উড়াল সড়কে নতুন ভোগান্তি!
যানজটের তীব্র যন্ত্রণা থেকে নগরবাসী রেহাই পাবেন, তেমনি যাতায়াতের সময়ও অনেকটা কমে আসবে- এমন আশা নিয়ে গেল ২৬ অক্টোবর উদ্বোধনের পর যানচলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় রাজধানীবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার মৌচাক-মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারটি।
দীর্ঘ দিন ধরে এই এলাকার তীব্র যানজট কমাতে সহায়ক হবে এমন প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ফ্লাইওভারটি থেকে নামার পথের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। রাজারবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, ওয়্যারলেস গেইট, বাংলামোটরের দিকে নামার সময়ই পড়তে হচ্ছে যানজটে। যানজট তৈরি হচ্ছে ফ্লাইওভারের নিচের সড়কেও।
অথচ মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ছিল আলোচনা-সমালোচনা। রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি, জলাবদ্ধতা, খানা-খন্দে ভোগান্তিও ছিল চরমে। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে চলে একটানা নির্মাণকাজ। এত ভোগান্তি পোহানোর পরও রাজধানীবাসীর প্রত্যাশ ছিল এই ফ্লাইওভারের উদ্বোধনের মাধ্যেমে যানজটের কবল থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা পুরণ হলো না।
ফ্লাইওভারের প্রতিটি নামার পথেই বাধছে যানজট। এই যানজট ফ্লাইওভারের উপরের চলে যাচ্ছে। মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারে নামার পথের যানজটের কারনে বাংলামোটর এলাকায় যানজট বেড়েছে কয়েকগুন। নিচের সড়ক এবং ফ্লাইওভার দিয়ে আসা যানবাহনের কারণে বাংলামোটর সিগন্যালে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি যানজট তৈরি হচ্ছে।
প্রায় সময়ই বাংলামোটর মোড় থেকে ফ্লাইওভারের উপরের পথ পর্যন্ত যানজট দেখা যাচ্ছে। এতে ওই সিগন্যালে যানবাহন পার হতে আগের নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগছে।
সেখানেই ব্যক্তিগত গাড়িতে সিগন্যালে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী তৌহিদুর রহমান। তিনি বলেন,এই ফ্লাইওভারে ওঠার এবং নামার সব পথেই যানজট লেগে থাকে। এর আগে গতকাল মৌচাক অংশ থেকে ইস্কাটনে নামতে ১ ঘণ্টা সময় লেগেছে। এই কয়দিন চলাচল করে একই রকমের এক অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটা হলো প্রতিদিনই ফ্লাইওভার থেকে নামার পর ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে যায়।
যানজটে আটকে পড়া ভুক্তভোগী সিএনজি অটোরিকশা চালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই ফ্লাইওভার করে কোনো লাভই হয়নি। আগে শুধু নিচ দিয়ে গাড়ি আসতো। এখন ফ্লাইওভার দিয়েও আসছে। আগের তুলনায় এখন যানজট অনেক গুণ বেড়ে গেছে। ফলে ফ্লাইওভারের ওপর ও নিচে গাড়ির জটলার লাইন চলে যাচ্ছে মগবাজার হয়ে মৌচাক পর্যন্ত।
উদ্বোধনের পর থেকে এই ফ্লাইওভারের বিভিন্ন অংশে চলাচলের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, শুধু বাংলামটরের দিকে নয়, হলি ফ্যামিলির সামনে যানজটে পড়তে হয়। এ ছাড়া রামপুর, মগবাজার থেকে এসে রাজারবাগ নামার পথেও পড়তে হয় যানজটে।
সরেজমিনে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি যানজটে পড়তে হচ্ছে বাংলামোটরের দিকে। এই এলাকার গাড়ির যন্ত্রণাংশ ব্যবস্যায়ী লতিফুর রহমান বলেন, বাংলামোটরে আগে যানজট ছিল, তবে এমন যানজট ছিল না। ফ্লাইওভার খুলে দেয়ার পর থেকে এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিগন্যালে যাত্রীদের আটকে থাকতে হচ্ছে।
বাংলামোটর সিগন্যালে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি যানজট তৈরি হচ্ছে। এতে ওই সিগন্যালে যানবাহন পার হতে আগের চেয়ে বেশি সময় সিগন্যাল ছেড়েও যানজট কমাতে পারছেন না দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ-কমিশনার রিফাত রহমান শামিম জাগো নিউজকে বলেন, যে গাড়িগুলো রাজারবাগ-মৌচাক হয়ে ৩/৪টি সিগন্যাল পেরিয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত আসতো সেগুলো এখন ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে সিগন্যাল ছাড়াই অল্প সময়ে বাংলামোটরের দিকে চলে আসছে। যে কারণে এখানে যানজট হচ্ছে।
উড়াল সড়কটির বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও এই প্রকল্পের পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল জাগো নিউজকে বলেন, ফ্লাইওভারের সবগুলো নামর পথে তেমন একটা যানজট নেই। তবে বাংলামোটর সিগন্যালের আগ পর্যন্ত যানজট কিছুটা সৃষ্টি হচ্ছে, এটা আসলে ফ্লাইওভারের জন্য নয়। বাংলামোটরের এই সিগন্যালটি খুবই ব্যস্ত একটি সিগন্যাল আগে থেকেই। এখন ফ্লাইওভার দিয়ে যাতায়াতের সুবিধার কারণে চাপ আরো বেশি সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে যানজট দেখা দিচ্ছে।
ফ্লাইওভার হলেই যে যানজট কমে যাবে এটা ঠিক নয়, যানজট কমানোর জন্য অনেকগুলো পদক্ষেপের মধ্যে ফ্লাইওভার একটি পদক্ষেপ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এএস/এমএআর/এনএফ/বিএ/আইআই