সম্মেলনকে ঘিরে চাঙা ছাত্রলীগ : নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে যারা
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন ৩১ মার্চ। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। শীর্ষ পদ দুটির একটি নিজেদের দখলে আনতে সিনিয়রদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন অনেকে। এছাড়া সম্মেলনের কারণে নড়ে চড়ে বসেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারাও। দলীয় সূত্র এ তথ্য জানা গেছে।
গত সোমবার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে সম্মেলনের তারিখ ঠিক করা হয়।
এর আগে ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মার্চে ছাত্রলীগের সম্মেলন করার ব্যাপারে নেত্রীর ইচ্ছা রয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘আমি নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি। নেত্রীর ইচ্ছা আগামী মার্চে স্বাধীনতার মাসে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সম্মেলন করুক।’
৯০ দশকের পর এবারই কেন্দ্রীয় কমিটি নির্ধারিত সময়ে সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে শীর্ষ পদ দুটি ‘লাভজনক’ হওয়ায় গদি ছাড়তে চাইতেন না সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা। তবে এবারের সাইফুর রহমান সোহাগ-এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কমিটি ব্যতিক্রম। ‘চাপের মুখে হলেও’ তারা ২ বছর ৮ মাসের মাথায় সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছেন।
সূত্র জানায়, এবার সম্মেলনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে সাবেক তিন নেতাকে নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যারা নেতৃত্বের যোগ্যতায় এগিয়ে থাকবে তারা শীর্ষ পদ পাবে। সে ক্ষেত্রে একাডেমিক ও সাংগঠনিক যোগ্যতা, দক্ষ, শিক্ষার্থী বান্ধব এবং দলের প্রতি নিবেদিতরাই এ পদে আসবেন। বিতর্কিতরা যেন এ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হতে না পারে সে বিষয়ে তাগিদ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনের ক্রিটিক্যাল মুহূর্তে সংগঠন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবে কি-না এটিও বিবেচনায় থাকবে।
এ বাছাই কমিটির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হলে বহুদিনের ‘অদৃশ্য সিন্ডিকেট ভেঙে যাচ্ছে’ বলে মনে করেন ছাত্রলীগের বর্তমান কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতি এতদিন ধরে সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এবার সেখান থেকে বের হতে যাচ্ছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির নেতাকর্মীদের দাবি অদৃশ্য সিন্ডিকেট মুক্ত নেতৃত্ব বাছাই হোক ছাত্রলীগের জন্য।
সূত্র আরও জানায়, এবার চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে শীর্ষ পদের একটি আসতে পারে। এছাড়া উত্তরবঙ্গও বিবেচনায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নেতা উঠছে না রাজশাহী ও বরিশাল থেকে। তাই এসব এলাকা বিশেষ বিবেচনায় থাকবে। যোগ্য নেতৃত্ব পেলে এসব এলাকা থেকেই শীর্ষ পদে আসীন হতে পারেন কেউ।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ পদে আসীন হওয়ার দৌড়ে প্রাথমিক তালিকায় যারা আছেন- বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক গোলাম রাব্বানি, আইনবিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, প্রচার সম্পাদক সাইফ উদ্দিন বাবু, কর্মসূচি ও পরিকল্পনাবিষয়ক সম্পাদক রাকিব হোসেন, কৃষি শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক বরকত হোসেন হাওলাদার, স্কুলছাত্রবিষয়ক উপ-সম্পাদক সৈয়দ আরাফাত, উপ-মুক্তিযুদ্ধ সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি শাখা ১নং সহ-সভাপতি রুম্মান হোসাইন, সহ-সভাপতি শাহরিয়ার কবির বিদ্যুৎ, স্যার এ এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান। এছাড়া বয়স থাকায় ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সও কেন্দ্রীয় পদ প্রত্যাশী বলে তার কর্মীরা প্রচার করছেন।
এদিকে বয়সের মারপ্যাচে বাদ পড়বেন সংগঠনটির এমন নেতাদের দাবি আগামী জুলাই পর্যন্ত যাদের বয়স সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক ২৯ বছর রয়েছে তাদের বিষয়টি যেন বিবেচনা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সহ-সভাপতি পর্যায়ের এক নেতা বলেন, আমার তো গত জুলাই পর্যন্ত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়স ছিল। তারা যদি নির্ধারিত সময়ে সম্মেলনের আয়োজন করতো তাহলে তো আমি বঞ্চিত হতাম না। জুলাই পর্যন্ত যাদের ২৯ বছর হয়নি তাদের বিবেচনায় নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, যারা যোগ্য, মেধাবী, নিয়মিত ছাত্র, ভালো সংগঠক তারাই নেতৃত্বে আসবে। দুঃসময়ে যারা ছাত্রলীগের জন্য কষ্ট করেছেন তারাই নেতৃত্বে আসবে। এছাড়াও যারা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবে, শেখ হাসিনার ভিশনকে বাস্তবায়ন করতে পারবে এবং আগামী দিনের যে কোনো দুঃসময় মোকাবেলা করতে পারে এমন যোগ্যতা সম্পন্নরা নেতৃত্বে আসবে।
এমএইচ/এমএম/জেএইচ/এএইচ/আইআই