ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

হঠাৎ বেড়েছে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতা

আমানউল্লাহ আমান | প্রকাশিত: ০২:৫২ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে পশ্চিমা কূটনীতিকদের তৎপরতা। শুধু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ নয়, এক সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপিসহ দেশের সুশীল সমাজ ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তারা।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে হঠাৎ করে তৎপর হয়ে উঠেছেন পশ্চিমা দেশগুলোর কূটনীতিকরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে; সব দল কি অংশগ্রহণ করবে; সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন সম্পন্নে উন্নয়ন সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকা কী হবে; সুষ্ঠু ও সবার গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতি কোন পথে পরিচালিত হবে- এমন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমামের সঙ্গে অনির্ধারিত এক বৈঠকে বসেন মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ওই বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরামর্শক বিল মোয়েলার, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন-গণতন্ত্র ও মানবাধিকার কর্মী এবং সরকারি মাঠ পরামর্শক জাফরি নীল ভেনিস উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য জাগো নিউজকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনার কথা জানতে চেয়েছিলেন তারা। ওই নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী হবে- সেটা জানতেও আগ্রহ দেখান মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।

‘আমরা মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের স্পষ্টভাবে জানিয়েছি যে, নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়া সম্পূর্ণ তাদের (বিএনপি) নিজস্ব বিষয়। এ ব্যাপারে আমরা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছি না। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সবার অংশগ্রহণে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন। সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি’- যোগ করেন তারা।

মার্কিন দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তা বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। তারা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গেও বৈঠক করেন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাংলাদেশে সফররত ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দলটির সিনিয়র নেতাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্ট মেম্বার এনন মেইন’র নেতৃত্বে বৈঠকে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বৈঠকে অংশ নেন।

ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে এনন মেইন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ব্রিটিশ কনজারভেটিভ পার্টির ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। তারা আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ দেখতে চান। জনগণ যাতে নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তেমন পরিস্থিতি দেখতে চায় প্রতিনিধি দল।

দলটি ২১ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও বৈঠক করে।

এর আগে ১৮ জুলাই রাজধানীর বনানী সেতু ভবনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার। ওই সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের বলেন, যেহেতু আগামী বছর আমাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ওই নির্বাচন কেমন হবে- এটা নিয়ে সবার মধ্যে একটা কৌতূহল থাকতেই পারে।

‘আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়। আমি তাদের স্পষ্টভাবে একটা কথা বলেছি, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে’- বলেন ওবায়দুল কাদের।

গত ৩১ মে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ও ইউএসএআইডির তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেন।

আলোচনা শেষে মার্শা বার্নিকাট সাংবাদিকদের জানান, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি ভয়হীন নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র আগামীতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করতে চায়। শুধু সবার অংশগ্রহণই যথেষ্ট নয়, আগামী নির্বাচনে যাতে প্রার্থীরা সুষ্ঠুভাবে প্রচারণা চালাতে পারেন, ভোটাররা যাতে ভোট প্রয়োগ করতে পারেন, এমনকি ভোট গণনা যেন স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়- তা নিশ্চিত করতে হবে।

এইউএ/এমএআর/আরআইপি

আরও পড়ুন