ভিডিও EN
  1. Home/
  2. বিশেষ প্রতিবেদন

সহায়ক সরকার না সমঝোতা, কোন পথে বিএনপি?

মানিক মোহাম্মদ | প্রকাশিত: ০২:১৪ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৫ জানুয়ারির মতো আর কোনো নির্বাচন আগামীতে হবে না, বিএনপিকে বাইরে রেখেও দেশে কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না- দলটির নেতাদের এমন অবস্থানের বিপরীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপির দাবি অগ্রাহ্য করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাই থাকবেন।

জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের কট্টর অবস্থানে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে এটা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। আবারও কি জ্বালাও-পোড়াও পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে, নাকি উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে সাধারণ নির্বাচন- এ নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।

বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপি সহায়ক সরকারের দাবি তুলে আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে। শেষ মুহূর্তে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকেই মেনে নেবে দলটি। তবে শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান রাখা হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বিএনপি।

একটি মহল থেকে বলা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে নিয়ম অনুযায়ী বিএনপিকে নিবন্ধন হারাতে হবে। সঙ্গত কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেই বিএনপিকে সংসদে ফিরতে হবে।

বর্তমানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন সফর করছেন। কিছুদিনের মধ্যে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। দলীয় নেতারা বলছেন, দেশে ফিরেই তিনি সহায়ক সরকারের রূপরেখা তুলে ধরবেন। দাবি আদায়ে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

‘নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে’- এমনও বিশ্বাস দলটির নেতাকর্মীদের।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সহায়ক সরকারের রূপরেখা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলেই সহায়ক সরকারের রূপরেখা গঠন করা হয়েছে। খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে রূপরেখা ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত করবেন।

দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সহায়ক সরকার ঘোষণা করা হলেও অন্য কোনো ফর্মুলায় যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পায় বিএনপি তাহলে তারা সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতায় আসবে। এক্ষেত্রে সরকার অগ্রণী ভূমিকা পালন না করলে আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম বলেন, সহায়ক সরকারের দাবি উত্থাপনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়তো বলবেন, আপনাদের দাবি মেনে নিলাম অথবা আপনাদের দাবি মেনে নেয়া যাবে না। মাঝামাঝি রাস্তাটা বন্ধ না করে আলাপ-আলোচনা করে সমঝোতার পথে আমরা চলতে পারি।

‘বিএনপি সহায়ক সরকারের দাবি উত্থাপনের পর সরকার যদি প্রত্যাখ্যান করে, তারা যদি বলে এসব দাবি মেনে নেয়া হবে না; সেক্ষেত্রে বিকল্প আলাপ-আলোচনা করা যেতে পারে। বিএনপি সেটা প্রত্যাখ্যান নাও করতে পারে’- যোগ করেন তিনি।

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জাগো নিউজকে বলেন, আমরা মূলত আলাপ-আলোচনা করে সহায়ক সরকার গঠনের বিষয়টি বলছি। তবে এর মাধ্যমে মীমাংসা না হলে তখন তো স্বাভাবিকভাবেই আমাদের আন্দোলনের পথ খোলা থাকবে। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কেমন হয় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আমরা তা দেখেছি। এমন পরিস্থিতিতে দলীয় সরকারের অধীনে আরেকটি নির্বাচন হলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে- এটা তো ভাবার কোনো কারণ নেই।

সাবেক এই ছাত্র নেতা বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেয়ার পর এর ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। তবে সহায়ক সরকারই চূড়ান্ত নয়। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরও প্রস্তাব থাকতে পারে। মূল বিষয় হচ্ছে, লুটপাটের নির্বাচন যাতে না হয়।

‘জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিয়ে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করা যেখানে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে’- বলেন শামসুজ্জামান দুদু।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বলেন, দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়। তারা নির্বাচনকালীন সময়ে এমন কাউকে দেখতে চায় যারা সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করতে পারবে। ক্ষমতাসীনরা তখন দায়িত্বে থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে জনগণ নিরপেক্ষ সরকার চায়।

তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে ঘোষিত রূপরেখা নিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে হবে। অন্যথায় জনগণ একদলীয় নির্বাচনের রায় মেনে নেবে না।

দলটির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আজ দেশে গণতন্ত্রের সঙ্কট, রাজনীতির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের সমস্যা নতুন করে যুক্ত হয়েছে, কিছুদিন আগে দেশে বন্যাও হয়ে গেল। দেশে এখন অনেক সমস্যা। এজন্য আমি মনে করি, সরকারের উচিত সবাইকে নিয়ে কাজ করা। বিরোধী দলগুলোকেও সমান সুযোগ দেয়া।

‘মূল কথা হলো আলাপ-আলোচনা ছাড়া তো চলমান সমস্যাগুলোর সমাধান হবে না। তাই সবার সঙ্গে সরকারকে আলোচনা করে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে’- যোগ করেন তিনি।

‘আলাপ-আলোচনাটা কিসের ভিত্তিতে হবে’- এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) দেশে ফিরে উপযুক্ত সময়ে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবেন। রূপরেখা নিয়ে আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। সরকারের সঙ্গেও আলোচনা করব।

‘ম্যাডামের রূপরেখা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে না পারলে চলমান সঙ্কটের সমাধান হবে না’- বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

এমএম/এমএআর/আইআই

আরও পড়ুন