কোরবানি পশুর দাম নিয়ে ‘দোটানায়’ ব্যবসায়ীরা
ঈদুল আজহা আসতে এখনও ঢের সময় বাকি। আগে এমন সময় যেখানে অস্থায়ী হাট বসিয়ে কোরবানির পশু রাখার ব্যবস্থা করা হতো এবার সে ধরনের কোনো চিত্রই দেখা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পশুর দাম নিয়ে এখনও তারা দোটানায় রয়েছেন। আগে যেখানে আগেভাগেই দাম বাড়া-কমার বিষয়টি আন্দাজ করা যেত, এবার সেটিও করা যাচ্ছে না।
পশু ব্যবসায়ীদের ধারণা, এবার ভারত থেকে আগেভাগেই গরু আসতে পারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার কোরবানি পশুর দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে চাইবে। সেই লক্ষ্যে ভারত থেকে গরু আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
এছাড়া সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্লাবিত হচ্ছে জেলার পর জেলা। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্তরাও চাইছেন তাদের পশু বিক্রি করে দিতে। এ কারণে এবার কোরবানির পশুর দাম অন্যবারের তুলনায় কম হতে পারে।
গতকাল রোববার সরেজমিনে গাবতলীর হাটে গিয়ে সেখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
কোরবানি পশুর দাম এখন মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ থাকায় মাংসের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে যা পাঁচশ টাকা ছাড়িয়েছে। আসন্ন কোরবানি ঈদে গরু আমদানি না হলে মধ্যবিত্তের পক্ষে কোরবানি দেয়াই দায় হয়ে পড়বে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার পশুর দাম কম হবে না বেশি হবে তা নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে ভারতীয় গরু আমদানির বিষয়টি অন্যতম। এছাড়া বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে দেশি গরুর দাম পড়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের ধারণা, নির্বাচন উপলক্ষে সরকার ভারতের সঙ্গে বৈধ পন্থায় গরু আমদানির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। এতে রাজধানীর বাজারে বড় প্রভাব না পড়লেও সীমান্তবর্তী এলাকায় গরুর দাম কমে যাবে।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা। অতি বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা হচ্ছে ভারতের কয়েকটি রাজ্যেও। ওই সব অঞ্চলের মানুষ গবাদি পশু বিক্রি করতে পারলে হাফ ছেড়ে বাঁচেন। কারণ বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্য সঙ্কটসহ নানা কারণে পশু টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য এবার কোরবানিতে পশুর দাম কমে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গাবতলী পশুহাটের ব্যবসায়ী আলাদীন জাগো নিউজকে বলেন, কোরবানি ঈদে পশুর দাম কেমন যাবে তা এখন বলা মুশকিল। সরকার কোনোভাবে ভারতকে ম্যানেজ করে গরু আনতে পারে। আমাদের ধারণা আনবে। সেই চেষ্টা সরকার করছে।
তিনি আরও বলেন, যতদূর জানি ভারতের যেসব অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে গরু আসে, সেসব অঞ্চলেও প্রচুর বন্যা হচ্ছে। এজন্য খামারিরা চাচ্ছেন যেভাবেই হোক পশু বিক্রি করে দিতে। যদি এমনটি হয় তবে গরুর দামে প্রভাব পড়বে।
অপর ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, এবার পশুর দাম নিয়ে দোটানায় আছি আমরা। কী হবে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আগেভাগে গরু হাটে এনে লস খেতে চাই না। গরু আনার বিষয়ে আমরা ভেবেচিন্তে এগোচ্ছি।
পবিত্র কোরবানি ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পশুর হাট গাবতলীতে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। তবে সেটা খুবই অল্প পরিসরে। সরেজমিন দেখা গেছে, পশুর হাটের ভেতরের রাস্তা পরিষ্কার করা হচ্ছে। অপসারণ করা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় মাটি ও কাদা। এছাড়া কিছুদিন আগে পশুর হাটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোও মেরামত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে পাবলিক টয়লেটের আশেপাশে মাটি ফেলে ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে বৃষ্টির কারণে কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে।
পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার বিষয়ে ইজারাদারদের মধ্যে কোনো তাগাদা নেই। হাটের পরিসর বড়ানোরও কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।
গাবতলী পশুর হাট পরিচালনা কমিটি বলছে, প্রতি বছর যেভাবে কাজ হয় সেভাবে এবারও কাজ সম্পন্ন হবে। প্রস্তুতির কাজ সেভাবে শুরু না হলেও আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে চলবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পশুর হাট ইজাদারের পক্ষে সেখানে উপস্থিত মিজান বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে হাটের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে। হাটে ক্রেতাদের উপস্থিতি নেই। এ কারণে পাইকাররাও গরু ওঠানো শুরু করেননি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে সকল কাজ সম্পন্ন করা হবে বলেও জানান তিনি।
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, মূল হাটের বাইরে ঈদের সময় পশু রাখার জায়গাগুলোতে রাখা হয়েছে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, রিকশা। আবার কোথাও কোথাও আবর্জনার বিশাল স্তূপ লক্ষ্য করা গেছে। এখনও তৈরি হয়নি ইজারা কাউন্টার, পুলিশ-র্যা বের কন্ট্রোল রুম ও নজরদারি টাওয়ার।
গাবতলী পশুর হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. সানুয়ার হোসেন বলেন, কাজ শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের ইজারা দিতে যেন ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সেই লক্ষ্যে এ বছর আমরা ১০টি কাউন্টার তৈরি করব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও নজরদারি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি কমিটির পক্ষ থেকেও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেয়া হবে। তাদের জন্য আলাদা পোশাকেরও ব্যবস্থা করা হবে, যেন দেখলেই চেনা যায়।
হাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ঈদের তিন-চার দিন আগে শুরু হবে পশুর হাট। রাজধানীর ক্রেতাদের কোরবানির পশু কিনে রাখার জায়গা নেই বলে হাট দেরিতে শুরু হয়।
পশু না আসলেও গাবতলী হাটের কিছু ব্যবসায়ী আগে থেকেই সেখানে কিছু পশু লালনপালন করে আসছেন। কোরবানির জন্য তারা নিজেদের প্রস্তুতিও শেষ করেছেন। এখন ক্রেতার অপেক্ষায় তারা।
গাবতলী পশুহাটের ব্যবসায়ী ইকবাল জাগো নিউজকে বলেন, প্রতি বছর কোরবানি ঈদের আগে ঠিক এ সময়ে হাটে গরু, মহিষ ও উট আসতে শুরু করে। কিন্তু এবার আসতে দেরি হচ্ছে। আগে না কিনলেও ক্রেতারা হাটে এসে ঘুরে যেতেন। এবার কোনো ক্রেতাই চোখে পড়ছে না। টানা বৃষ্টির কারণে পশু রাখতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এমএ/এমএআর/পিআর