রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পানিতে জীবাণু
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের জন্য জরুরি ভিত্তিতে দুই হাজার ১২৯টি অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। কিন্তু ৭১ শতাংশ নলকূপের পানিতে ডায়রিয়াসহ অন্য পানিবাহিত রোগের জীবাণু পাওয়া গেছে। এ কারণে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার চরম অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিপর্যয় রোধে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে ক্যাম্পসমূহে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা এবং অন্য ব্যয় নির্বাহের জন্য ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ হতে প্রাপ্ত বরাদ্দের অতিরিক্ত ১৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এ অর্থ দিয়ে বসানো হবে আরও এক হাজার গভীর নলকূপ এবং উন্নয়ন করা হবে স্যানিটেশন কার্যক্রম। এসব তথ্য উল্লেখ করে অর্থ বিভাগের কাছে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের মানবিক দিক বিবেচনায় নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে এ অর্থ বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। তবে ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে যদি কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকে তাহলে সে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করে অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে হবে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট শাখা অর্থমন্ত্রীর জন্য একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে আশ্রয়প্রার্থীদের মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত সমন্বয় সভার সিদ্ধান্ত এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্তের আলোকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ১৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়।
ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনাক্রমে নয় কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। বর্তমানে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত আরও ১৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।
বর্তমান প্রস্তাবে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজারটি গভীর নলকূপ স্থাপন, দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নারীদের জন্য ৪০০ গোসলখানা স্থাপন, ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০০ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার ক্রয় ছাড়াও পরিবহন ব্যয়, শ্রম মজুরি, পানি পরীক্ষা ও অন্য খাতে খরচ ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা।
এ বরাদ্দের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ বলেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য দুই হাজার ১২৯টি অগভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। কিন্তু সার্ভিল্যান্স কার্যক্রমের আওতায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২৩৬টি অগভীর নলকূপের পানির গুণগত মান পরীক্ষা করে ৭১ শতাংশের পানিতে বিভিন্ন ফিক্যাল কলিফার্মের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। যা ডায়রিয়াসহ অন্য পানিবাহিত রোগের সৃষ্টি করে।
এছাড়া আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ পানির স্থীতিতল নিচে নেমে গেলে অগভীর নলকূপে পানি না পাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। ফলে মিয়ানমার থেকে আগত বাংলাদেশে আশ্রিতদের মানবিক দিক বিবেচনায় নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য গভীর নলকূপ এবং নারীদের জন্য গোসলখানা স্থাপন ও মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রস্তাবিত বিভাজন অনুযায়ী ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের অর্থ বিভাগের অনুন্নয়ন বাজেটে ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত হতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ বলে গণ্য হবে। এটি চলতি অর্থবছরের স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটে সংশ্লিষ্ট কোডে সমন্বয় করা হবে।
তবে প্রস্তাবিত ব্যয়ের ক্ষেত্রে পিপিআর-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান ও নিয়মাচার যথাযথভাবে পরিপালন করতে হবে। ২০১৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে যদি কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকে তবে সে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করে অর্থ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। প্রস্তাবিত অর্থ ব্যয়ের বিস্তারিত প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৫ আগস্টের পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী মিয়ানমারের নাগরিকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয় লাখ ৩৭ হাজার ১৭০ জন। অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকায় এ সংখ্যা আরও বাড়ছে। ২৫ আগস্টের আগে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছিল দুই লাখ চার হাজার ৬০ জন।
এমইউএইচ/বিএ/এমএআর/এমএস