বিএনপির একলা পথ চলা শুরু!
২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০ দলীয় জোটের মধ্যে যে ঐক্য সুদৃঢ় হয়েছিল তা যেন দিন দিন ফিকে হয়ে আসছে। গত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের নির্বাচনী প্রচারণায় সমন্বয় কমিটি হলেও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তা চোখে পড়েনি।
এ নির্বাচনে বিএনপির একলা চলা নীতির মাধ্যমে জোটের শরিকদের এক ধরনের বার্তা দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, এককভাবে চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে দলটি।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির বাইরে জামায়াতে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ ন্যাপ ও জাগপাকে কাজে লাগানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটা করছে না বিএনপি। ‘জোটে শরিকদের অবহেলার দৃষ্টিতে দেখছে বিএনপি’, এ কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হবে দলটি- এমনটি মনে করছেন শরিক দলের নেতৃস্থানীয়রা।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দারকে আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।
জোটের শরিকদের প্রত্যাশা ছিল, এবারও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নতুন কোনো কমিটি গঠন এবং সেখানে শরিকদের দায়িত্ব দেয়া হবে। কিন্তু, তা হয়নি। এমনকি জোটের শরিক কাউকে এখন পর্যন্ত বিএনপি থেকে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাতে আহ্বান জানানো হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণির বাড়ি রংপুরে। নিজ এলাকা হওয়ায় সেখানে তার পারিবারিক প্রভাব একেবারে ফেলে দেবার নয়। তার দাদা মশিউর রহমান যাদু মিয়ার জনপ্রিয়তা এখনও ওই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে শোভা পায়। অন্যদিকে রংপুর সদর আসনে একসময় তার পিতা শফিকুল গাণি স্বপন সংসদ সদস্য ছিলেন।
এ বিষয়ে জোটের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জোটের রাজনীতিতে বিএনপি সব সময়ই ‘সুবিধাবাদী’ ভূমিকা পালন করে। কঠিন সময় জোটের শরিকদের ব্যবহারের প্রবণতা তাদের মধ্যে আছে। অনেকটা আত্ম-অহংকারের কারণে তারা এটা করে। ছোট বলে অবহেলা করে, কিন্তু ভুলে যান চরম বিপদের সময় ছোট দলগুলোই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তিনি মনে করেন, বিএনপির এমন আত্ম-অহংকারের কারণে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি বার বার হোঁচট খাচ্ছে। তারা ভুলে যান, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জোটের শরিক অনেক নেতাই এমপি-মন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তারা জোটের স্বার্থে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। বিএনপি সেই ত্যাগের কোনো মূল্যায়ন দেয়নি। ভবিষ্যতে হয়তো এ কারণে তাদের আরো বেশি মাসুল দিতে হবে।
বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, কেন্দ্র তো দূরের কথা স্থানীয়ভাবেও বিএনপি ২০ দলের শরিকদের ডাকে না। আমাদের প্রত্যাশা ছিল বিএনপি নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের জন্য একটি প্রচারণা সমন্বয় কমিটি করবে। কিন্তু, তা করেনি। হয়তো এর মাধ্যমে বিএনপি আগামী দিনে একলা চলার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। বিষয়টি নিয়ে জোটের ভেতর অনেকটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ছোট দল হলেও রংপুর বিভাগে বাংলাদেশ ন্যাপের অবস্থান একেবারে ফেলে দেয়ার নয়। আমাদেরও মেয়রপ্রার্থী ছিল। কিন্তু, জোটের স্বার্থে আমাদের দলীয় প্রধান জেবেল রহমান গাণি প্রার্থিতা দেননি। এখন আমাদের আঞ্চলিক নেতাকর্মীরা খুবই ক্ষুব্ধ।
তিনি আরো বলেন, জোটের দ্বিতীয় শরিক জামায়াতে ইসলামির পর রংপুরে বাংলাদেশ ন্যাপ’র জেবেল রহমান গাণি ও জাগপার অবস্থান ছিল। কেন তাদের কাজে লাগানো হলো না, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
জোটের অপর শরিক এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মর্তুজা বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সমন্বয় কমিটি করা হলেও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে জোটের সমন্বয় কমিটি হয়নি, কেন হয়নি; সে বিষয়ে কিছুই জানি না। এ বিষয়ে জোটের পক্ষ থেকে কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
এ বিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, বিগত নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের কোনো সমন্বয় কমিটি ছিল- এটা আমার জানা নেই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ইলেকশন তো আরো দু’দিন পর। এখন এ প্রশ্ন করে লাভ আছে? সাতদিন আগে এ প্রশ্ন করলে বিষয়টি বিবেচনা করা যেতো।
এমএম/এমএআর/বিএ