সবজির চেয়ে মাংস সস্তা
বাজারে প্রতি কেজি শিমের দাম এখন ১৩০ টাকা। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা কেজি দরে। আর সাদা ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১২৫ টাকা। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারের দ্রব্যমূল্যের চিত্র অনেকটা এমন। সবজির দামের উলম্ফনের কারণে কিছু কিছু সবজির থেকে ব্রয়লার মুরগি সস্তায় মিলছে কিছুদিন ধরে।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, শুধু শিম বা টমেটো নয়; রাজধানীর বাজারগুলোতে এখন সব রকম সবজির দামই চড়া। গত শুক্রবার ৪০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া পটল, মুলা ও করলার দাম বেড়ে কয়েকদিনের ব্যবধানে বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। পেঁয়াজ ও মরিচের দামও বেশ চড়া। ১৩০ টাকা কেজি দরের নিচে নামছে না কাঁচামরিচ। আর কমছে না দেশি পেঁয়াজের ঝাঁজ। রাজধানীর বাজারগুলোতে পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে বর্তমানে ৮০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এছাড়া পেঁপে ও কচুরমুখী ছাড়া এখন রাজধানীর বাজারগুলোতে ৬০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজিই পাওয়া যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার কারওয়ানবাজার, রামপুরা, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া ও খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও মানভেদে শিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। গাজরের দাম ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আর সাধারণত সস্তায় পাওয়া যাওয়া লাল শাক ও সবুজ শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে।
এছাড়া নতুন করে দাম বেড়েছে পটল, ঝিঙা, করলা, ঢেঁড়শ, ধুন্দল ও বেগুনের। গত শুক্রবার ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পটল ও করলার দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। ধুন্দল, ঝিঙা ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। গত শুক্রবার যা ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে। বেগুন ও ঢেঁড়শের দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা।
শুধু বাজারেই নয়, রাজধানীর পাড়া-মহল্লার দোকান ও ভ্রাম্যমাণ দোকানে সবজির দামের অবস্থা আরও ভয়াবহ। পাড়া-মহল্লায় ভ্যানে ফেরি করে সবজি বিক্রেতাদের কাছে প্রতিটি সবজি বাজার মূল্যের চেয়ে কেজিপ্রতি ১০-১৫ টাকা পর্যন্ত বেশি রাখা হচ্ছে।
ফলে পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি কিনতে এখন নিম্ন ও নির্দিষ্ট মানুষের এখন ত্রাহি অবস্থা। সবজির মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সবজি বাদ দিয়ে অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ব্রয়লার মুরগি রাখছেন।
আগে যেখানে মাঝে-মধ্যে শখ করে মাংস খাওয়া হতো, এখন এমন অনেক পরিবারকে সবজির বদলে মুরগির মাংস খেতে হচ্ছে। ‘তবে এতে অবশ্য একটি উপকার আছে, নিম্নবিত্তের পুষ্টির ঘাটতি কমে আসবে!’ কথাগুলো বলছিলেন রামপুরা বাজারে সবজি কিনতে আসা মো. আমিনুল ইসলাম।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘দিনের পর দিন সব পণ্যের দাম বাড়ছে। দাম কমানোর বিষয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা থাকবে কেন? দাম কমানোর দায়িত্ব যাদের, তাদের তো দাম বাড়লে আর সমস্যা নেই। সমস্যা যত আমাদের মতো নিম্নআয়ের মানুষের।’
কারওয়ানবাজারে বাজার করতে আসা তেজগাঁওয়ের এক বাসিন্দা বলেন, ‘শুক্রবার সবজির দাম বেশি থাকে তাই একদিন আগেই বাজার করতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে ৪০ টাকা কেজি কেনা পটল এখন চাচ্ছে ৬০ টাকা।’
কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে সবজি খাওয়াই ছেড়ে দিতে হবে। ডাল, ভর্তা, ভাত আর মাঝে-মধ্যে ব্রয়লার মুরগি আলু দিয়ে ঝোল করে খেতে হবে। মহল্লায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকা কেজি, আর এখানে এক কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। তাহলে আপনিই বলেন, শিম খাব না ব্রয়লার মুরগি?’
বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের সবজি হিসেবে পরিচিত ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ বাজারে এসেছে বেশ আগেই। সম্প্রতি বাজারে এসব সবজির সরবরাহও বেড়েছে। সাধারণত শীতকালীন সবজির সরবারহ শুরু হলে বাজারে সবজির দাম কমে আসে, কিন্তু এবার শীতকালীন এসব সবজির দামও বেশ চড়া।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট আকারের ফুলকপি প্রতিপিস বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায় আর বাঁধাকপি পিস ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া ছোট আকারের লাউ ৪০ থেকে ৫০ টাকার নিচে মিলছে না।
তবে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়া কাঁচমরিচের দাম এখন অনেকটাই স্থির। তবে তা ১০০ টাকার নিচে মিলছে না। ফলে রাজধানীর বাসিন্দারা ধরেই নিয়েছেন ১০০ টাকা কেজি দরের নিচে কাঁচামরিচ মিলবে না। বিভিন্ন বাজারে কাঁচামরিচ বিক্রি হতে দেখা যায় ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়।
মরিচের পাশাপাশি গত সপ্তাহ থেকে বাড়তে থাকা পেঁয়াজের দাম দু’দিন ধরে কিছুটা স্থির রয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি।
রামপুরার বনশ্রী বাজারের সবজি বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, দু’দিন ধরে সব সবজির দাম আবার বেড়েছে। আড়তে মাল আনতে গেলে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন বৃষ্টিতে সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে সরবরাহ কম। তাই দাম বাড়তি। বেশি দামে সবজি কিনে আনার কারণে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, সবজির দাম চাহিদা ও সরবরাহের উপর নির্ভর করে। বাজারে চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি। কারসাজি করে সবজির দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। কারণ সবজি মজুদ করে রাখা যায় না। পচনশীল হওয়ায় মজুদ করলে সবজি নষ্ট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, সবজির সরবরাহ বাড়লে অথবা ক্রেতা বেশি দামে না কিনলে দাম এমনি-তে কমে আসবে।
এমএএস/এসআর/এমএআর/বিএ