ইশতেহারের সিংহভাগ অর্জনের দাবি আওয়ামী লীগের
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘোষিত ইশতেহারের সিংহভাগ অর্জন হয়েছে বলে দাবি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। তাদের দাবি, অবকাঠামোগত দিক থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন- সকল ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জন হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বর্তমান সরকারের বড় সাফল্য বলেও দাবি ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের।
দলের নেতারা সাফল্য হিসেবে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সমস্যার সমাধান, ছিটমহল বিনিময়, সড়ক-মহাসড়ক, কূটনৈতিক সাফল্য, প্রবৃদ্ধি হার বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, পদ্মা সেতু, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শিল্পায়ন, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ প্রতিষ্ঠায় সরকার সক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, অবকাঠামোগত ও সামাজিক ক্ষেত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে, দারিদ্র্য কমে এসেছে- সব মিলিয়ে একটা অভূতপূর্ব উন্নয়ন। সারা পৃথিবীতে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমন করা হয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিচার হয়েছে। উন্নয়নের পূর্বশর্ত জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা- সেটা করতে সরকার সক্ষম হয়েছে।
‘মানুষের সামনে উন্নয়ন তুলে ধরা, দেশকে স্থিতিশীল রাখা এবং দলকে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত করে নির্বাচনে বিজয় অর্জন করে সরকার গঠনই এখন বড় চ্যালেঞ্জ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ইশতেহারে যা ঘোষণা করা হয়েছিলো, তার সবগুলোই পূরণের পথে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল-চরম দারিদ্র্যের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হওয়া। আমরা এখন নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উপনীত হয়েছি। এটা আমাদের বড় অর্জন।
তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক রফতানি, রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে। দ্বি-পাক্ষিক সমস্যাগুলোর সমাধান হয়েছে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা এবং ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থনীতি থেকে শুরু করে সামগ্রিকভাবেই অগ্রগতি হয়েছে। জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির সিংহভাগই বাস্তবায়িত হয়েছে।
হানিফ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা যাত্রা করেছিলাম তা ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে। ই-গভর্নেন্স চালুর পথে। বাংলাদেশ এ মুহূর্তে আত্মমর্যাদাশীল নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবো, এটাই প্রত্যাশা।
সুশাসন সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসী, জঙ্গি কর্যক্রম কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। মানুষের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সু-শাসনের দিক থেকে ঠিক আছে। কিন্তু গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে রাজপথে ধ্বংসাত্মক, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার পরেও কেউ যদি মনে করে এটা গণতান্ত্রিক অধিকার, সে ধরনের গণতন্ত্র তো দেশবাসী চায় না। তাদের কাছে হয়তো মনে হতে পারে, অপরাধী যারা, যারা অপরাধ করে বিচারের মুখোমুখি-তাদের কাছে মনে হতে পারে দেশে সুশাসন নেই। কিন্তু এ দেশে সকলের জন্য আইন সমান।
সরকারের পঞ্চম বছরে ইশতেহারের বাস্তবায়ন সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইশতেহারে সৌদি আরবের শ্রম বাজারকে সুসংহত রাখার কথা ছিল, আমরা করতে পেরেছি। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপ-চীন সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার কথা ছিল-আমরা করতে পেরেছি। প্রতিরক্ষার প্রশ্নে-সশস্ত্র বাহিনীর কথা তো চিন্তাই করা যাবে না। খেলাধুলার ক্ষেত্রে অর্জন অভূতপূর্ব। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারাই বলছেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, মুক্তিযুদ্ধ এখন এ দেশের মানুষের চালিকা শক্তি।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের অধিকার সম্পর্কে গণমাধ্যম কর্মীরাই বলছে। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন, নারী ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। শুধু সরকারি পর্যায়ে নয়, বেসরকারি পর্যায়েও ব্যাপক শিল্পায়ন হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো গড়ে উঠছে এ সরকারের আমলে।
আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, দেশে যে রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ অবস্থান, বিরোধী দলের অসহযোগিতা-ধ্বংসাত্মক রাজনীতি থেকে আমরা দেশকে একটা স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে এসেছি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমরা বেশি করেছি। কাজেই আমরা মনে করি আমাদের যে লক্ষ্য, সেটা পরিপূর্ণভাবে করতে পেরেছি। যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছিল সেটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি পঞ্চম বছরেই।
এইউএ/এএইচ/বিএ