দুর্গত এলাকায় মানুষের চেয়ে পশু খাবারের সঙ্কট বেশি
বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের চেয়ে পশু খাবারের সঙ্কট বেশি। অনেক এলাকায় বন্যার পানিতে মাঠ-ঘাট, ফসলি জমি এমনকি চাষ করা ঘাসের জমিও ডুবে গেছে। এছাড়া বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে কৃষকের গচ্ছিত রাখা খড়ও। ফলে পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
দুর্গত এলাকায় অনেকের ঘরের মধ্যে কোমর পানি। বানের পানি কমার আশায় কেউ কেউ ভিটে-বাড়িতেই শত কষ্ট সয়ে বসবাস করছেন। কেউবা নিরূপায় হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তা কিংবা উঁচু স্থানে। বানভাসিরা শত কষ্টের মাঝে নিজেদের খাবারটা সংরক্ষণ করলেও গবাদি পশুর খাবার অনেকেই সংরক্ষণ করতে পারেননি।
শুধু দানাদার খাবার ছাড়া পশুকে খাওয়ানোর জন্য তৃণজাতীয় কোনো খাবার পাচ্ছে না কৃষক। প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে গৃহপালিত এসব পশু দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। ঘাস, খড় পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় এ সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনেক জায়গায় টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না পশুর খাবার। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে কম দামে পশু বিক্রি করছেন।
বিশেষ করে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, পাবনা, জামালপুর ও ফরিদপুরে বন্যাকবলিত এলাকায় পশু খাবারের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি, বেসরকারিভাবে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে। সরকারি, বেসরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে রিলিফ হিসেবে চাল, ডাল, তেল ও শুকনো খাবার পেয়েছেন। তা দিয়ে তারা কোনো রকমে দিনাতিপাত করছেন। কিন্তু পশু খাবারের ব্যবস্থা কেউ করছেন না। কোনো কোনো জায়গায় প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে পশুর জন্য সামান্য ঘাসের ব্যবস্থা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।
জাগো নিউজের নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, উজান থেকে নেমে আসা পানি আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর বাঁধ ভেঙে নওগাঁর সদর, মান্দা, রাণীনগর, আত্রাই, বদলগাছী, পত্মীতলা, মহাদেবপুর, ধামইরহাট, সাপাহার ও পোরশা উপজেলার ৬৫টি ইউনিয়নের প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে দুর্গত এলাকা মান্দায় প্রায় ১ লাখ মানুষ পানিবন্দি। আশ্রয় নেয়া মানুষদের গবাদি পশু নিয়ে কষ্টের সীমা নেই।
বাঁধে আশ্রয় নেয়া মান্দার দাসপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মানুষের খাবার জুটলেও গরু-ছাগল নিয়ে জ্বালায় পড়েছি। গরু-ছাগলের কষ্টের শেষ নেই। ঘাস, খড় কিছুই নেই। সব ডুবে গেছে। বেশি দাম দিয়েও কোথাও খড় ও ঘাস পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলার বড় বেলালদহ মাদরাসা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসা মাঠে প্রায় দুই থেকে তিনশ গরু বাধা। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে গরুগুলো দুর্বল হতে দেখা গেছে।
শামুকখোল গ্রামের হাসেম আলী নামে এক কৃষক বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছে। নিজেদের পেটে তাও একটু খাবার যাচ্ছে। কিন্তু টাকা দিয়েও খড় পাওয়া যাচ্ছে না। গত বুধবার প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে কিছু ঘাস দিয়েছিল। সেটা একদিনেই শেষ হয়ে গেছে।
বগুড়ার ধুনট উপজেলার খন্দকার পাড়ার শামসুল খাঁর ছেলে হেলাল জানান, পানির কারণে গবাদি পশু মাঠে নিতে পারছি না। শুধু খাবারের অভাবের কারণে ১০টি ভেড়া খুব কম দামে বিক্রি করেছি।
সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার কৃষক সোলেমান শেখ জানান, ৫টি গরু মোটা তাজাকরণ করেছি।কিন্তু ঘাসের জমি ডুবে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছি। ৩৫ টাকা কেজি ভূষি, ৩৫ টাকা কেজি ক্ষুদ, ক্যাটেলের কেজি ২৭/২৯ টাকা। এত দাম দিয়ে পশু খাবার কেনা অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়া শুধু দানাদার খাবার দিয়ে পশু পালন সম্ভব নয়।
পাবনার শাহজাদপুরের খামামি জোহা জাগো নিউজকে বলেন, গত বছর ভালো দামে গরু বিক্রি করেছিলাম। ভালো লাভের আশায় এবার আরও বেশি বিনিয়োগ করেছি। চারটি গরু মোটা তাজাকরণ করছি। কিন্তু বন্যার কারণে গরুকে কাঁচা ঘাস দিতে পারছি না। শুধু দানাদার খাদ্য খাওয়ানোর জন্য বিনিয়োগের পরিমাণ প্রতিদিন বাড়ছে। মাঠ থেকে ঘাস সংগ্রহের কোনো উপায় নেই। কারণ মাঠে এখন পানি আর কাদা।
কুড়িগ্রাম সদরের খামারি শাজাহান মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ঈদে বিক্রির জন্য ১১টি গরু মোটা তাজাকরণ করেছি। তবে বন্যার কারণে গরু নিয়ে খুব বিপদে আছি। এতদিন বিক্রি করে দিতে পারলে বেঁচে যেতাম। কাঁচা ঘাসের ব্যবস্থা করতে পারছি না। শুধু দানাদার খাবার দেয়ার জন্য প্রতিদিন আমার বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে গরুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।
এফএইচএস/এএইচ/জেআইএম