ধারাবাহিক ‘বিতর্কে’ খাদ্যমন্ত্রী
বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিক ‘বিতর্ক’ সৃষ্টি করছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। ব্রাজিল থেকে ‘পচা’ গম আমদানি, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারাধীন বিষয় নিয়ে মন্তব্য এবং সম্প্রতি চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে নতুন করে বিতর্কে জড়িছেন খাদ্যমন্ত্রী।
ঈদুল আজহার আগে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৪২-৪৪ টাকা থাকলেও এখন তা ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এরই মধ্যে গত ১৪ সেপ্টেম্বর চাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমান্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, চাল নিয়ে রাজনীতি চলছে। দেশে চালের কোনো সঙ্কট নেই। চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে চালের মূল্য বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
মজুতদার, আড়তদার, ব্যবসায়ী ও মিলমালিকদের হুঁশিয়ার করে মন্ত্রী বলেন, সময় আছে ভালো হয়ে যান। যারা চাল নিয়ে চালবাজি করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওএমএস চালু হবে। প্রতি কেজি চাল ১৫ টাকা ও আটা ১৭ টাকা দরে বিক্রি হবে বলেও জানান তিনি।
তবে বাস্তবে ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৩০ টাকা করে সর্বোচ্চ ৫ কেজি হিসেবে আতপ চাল বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। তা সত্ত্বেও চালের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসায় বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চালকল মালিক, ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে চালের মূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারকে দায়ী করেন চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
এর আগে ২০১৬ সালের ৫ মার্চ রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র : সরকার, বিচার বিভাগ ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের সমালোচনা করেন।
ওই সময় প্রধান বিচারপতি নেপাল সফরে ছিলেন। তিনি দেশে ফিরে ৮ মার্চ দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন। তাদের ১৪ মার্চের মধ্যে রুলের জবাব দাখিল এবং ১৫ মার্চ আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। নির্ধারিত তারিখের মধ্যে উভয় মন্ত্রী আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দাখিল করেন।
১৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আদালতে হাজির হলেও খাদ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকায় আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন করেন। আদালত ২০ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এ অবস্থায় ২০ মার্চ খাদ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়ে সম্পূরক ব্যাখ্যা দাখিল করেন। ওই দিন আদালত খাদ্যমন্ত্রীর জবাব দেখে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আদালত ২৭ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করে দুই মন্ত্রীকে ওই দিন হাজির থাকতে নির্দেশ দেন। নির্ধারিত দিনে দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে শুনানি শেষে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় গত ১ সেপ্টেম্বর।
রায়ে বলা হয়, ওই দুই মন্ত্রী সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন।
এর আগে ২০১৫ সালের জুনে ব্রাজিল থেকে আমদানি করা দুই লাখ টন গম নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। ব্রাজিল থেকে ৪০০ কোটি টাকা দামের দুই লাখ টন গম আমদানির কার্যাদেশ পায় ইমপেক্স ইন্টারন্যাশনাল ও ওলাম ইন্টারন্যাশনাল নামের দুটি প্রতিষ্ঠান।
এর মধ্যে ইমপেক্স দেড় লাখ এবং ওলাম ইন্টারন্যাশনাল পায় ৫০ হাজার টন গম আমদানির কার্যাদেশ। গম আমদানির পর চট্টগ্রাম বন্দরে পরীক্ষার সময়ই গলদ ধরা পড়ায় তা আটকে যায়। কিন্তু বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন খাদ্য অধিদফতরের নীতিনির্ধারকরা। প্রথমে এসব গম ফেরত নেয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় যথাযথ সাড়া না দেয়ায় পুলিশ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জানায়। পরে গম নিয়ে সংসদে বিবৃতি দেন খাদ্যমন্ত্রী।
এইউএ/এএইচ/এমএআর/এমএস