মন ভালো নেই মুক্তামণির
দরজায় দুবার টোকা দিতেই খুলে দিলেন ইব্রাহিম হোসেন। ভেতরে বিছানায় গোমড়া মুখে শুয়ে মোবাইল ফোনে গেমস খেলছিল তার মেয়ে মুক্তামণি। তার বেডের বিপরীত দিকের বেডে শুয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল দেড়বছর বয়সী ছোট ভাই।
হাফপ্যান্ট পরিহিত মুক্তামণির উদোম শরীরে জীর্ণশীর্ণ দুটি পায়ের দিকে তাকাতেই চোখ পড়ল দগদগে ক্ষতচিহ্ন। দুই পায়ের রান থেকেই চামড়া নিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হাতে একাধিকবার অস্ত্রোপচার ও স্কিন গ্রাফটিং করা হয়েছে। ঘা শুকিয়ে গেলেও দগদগে ক্ষত চিহ্ন সেই স্মৃতি বহন করছে!
সোমবার বিকেল ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ষষ্ঠতলার কেবিন কক্ষে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
অন্য সময় মিডিয়াকর্মী দেখলেই মুক্তামণির ঠোঁটে হাসির রেখা দেখা দিলেও আজ ভাবান্তর নেই। তার বাবা ইব্রাহিম হোসেন জানান, গতকাল রোববার পর্যন্ত মুক্তামণির হাত খোলাই ছিল। কিন্তু হাত ফুলে যাওয়ায় চিকিৎসকরা আজই হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়েছেন।
জুনিয়র চিকিৎসকরা এতদিন মুক্তামণিকে বলেছিল ১৬ ডিসেম্বরের আগেই বাড়ি ফিরতে পারবে কিন্তু আজ প্রেসার ব্যান্ডেজ বাঁধার সময় বলেছে হাতের উন্নতি না হলে হয়তো পরে বাড়ি ফিরতে হবে। এ কথা শুনার পর থেকে বাড়ি ফিরতে পারবে কি পারবে না, সেই চিন্তায় মন খারাপ করে বসে আছে। তাছাড়া প্রেসার ব্যান্ডেজ লাগানোর পর হাতে মারাত্মক চুলকানি হচ্ছে। সেই যন্ত্রণার কারণেও অস্থির সময় কাটছে তার।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মুক্তামণির বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, গত পাঁচ মাস ধরে মেয়েটির রাত কাটছে হাসপাতালের কক্ষে। বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে মেয়েটি বাড়ি ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। গতকাল পর্যন্ত বাড়ি ফেরার আনন্দে হাসিখুশি থাকলেও আজ দুপুর থেকে মন খারাপ করে বসে আছে।
হাসপাতালের কক্ষে মুক্তামণির সময় কিভাবে কাটে জানতে চাইলে মুক্তার মা জানান, তার বাবার এক বন্ধু অনেক বছর আগে ডিবি ভিসা পেয়ে আমেরিকায় গেছে। বন্ধুর মেয়ের জন্য সে একটি দামি অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনে দিয়েছে। ওই মোবাইল ফোনটিতে গেমস খেলেই তার সময় কাটে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত তার জমজ বোনের সঙ্গে খেলাধুলা করে সময় কাটলেও ফাইনাল পরীক্ষা দেয়ার জন্য মেয়েকে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। বোন না থাকায় এখন গেমস খেলেই তার বেশিরভাগ সময় কাটছে।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে মুক্তামণি জানায়, হাসপাতালে আর ভালো লাগে না। বাড়ি ফিরতে মন চায়। কবে ছুটি হবে তা জানতে চায় মুক্তামণি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বার্ন ইউনিটের জাতীয় সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, মুক্তামণিকে বাড়িতে বেড়াতে পাঠানো হবে। তবে তা ১৬ ডিসেম্বরের আগে সম্ভব নয়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে ছুটি দিয়ে মাসখানেক গ্রামে কাটিয়ে আসার সুযোগ দেয়া হবে।
ডা. সেন জানান, মুক্তামণির হাতটি এতদিন খোলা থাকলেও হঠাৎ করে ফুলে যাওয়ায় আজ প্রেসার ব্যান্ডেজ লাগানো হয়েছে। হাতের সমস্যা ছাড়াও মুক্তামণির অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুক্তামণিকে সুস্থ করে তুলতে তারা আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিরল চর্মরোগে আক্রান্ত সাতক্ষীরার শিশু মুক্তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত ৯ জুলাই জাগো নিউজে ‘লুকিয়ে রাখতে হয় মুক্তাকে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর মুক্তার চিকিৎসা দেয়ার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন।
এমইউ/জেএইচ/আরআইপি