তাহলে বিএনপি সেই মাঠে অবশ্যই থাকবে। তাতে কোনো সন্দেহ নাই।

রাজনীতিতে নতুন নতুন জোট হচ্ছে। সম্প্রতি যুক্তফ্রন্ট নামে যে জোট হয়েছে তাদের কেউ কেউ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। অনেকের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগও আছে। এমন জোটের ফলে আপনাদের তৃণমূ্লে কেমন প্রভাব পড়তে পারে?

দেখেন বিএনপি সমুদ্রের মতো একটা দল। বিশাল দল। এই দলের ভেতরে কে আসলো আর কে গেলো এতে কোনো প্রভাব পড়ে না। আমাদের দলের নেতৃবৃন্দ যারা ইতোপূর্বে দলের সঙ্গে ছিলেন এবং যারা চলে গেছেন, চলে যাওয়ার পরও আমারা মনে করি দল দলের জায়গাতেই আছে। কেউ যদি এখানে আসে আমার মন হয় না এজন্য ব্যপক প্রভাব পড়ে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে বিএনপি আছে এটার গুনগত কোনো পরিবর্তন হবে এটা আমারা বিশ্বাস করি না। একটা জোট সারা বাংলাদেশে হতেই পারে। সেটা আমার দলের লোক নিয়ে হোক বা অন্য যেকোনো দলের লোক নিয়ে হােক। হতেই পারে। জোটকে আমরা স্বাগত জানাই। সবসময় জোটবদ্ধভাবে আমরাও নির্বাচন করেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের জোট আছে। আমরা সেভাবেই নির্বাচন করতে চাই। জোটকে স্বাগত জানাই। জোটের কারণে দলের কোনো ভাঙন পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা নেতাকর্মীদের মানসিকতার কােনো পরিবর্তন হয়েছে এটা আমি বিশ্বাস করি না।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আপনার এলাকার পরিস্থিত কেমন?

আগামী নির্বাচনে যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, এরা (সরকার) যদি ভোট ডাকাতি না করে, যদি ভোটের মাঠে ভোটারদেরকে নির্ভয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভূমিকার মাধ্যমে এ কাজটি করেন তাহলে ব্যাপক ভোট, যে ভোট আমরা কখনো আশা করি নাই সে ভোটের ব্যাবধানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রার্থী, শুধু আমার আসনেই নয় সারা বাংলাদেশে যেকোনো জায়গায় জিতবে এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

বাংলাদেশ ৪৬ পেরিয়ে ৪৭ এ পদার্পণ করেছে। আপনার কাছে কী মনে হয়, আমাদের অর্জন কতটুকু?

আমরা অনেক অর্জন করেছি কিন্তু আমাদের ব্যর্থতাও চরম আকারে আছে। চরম আকারে আছে এ কারণে যে, এই দেশ এবং জাতি তৎকালীন সময় সাড়ে ৭ কোটি বাঙালি আমরা এই দেশটাকে স্বাধীন করেছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার মূল স্বাদ, মূল অর্থ, মূলমন্ত্র যে গণতন্ত্রায়ন এই বাংলাদেশে করার কথা, যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতিতে আমরা নেই। আমরা অনেক দূরে ডিবেইট হয়ে গেছি। এই ডিভিশন থেকে যদি বেরিয়ে আসতে না পারি তাহলে যারা নতুন প্রজন্ম আসবে তারা আমাদের সম্পর্কে খুব ঘৃণা পোষণ করবে। বর্তমান যে সরকার এখন দেশ পরিচালনায় আছেন বা পরিচালনা করছেন তাদের কৃতকর্ম, তাদের অবস্থা, রাজনৈতিক দর্শন, তাদের আচার-আচরণ, তাদের প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং ভোটের যে নির্লজ্জতা এগুলো যদি আমাদের কামিং জেনারেশন চিন্তা করে তাহলে আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদেরকে ঘৃণা করা ছাড়া কেউ শ্রদ্ধা করবে না। ভালোবাসবে না।

এমএম/এমবিআর/আরআইপি

আরও পড়ুন