১ কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহে ব্যর্থ বিএনপি, বাড়ল সময়
দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে ‘প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ’ অভিযানের ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দুই মাসব্যাপী এই কর্মসূচিতে এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহের টার্গেট করেছিলেন তিনি। কিন্তু তিন মাস অতিবাহিত হলেও টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হয়েছে দলটি।
টার্গেট পূরণে আরও এক মাস সময় বাড়ানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
চলতি বছরের ৩০ জুন (শুক্রবার) গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ’ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, গতবার (২০১৩ সাল) ৫০ লাখ নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল। এবার আমাদের টার্গেট এক কোটি। ওই অনুষ্ঠানে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সবাই মিলে দায়িত্ব নিলে এটা কঠিন কাজ নয়।’
বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে প্রায় ৭০ লাখ সদস্য ফরম বিক্রি হয়েছে। বিক্রিত এসব ফরম থেকে ৬০ লাখের মতো নতুন সদস্য পাওয়া যাবে। টাকার অঙ্কে সদস্য সংগ্রহ ফরম বিক্রি করে বিএনপির আয় হয়েছে প্রায় সাত কোটি টাকা।
সারাদেশে পাঠানো সদস্য ফরমের মধ্যে বেশি বিক্রি হয়েছে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফেনী জেলায়। তবে বন্যার কারণে রংপুর ও সিলেট বিভাগে ফরম বিক্রি কিছুটা কম। বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম ১ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় নতুন করে অক্টোবর মাসেও কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হবে। অবশ্য দলটির কেউ কেউ বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ কয়েকটি জেলায় হঠাৎ বন্যা এবং আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়ার কারণে সদস্য সংগ্রহ অভিযানটি মাঝপথে থমকে যায়।
এছাড়া সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রমে ইউনিয়ন পর্যায়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার মুখে সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়নি বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতা। এ কারণে এক কোটির টার্গেট পূরণে আরও এক মাস সময় বাড়ানো হয়েছে।
সর্বশেষ ২ অক্টোবর (মঙ্গলবার) দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে পাঠান হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১ জুন দুই মাসব্যাপী প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ কর্মসূচি এক মাস বর্ধিত করা হয়। পুনরায় এ কর্মসূচি ১ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
মির্জা ফখরুল চিঠিতে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনি আপনার জেলাধীন উপজেলা, থানা ও পৌরসভাগুলোতে দল ঘোষিত যে পরিমাণ সদস্য ফরম সংগ্রহ করার কথা (ইউনিয়ন ওয়ার্ডে ন্যূনতম ২০০, পৌরসভা ওয়ার্ডে ৩০০, মহানগর ওয়ার্ডে ন্যূনতম ১০০০) তা কেন্দ্রীয় দফতর থেকে সংগ্রহ করেননি। অতএব, আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কেন্দ্র নির্ধারিত বইগুলোর মধ্যে সংগৃহীত বইগুলো ব্যতিরেকে অবশিষ্ট সদস্য বই আপনাকে সংগ্রহের জন্য অনুরোধ করছি। সব পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সদস্য ফরম পূরণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সদস্য বইয়ের কেন্দ্রের অংশটুকু কেন্দ্রীয় দফতরে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করছি। অন্যথায় আপনি কেন্দ্রীয় নির্দেশ অবজ্ঞা করেছেন বলে গণ্য হবে।’
সম্প্রতি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সারাদেশে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য নতুনভাবে প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে। আমরা ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময়ের পরও এক মাস সময় বাড়িয়েছিলাম। তাও শেষ হয়েছে। এখন দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলবে ১ নভেম্বর পর্যন্ত।
সদস্য সংগ্রহের বিষয়ে চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি বাহিনীর বাধা ও নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও আমার জেলায় নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বর্ধিত সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারব।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ইতোমধ্যে কিশোরগঞ্জ জেলায় সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি মাসে বাকি ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার মধ্যে সাতটিতে সাম্প্রতিক বন্যায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানবিক বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব উপজেলায় সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম সেভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। নতুন করে সময় দেয়ায় আশা করছি আমরা লক্ষ্য পূরণ করতে পারব।
‘বর্তমানে ঘরে বসেও কথা বলার পরিস্থিতি নেই’ দাবি করে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন বলেন, প্রতিকূল পরিস্থিতি তো রয়েছেই, পাশাপাশি রোহিঙ্গা ইস্যু, বন্যাসহ নানা কারণে দলের নেতারা ব্যস্ত ছিলেন। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
‘সরকার বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানে বাধা দিচ্ছে’- এমন অভিযোগ করে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, বন্যা ও রোহিঙ্গা সঙ্কট দেখা দেয়ায় মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। এজন্য নির্ধারিত সময়ে টার্গেট পূরণ করতে পারিনি। আশা করি নতুন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্থাৎ এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হব।
নতুন সময়ের মধ্যে এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহ করা যাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জাগো নিউজকে বলেন, যৌক্তিক কারণে আমরা সময় বাড়িয়েছি। আমাদের টার্গেট ছিল এক কোটি নতুন সদস্য সংগ্রহ। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি রোহিঙ্গা সঙ্কটের মতো মানবিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টার্গেট পূরণে সময়সীমা বৃদ্ধি করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না।
‘নির্ধারিত নতুন সময়ের মধ্যে টার্গেট পূরণ হবে’ বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এমএম/এমএআর/আরআইপি