ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

কেন এগিয়ে আতিকুল ইসলাম

ফজলুল হক শাওন | প্রকাশিত: ০৩:৫৯ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে এগিয়ে আছেন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ এ উপ-নির্বাচনে ‘ক্লিন ইমেজ’র এক প্রার্থীকে মনোনিত করতে চায়।

আতিকুল ইসলাম পারিবারিক ঐতিহ্য, পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ী নেতা এবং সামাজিক অবস্থানের কারণে তিনি এগিয়ে আছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের মানুষ তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

আতিকুল ইসলাম কেন আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী বাছাইয়ের দৌড়ে এগিয়ে আছেন- এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, তার ভাই তোফাজ্জল ইসলাম প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় দেন। আতিকুল ইসলামের আরেক ভাই মইনুল ইসলাম সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রধান ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই বিডিআর বিদ্রোহের যে ঘটনা ঘটে, সে সময় ওই ঘটনা নিরসনে মইনুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়া বিডিআর নাম পরিবর্তন করে বিজিবি রাখার ক্ষেত্রেও তার অবদান রয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, উত্তরের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নাম এসেছে। যাদের নাম এসেছে, রাজনৈতিক দল হিসেবে কোনো না কোনো দোষত্রুটি খোঁজার চেষ্টা করবে বিরোধীপক্ষ। একটা কিছু পেলে সেটা নিয়ে হৈ-চৈ শুরু করবে, অপপ্রচার চালাবে তারা। ফলে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে, নির্বাচনের ফলাফলে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এ কারণে সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মতো একজন ক্লিন ইমেজের লোককে মনোনয়ন দিতে চায় আওয়ামী লীগ।

ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, যেহেতু আগামী বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে নির্বাচনের আগে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেরে গেলে এর প্রভাব জাতীয় নির্বাচনে পড়বে, দলের নেতাকর্মীরাও উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ক্লিন ইমেজের এক প্রার্থী। এ কারণে দলের ভেতরে আতিকুল ইসলামের নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে।

দলের নেতারা আরো বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতায় গুলশান, বনানী ও বারিধারার মতো অভিজাত এলাকা রয়েছে। এখানে ভোটারদের রুচিও একটু আলাদা। সাবেক মেয়র আনিসুল হকের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ঐতিহ্য থাকায় জনগণ তাকে বেছে নিয়েছিলেন মেয়র হিসেবে।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী আতিকুল ইসলাম ছাড়াও বিজিএমইএ’র অপর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি ও ঢাকা-৯ আসনের এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দলের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার, নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি ও চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী, দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নামও শোনা যাচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত উত্তরের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী সমন্বয়ক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, শুধু আতিকুল ইসলাম নয়, আরো অনেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা প্রার্থী বাছাই ও প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার প্রাথমিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে। সেই মনোনয়ন বোর্ডই দলীয় প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করবে। নির্বাচন কমিশন এ উপ-নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করলেই প্রার্থী চূড়ান্ত করবে দল। এর আগে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে- এ বিষয়ে কোনো কথা বলা যাবে না।

মেয়রপ্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে আতিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আনিস ভাইয়ের (প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক) জায়গায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মেয়রপ্রার্থী হিসেবে পছন্দ করেছেন। আমাকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী করা হলে এবং আমি নির্বাচিত হলে আমার প্রথম কাজ হবে আনিসুল হকের অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করা। তার দেখা স্বপ্নের ঢাকা বাস্তবায়ন করা। আর তা করতে পারলেই আনিসুল হকের আত্মা শান্তি পাবে। ঢাকাবাসীও স্বস্তি পাবে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএনসিসির প্রার্থী চূড়ান্তের আগে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত সংসদীয় আসনের এমপিদের সঙ্গে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে মেয়রপ্রার্থীর বিষয়ে এমপিদের মতামত নেয়া হবে। আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা-১১ আসনের এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহ, ঢাকা-১২ আসনের এমপি আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আসলামুল হক আসলাম, ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার, ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ ও ঢাকা-১৮ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে আনিসুল হক মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ছাড়াও বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজে হাত দেন। এছাড়া উত্তরের যানজট নিরসনেও বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার কর্মপরিকল্পনা ও গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ খুব অল্প সময়ে জনগণের প্রশংসা কুড়াতে থাকে। এক্ষেত্রে উত্তরের তুলনায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। পরে উত্তরের দেখাদেখি দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনও আনিসুল হকের মতো অনুরূপ কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

গত ৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হক মারা যাওয়ার পর ৪ ডিসেম্বর পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

এফএইচএস/এমএআর/এমএস

আরও পড়ুন