ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি সুপ্রিম কোর্টের অধীনেই আছে

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৮:২২ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭

‘নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি সুপ্রিম কোর্টের অধীনেই আছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক এ আইনমন্ত্রী আরও বলেন, এটি আগেও ছিল। নিম্ন আদালতের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আইন মন্ত্রণালয়ে আসলেও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে তদন্ত হতো, তদন্ত কর্মকর্তাও সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ দিতো এবং তদন্তের রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের কাছেই জমা হতো। তখন সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিতো।

সরকার কর্তৃক নিম্ন আদালতের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রসঙ্গে সম্প্রতি তিনি মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় এ গেজেট বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মত দেন তিনি। সমালোচনা করেন গেজেটের সমালোচকদের। আলোচনায় উঠে এসেছে বিচার ব্যবস্থার অন্য প্রসঙ্গও। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজ’র জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথম পর্ব-

জাগো নিউজ : বহু প্রতীক্ষিত নিম্ন আদালতের শৃঙ্খলাবিধি গেজেট প্রকাশ করলো সরকার। বিধি নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। আপনার প্রত্যাশা কী ছিল?

শফিক আহমেদ : সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্র নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করবে। দীর্ঘদিনেও হয়নি বলে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলার রায়ের প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগকে আলাদার নির্দেশ দেন আদালত।

২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগে বিসিএস’র মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ হতো। এখন জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন নামে স্বতন্ত্র কমিশন করে দেয়া হচ্ছে বিচারকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারক এ কমিশনের চেয়ারম্যান থাকছেন।

সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি নিম্ন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে আসছেন। অর্থাৎ নিয়োগের সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পন্নের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের ওপর বর্তায়।

জাগো নিউজ : নিয়োগের মতো জটিল বিষয় যদি সুপ্রিম কোর্ট করে থাকতে পারে, তাহলে শৃঙ্খলাবিধি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে কেন?

শফিক আহমেদ : শৃঙ্খলাবিধি সুপ্রিম কোর্টের অধীনেই আছে। আগেও তাই ছিল। আমি দেখেছি, নিম্ন আদালতের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আইন মন্ত্রণালয়ে আসলেও সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে তদন্ত হতো। তদন্ত কর্মকর্তাও সুপ্রিম কোর্ট নিয়োগ দিতো এবং তদন্তের রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের কাছে জমা হতো। তখন সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিতো।

safik-02

জাগো নিউজ : এ প্রশ্নে আইন মন্ত্রণালয়কে বাদ দেয়া যেত কিনা? জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনেরই তো সব করার কথা?

শফিক আহমেদ : নিম্ন আদালতের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আইন মন্ত্রণালয়ের একক কোনো ক্ষমতা নেই। সুপ্রিম কোর্টের স্বতন্ত্র কোনো সচিবালয় নেই বলে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টকে।

জাগো নিউজ : জটিলতা কি স্বতন্ত্র সচিবালয় না থাকা?

শফিক আহমেদ : হ্যাঁ। সুপ্রিম কোর্টের দাপ্তরিক কাজটা আইন মন্ত্রণালয়কেই করতে হচ্ছে।

জাগো নিউজ : স্বতন্ত্র সচিবালয় করার কথা। রাষ্ট্র করছে না। রাষ্ট্রের ব্যর্থতা বলবো, নাকি নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে ইচ্ছা করেই করা হচ্ছে না?

শফিক আহমেদ : ব্যর্থতা বা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন নয়। একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় করতে বহু অর্থের প্রয়োজন। অর্থের কারণেই এটি এখনও করা যায়নি বলে মনে করি।

জাগো নিউজ : নতুন নতুন মন্ত্রণালয় হলো। ভবন হচ্ছে। অর্থের অভাবে এমন একটি সিদ্ধান্ত আটকে রাখা যায়!

শফিক আহমেদ : সচিবালয় হয়নি বলেই যে কাজ থেমে আছে, তা নয়। কাজ তো হচ্ছে। ২০০৭ সালে বিচার বিভাগ আলাদা হয়ে যায়। এরপর থেকে সুপ্রিম কোর্ট ও রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিম্ন আদালতের সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে।

নিম্ন আদালতের শৃঙ্খলাবিধির ব্যাপারে অথবা কোনো বিচারকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট যে পরামর্শ বা নির্দেশনা দেবে, ধরে নিতে হবে সেটাই চূড়ান্ত। এখানে আইন মন্ত্রণালয় শুধু পোস্ট অফিসের কাজ করে।

জাগো নিউজ : তা-ই হচ্ছে কি?

শফিক আহমেদ : হ্যাঁ। আইন মন্ত্রণালয় সে কাজটাই করছে। স্বপ্রণোদিত হয়ে রাষ্ট্রপতি নিম্ন আদালতে কোনো হস্তক্ষেপ করছেন? যা করার সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ নিয়েই করছেন। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের কিছুই করার থাকে না।

safik-02

জাগো নিউজ : রাষ্ট্রপতির কাজ তো আনুষ্ঠানিক মাত্র। সংবিধানও একটি কিতাবি ব্যবস্থা। ঠিক সুপ্রিম কোর্টের বেলাতেও অনেকটা তাই ঘটছে। যা করবার তা আইন মন্ত্রণালয়ই করছে...

শফিক আহমেদ : সংবিধান একটি কিতাবি ব্যবস্থা, তা বলা যাবে না। নির্বাহী বিভাগ গিয়ে সংসদে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। একইভাবে বিচার বিভাগ গিয়ে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে পারবে না। কার কী কাজ তা ভাগ করে দিয়েছে সংবিধান। সুতরাং সংবিধানকে কিতাবি ব্যবস্থা বলার কোনো সুযোগ নেই। সংবিধান হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন।

জাগো নিউজ : দৃশ্যত বিচার বিভাগের ওপর আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। সংবিধান তো বিচার বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার কথা বলেছে...

শফিক আহমেদ : আমি তা মনে করি না। বিচার বিভাগ এখন স্বাধীন। আইন মন্ত্রণালয় বিচারকদের নিয়োগ দিচ্ছে না। বিচারকদের নিয়োগ দিচ্ছেন সুপ্রিম কোর্ট।

জাগো নিউজ : কোন বিচারকের বদলি হবে, কার পদোন্নতি হবে, তার সবই তালিকা করে আইন মন্ত্রণালয়। আর নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন ঠিক এখানেই...

শফিক আহমেদ : তালিকা তৈরি করে প্রস্তাব দেয় আইন মন্ত্রণালয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা রাখেন সুপ্রিম কোর্ট।

জাগো নিউজ : তাহলে সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদের যে স্পিরিট (নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ), এর ফলাফল কী?

শফিক আহমেদ : এটি সবার কাছেই এখন পরিষ্কার। আইন মন্ত্রণালয়ই যদি সব করার ক্ষমতা রাখে তাহলে সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর দরকার থাকে না।

জাগো নিউজ : অনেকেই বলছেন, গেজেটকৃত নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি বিচার বিভাগের ওপর একটি রাজনৈতিক আঘাত...

শফিক আহমেদ : তারা রাজনীতির উদ্দেশ্যেই এমনটি বলছেন। সমালোচনার জন্যই শুধু এমন সমালোচনা।

আইন মন্ত্রণালয়ের তো কাজ আছে। এটি তো অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে আসা ফাইলে আইনের লঙ্ঘন হয় কিনা, সেটা যাচাই করা আইন মন্ত্রণালয়ের কাজ। সকল মন্ত্রণালয়ের জননী হচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়। বৈধ-অবৈধ সকল বিষয় যাচাই করার ক্ষমতা রাখে এ মন্ত্রণালয়।

জাগো নিউজ : নিম্ন আদালতের শৃঙ্খলাবিধির ক্ষেত্রেও কি তাই?

শফিক আহমেদ : না। নিম্ন আদালতের বিধি দেখবে সুপ্রিম কোর্ট। এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই।

নিম্ন আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করছে। প্রশ্ন অন্য জায়গায় তোলা যেতে পারে। বিচারকরা কেনো মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করছেন না। বছরের পর বছর মানুষ মামলায় লড়ছেন। সাক্ষী নিয়ে আসছেন। সাক্ষীর খরচ দিতে হচ্ছে। সামান্য ঘটনায় বিচারক শুনানি মুলতবি করে দিচ্ছেন। হয়রানি হচ্ছেন ভুক্তভোগী মানুষ।

এএসএস/এমএআর/জেআইএম

আরও পড়ুন