ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

ঐশীর মৃত্যুতে দু’রকম কথা বাবা-মায়ের

আদনান রহমান , জসীম উদ্দীন | প্রকাশিত: ০৬:৫০ এএম, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

রাজধানীর মিরপুরের শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজের ছাত্রী ঐশী জাহান মীমের আকস্মিক মৃত্যুতে হতভম্ব সহপাঠী, শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা। তবে কলেজ পড়ুয়া মেয়ের মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন বাবা-মা। মৃত্যুর কারণ নিয়ে দুই রকম তথ্য দিচ্ছেন তারা। অন্যদিকে কোনো ধরনের তথ্য প্রমাণ না পেয়ে ‘অপমৃত্যু’র মামলা নিয়েছে পুলিশ।

গত ২ অক্টোবর (সোমবার) নিজ বাড়িতে মারা যায় মিরপুরের শহীদ আনোয়ার গার্লস কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ঐশী। ওইদিন আশুরার রোজা রেখেছিল সে। বাড়িতে বাবা-মা, ভাই এবং বোনের সঙ্গে থাকত সে। চটপটে মেয়েটির আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে সহপাঠীদের দাবি, বাবা-মা’র নির্যাতনে ঐশী মারা গেছে।

ঐশীর মৃত্যু নিয়ে রূপনগর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা (মামলা নম্বর-২৮) করছেন মা রাজিয়া খাতুন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ঐশী সেদিন (২ অক্টোবর) বাড়িতে ছিলেন। হঠাৎ ঐশীর ঘরে তার মা দেখতে পান সে (ঐশী) ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলছে। সে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তাকে নামিয়ে কিছুক্ষণ ঘরেই রাখা হয়, পরে স্থানীয় ইসলামিয়া হাসপাতাল ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেয়া হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা ঐশীর কোনো চিকিৎসা না করায় (তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছে) মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করেননি। ওই রাতেই ঐশীর মরদেহ হাসপাতাল থেকে মিরপুরের বাসায় নেয়া হলে স্থানীয়দের ফোনে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ গলায় ফাঁস লাগানোর মতো দাগ দেখতে পায়। পরে ঘটনাস্থলে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয় এবং বাবা-মা’র অনুরোধে মরদেহ ময়নাতদন্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। তবে একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করে পুলিশ।

এ দিকে মামলা দায়েরের তিনদিন পর রূপনগর থানায় গিয়ে উপস্থিত হন ঐশীর বাবা ওবায়দুল হক। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তিনি জানান, মেয়ের মৃত্যুর ভিন্ন গল্প। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে হঠাৎ করেই বলে তার খারাপ লাগছে। পরে ছোট মেয়ে পানি এনে দেয়। আকস্মিকভাবেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ফাঁসি কিংবা আত্মহত্যা কোনো ঘটনা ঘটেনি। সেদিন ঐশীর মা ভীত হয়ে ফাঁসির কথাটি বলেছিল। আর গলার দাগটি ছিল কয়েকদিন আগের। রিকশার চাকার সঙ্গে ঐশীর ওড়না পেঁচিয়ে গলায় কালচে দাগটি হয়ে যায়।’

ঐশীর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী রূপনগরের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুরতহাল প্রতিবেদন করতে শরীরে ক্ষত চিহ্ন ও দাগ দেখা যায়।’

সোমবার (১৫ অক্টোবর) ঐশীর বাবা ওবায়দুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঐশীর মৃত্যু স্বাভাবিক। হঠাৎ অসুস্থতাজনিত কারণে। এখানে আত্মহত্যা কিংবা নির্যাতনে মৃত্যু হয়নি। কিন্তু জানি না কেন লোকজন শত্রুতাবসত ভিন্ন তথ্য দিয়ে আমাদের শোকাহত পরিবারকে বিব্রত করছে।’

এদিকে ঐশীর প্রতিবেশীরা ও তার কলেজের শিক্ষার্থীরা বাবা-মা’র নির্যাতনে ঐশীর মৃত্যু হয়েছে বলে রূপনগর থানায় ওসির কাছে অভিযোগ করেছেন। ঐশীর এক সহপাঠী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কলেজে প্রায়ই ঐশীকে কান্নাকাটি করতে দেখতাম। শরীরে মারধরের দাগও দেখেছি। পারিবারিক কলহ ছিল বলে জানতাম। তবে আত্মহত্যা করবে এমন মেয়ে নয় ঐশী।’

আরেক সহপাঠী জাগো নিউজকে বলনে, ‘মারা যাওয়ার দিন ঐশী ক্লাস করেছে। একজন বিকেলে এসে বললো পরিবারের লোকজন তাকে মারধর করেছে। সন্ধ্যায় খবর আসে ঐশী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এরপর আত্মহত্যার খবর আসে। রাতে ওর বাসায় গিয়ে শুনি সে ব্রেনস্টোকে মারা গেছে। আমাদের কাছে তার মৃত্যুকে রহস্যজনক মনে হচ্ছে।’

ঐশীর এক স্কুল সহপাঠী বলেন, ‘ঐশীর পরিবার ওকে খুব নির্যাতন করত। যেদিন সে মারা যায় সেদিন রাতে আমাকে তাদের বাসায় ঢুকতে দেয়া হয়নি। এটা রহস্যজনক।’

মৃত্যুর রহস্যের বিষয়ে পুলিশের রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকেই থানায় এসেছে। অবিবাহিত ওই মেয়ের (ঐশী) অভিভাবকের অনুরোধে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। পুলিশি তদন্তে নির্যাতন-মারধর বা আত্মহত্যার প্ররোচনাও আমরা পাইনি।’

এআর/জেইউ/আরএস/এআরএস/আরআইপি

আরও পড়ুন